সুইসাইড নোটে লেখা, ‘পুত্রশোকে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তাই আমরা দু’জনে এক সঙ্গে মৃত্যুবরণ করলাম।’
হুগলির চন্দননগরে নিজেদের ঘর থেকে শনিবার সকালে বিদ্যুতের তার পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে এক দম্পতির দেহ। তাঁদেরই ঘর থেকে এই সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। একমাত্র পুত্রকে অকালে হারিয়ে মানসিক অবসাদেই ওই দু’জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০০৯ সালে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁদের একমাত্র ছেলের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন চন্দননগরের গোন্দলপাড়ার কাছারিঘাটের বাসিন্দা ছিলেন সূর্য মুখোপাধ্যায় (৬৩) এবং তাঁর স্ত্রী তাপসী দেবী (৪৬)। সূর্যবাবু রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসর নেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান সৌরভ ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে থাকতেন দিল্লিতে। সেখানেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সৌরভের।
আকস্মিক ওই ঘটনায় এলোমেলো হয়ে যায় তাঁদের জীবন। তবুও হার মানেননি তাঁরা। পুত্রশোকে মানসিক অবসাদে তলিয়ে না গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন জনসেবায় তাঁদের সর্বস্ব দান করবেন। এই ভাবেই বাঁচিয়ে রাখবেন একমাত্র পুত্রের স্মৃতি। কম খরচে গরিব মানুষের কাছে শিক্ষা এবং চিকিত্সা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিজেদের বসতবাড়ি এবং সারা জীবনের সঞ্চয় দান করার সিদ্ধান্ত নেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি। বসতবাড়ি দান করার পর মাথা গোঁজার জন্য স্থানীয় একটি আবাসনে ঘর ভাড়া নেন সূর্যবাবুরা।
তাঁদের পরিবার সূত্রে খবর, মাস ছ’য়েক আগে সেখান থেকে নিজেদের পুরনো বাড়িতে ফিরে আসেন ওই দম্পতি। সেখান থেকেই শনিবার সকালে উদ্ধার হয় তাঁদের দেহ। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে ঘরের দরজা খোলা থাকতে দেখেন পরিচারিকা। ঘরে ঢুকে তিনি বিদ্যুতের তার পেঁচানো অবস্থায় দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই খবর দেন পুলিশে। ওই দু’জনকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর
২০১৩-র ২৭ জুন আনন্দবাজার পত্রিকায়
প্রকাশিত খবর পড়তে ক্লিক করুন।