Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

যাদবপুর-কাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঘেরাও হঠাতে ডাকা হয়েছিল পুলিশ। সেই পুলিশের বিরুদ্ধে এ বার লাঠিপেটার পাশাপাশি ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠল। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী-সহ পুলিশের দুই কর্তার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা যাদবপুর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই শ্লীলতাহানির পাশাপাশি যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও করা হয়েছে। এমনকী, মাঝরাতে ক্যাম্পাস চত্বরের আলো নিভিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হয় বলেও তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশের ওই দলে পর্যাপ্ত মহিলা কর্মী ছিলেন না, বরং বেশ কিছু বহিরাগত ছিল বলে তাঁদের দাবি।

যাদবপুর থানার সামনে রাতভর ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। বুধবার সকালে তোলা ছবি।

যাদবপুর থানার সামনে রাতভর ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। বুধবার সকালে তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৮:৪০
Share: Save:

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঘেরাও হঠাতে ডাকা হয়েছিল পুলিশ। সেই পুলিশের বিরুদ্ধে এ বার লাঠিপেটার পাশাপাশি ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠল। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী-সহ পুলিশের দুই কর্তার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা যাদবপুর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই শ্লীলতাহানির পাশাপাশি যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও করা হয়েছে। এমনকী, মাঝরাতে ক্যাম্পাস চত্বরের আলো নিভিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হয় বলেও তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশের ওই দলে পর্যাপ্ত মহিলা কর্মী ছিলেন না, বরং বেশ কিছু বহিরাগত ছিল বলে তাঁদের দাবি। পৃথক ভাবে এক ছাত্রী এই ঘটনায় চার জন অজ্ঞাতপরিচয়কারীর বিরুদ্ধেও শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের তরফে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্লাস বয়কটের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।

উপাচার্যের নির্দেশে ঘেরাওমুক্ত করতে মঙ্গলবার রাত দু’টো নাগাদ পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে হঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী আহত হন। তাঁদের যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সাত জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও পাঁচ জনকে ভর্তি করতে হয় ওই হাসপাতালে। উপাচার্যকে ঘেরাও করার অপরাধে ওই রাতে পুলিশ ৩৬ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের প্রথমে যাদবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে এক জন মহিলা আন্দোলনকারীকে থানা থেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের রাতভর লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপে রাখা হয়। এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেওয়ার পর ফের তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে হাজির হন। রাতে যে ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তিনি এ দিন পৃথক ভাবে একটি এফআইআর দায়ের করেন যাদবপুর থানায়। চার জন অপরিচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তিনি শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। ঘটনার প্রতিবাদে রাত তিনটে থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত যাদবপুর থানার সামনে পথ অবরোধ করা হয়।


লালবাজার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে।—নিজস্ব চিত্র।

উপাচার্য যদিও ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশি হামলার কথা অস্বীকার করেছেন। এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ অসুস্থতার কারণে তিনি সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ঘণ্টাখানেক সেখানে থাকার পর বেরোনোর সময় উপাচার্য জানান, সুস্থ হয়ে গোটা ঘটনার কথা জানাতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর দাবি, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ওই রাতে প্রচুর বহিরাগত ছিল। পুলিশের উপর তারা হামলা চালিয়েছে। পুলিশ যখন তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে, তখন ছাত্ররা তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই রাতে তিনি খুনও হয়ে যেতে পারতেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপাচার্য। পাশাপাশি তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসের আলো নেভানো হয়নি। ছাত্ররাই ঢিল ছুঁড়ে তা ভেঙেছে।”

শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রী, প্রাক্তনী এবং শিক্ষকদের তরফে এ দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই মিছিলে অংশ নেন প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ। যাদবপুর থেকে গোলপার্ক হয়ে ফের সেই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছয়। মিছিলে হেঁটেছেন সমাজকর্মী সুজাত ভদ্র, মীরাতুন নাহার, সমীর আইচ, নাট্যকর্মী কৌশিক সেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র, নিহত শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের বাবা জগদীশ বিশ্বাস প্রমুখ। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মিছিল শেষ হয়।

এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও-এর ঘটনা ঘটেছে। কখনও তা ৫২ ঘণ্টাও ছাড়িয়েছে। কিন্তু পুলিশ ডেকে, মারধর করে, তাঁদের হঠাতে হয়নি। এ বার কী এমন ঘটল যে, সেই পদক্ষেপ করতে হল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ এ দিন সকালে বলেন, “আজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। আমি এই বিষয়ে কোনও কথা বলব না।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশের অভিমত, উপাচার্য পুলিশ না ডাকলেই ভাল করতেন। পুলিশের এক কর্তার দাবি, পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে ভেবে তাঁরাও প্রথমে উপাচাযর্কে পুলিশ না ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু, উপাচার্য ঘেরাওমুক্ত করতে তাঁদের নির্দেশ দেন বলে ওই কর্তা জানিয়েছেন।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তাই এ দিন কোনও প্রশাসনিক কর্তা-ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। তবে শিক্ষকদের একাংশ হাজির হন। তাঁদের মধ্যে দু’এক জন লালবাজারে গিয়ে ধৃত ছাত্রদের জামিনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। জুটার কয়েক জন সদস্য এ দিন কেপিসি হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE