এক মাসও এখনও পেরোয়নি। বিপুল জনাদেশ নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সরকার গড়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)। ৭০ আসনের বিধানসভার ৬৭টি-ই তাদের দখলে। অথচ এরই মধ্যে দলে ভাঙনের চিহ্নগুলি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে একটি বেসরকারি বৈদ্যুতিনমাধ্যমে দেওয়া আপ নেতা প্রশান্ত ভূষণের সাক্ষাৎকারেও তেমন ইঙ্গিত মিলেছে। দু’জনের মধ্যে বেশ কয়েক দিন কোনও বার্তালাপ হয়নি। তার পরে বিস্ফোরক এই সাক্ষাৎকার জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে।
যে আদর্শ, নীতি এবং স্বচ্ছতার নির্ভর করে আপ-এর জন্ম, দল সেখান থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে বলে প্রশান্তের মত। এবং মূল সঙ্কট সেখানেই। অভিযোগের আঙুল তিনি সরাসরি অরবিন্দ কেজরীবালের দিকেই তুলেছেন। এর প্রেক্ষিতে নাম না করে অরবিন্দ টুইটারে লিখেছেন, দলে যা চলছে তাতে তিনি গভীর ভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত। দিল্লির মানুষ আমাদের হাতে যে দায়িত্ব সঁপেছেন, তার সঙ্গে এটা বিশ্বাসঘাতকতা। এর পাশাপাশি তিনি লেখেন, এই জঘন্য লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করতে চাই না। বরং সরকার চালানোতে আরও মনোনিবেশ করতে চাই।
এ দিনের সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত জানান, দলের মূল আদর্শ ছিল স্বচ্ছতা। অথচ, নির্বাচনী খরচের কোনও হিসেব প্রকাশ্যে আনা হয়নি। এমনকী, যে সমস্ত কোম্পানি দলকে চাঁদা দিয়েছে, তাদের সম্পর্কেও ভাল করে খোঁজখবর নেওয়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি জানান, জন্মলগ্ন থেকে আপ কোনও একটি মুখকে সামনে রেখে চলতে চায়নি। এই দল লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল। অথচ ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দলের মুখ হয়ে উঠেছেন এক জন। তিনি অরবিন্দ কেজরীবাল। প্রশান্ত যদিও জানান, অরবিন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু গুণ রয়েছে। তিনি ভাল নেতাও বটে। কিন্তু এর পাশাপাশি তাঁর কিছু দুর্বলতাও আছে বলে মনে করেন প্রশান্ত।
কী সেই দুর্বলতা?
প্রশান্ত জানিয়েছেন, অরবিন্দ সর্বদা চান যে কোনও বিষয়ে দলে তাঁর সিদ্ধান্তই বহাল থাকুক। তাঁর সংযোজন, কিন্তু সব সময় তো অরবিন্দের সিদ্ধান্ত ঠিক নাও হতে পারে! এবং তিনি যে ঠিক নন, সেই কথাটা তাঁর সামনে বলার লোকের প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেন প্রশান্ত। তাঁর মতে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আপ-কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এই দলের আদর্শ অন্তত তেমনটা ছিল না। এখানে হাইকম্যান্ড প্রথা নেই। থাকার কথাও নয়। অথচ, ইদানীং সেই পথেই হাঁটছে দল।
ক্ষোভ রয়েছে বলেই কি তাঁকে দিল্লির প্রচারে দেখা যায়নি? জবাবে প্রশান্ত জানান, সেই সময় তিনি আদালতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, দলের টিকিট দেওয়ার পদ্ধতিকে মেনে নিতে পারেননি মন থেকে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিতে বাছা হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কেজরীবালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়েছিল। অরবিন্দ তাঁকে জানিয়েছিলেন, ভোটের রাজনীতিতে একটু আধটু আপোস করতে হয়। সেই আপোসেই প্রশান্তের আপত্তি ছিল।
তা হলে কি তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন?
সে সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন। বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দলটি দুর্নীতিগ্রস্ত। গত দশ বছর ধরে ওই দলের বিরুদ্ধে এ কথা বলে আসছি।”
তবে এই মুহূর্তে আপ ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন ওই নেতা।