মঞ্চে অমিত শাহ। ছবি: দেবাশিস রায়।
রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পতনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পতনের সেই পথে তৃণমূলকে আরও এগিয়ে দিতে আগামী বছর কলকাতা পুরসভায় বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনার ডাক দিয়েছেন তিনি। দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর সাফ ঘোষণা, তৃণমূলকে শিকড় শুদ্ধ উৎখাত করে ফেলতে হবে!
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি-র ‘উত্থান দিবসে’র সভায় সারদা থেকে খাগড়াগড়, নানা ঘটনাকে হাতিয়ার করে প্রত্যাশিত ভাবেই মমতাকে বিঁধেছেন অমিত। নরেন্দ্র মোদীর কায়দায় বারংবার ‘দিদি, দিদি’ বলে সম্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে সংসদে যে দলের সাংসদেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের নেত্রী কেন সারদা-কাণ্ডের ‘কালো’ মুখদের আড়াল করছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তেমনই অভিযোগ করেছেন, সারদা-কাণ্ডের টাকাই খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটানো জঙ্গি গোষ্ঠীদের হাতে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অমিতের মন্তব্য, সারদায় সিবিআই তদন্ত এবং খাগড়াগড়ে এনআইএ তদন্ত এক সময় একই জায়গায় গিয়ে মিলবে!
দুর্নীতি, অপশাসন এবং সন্ত্রাসবাদে মদতের সূত্র ধরেই তৃণমূলের শিকড় উপড়ে ফেলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিশ্বস্ত, কেন্দ্রীয় শাসক দলের সর্বোচ্চ সেনাপতি। দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য তাঁর নির্দেশ, ২০১৫ সালের পুরভোট থেকেই রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ ঘটানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অমিতের কথায়, “আগে গোটা দেশের পরিবর্তনে কলকাতা পথ দেখাত। সামনে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। কলকাতা পুরসভায় বিজেপি-কে এনে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে পথ দেখাক কলকাতা! সেখান থেকেই শুরু হোক তৃণমূলের পতন।” মোদী যেমন কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন লোকসভা ভোটের আগে, অমিতও তেমন এ দিন তৃণমূলমুক্ত বাংলা গড়ার কথা বলেছেন।
কয়েক মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৭% ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান ঘটছে তাদের। তৃণমূল-বিরোধিতার সুর চড়িয়ে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসর এখন অনেকটাই গেরুয়া বাহিনীর দখলে। রাজ্যে দলের সম্ভাবনা বুঝতে পেরেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বিশেষ নজর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দিকে। কলকাতায় সভা করতে এসে অমিত এ দিন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় ক্ষমতা দখলকে ঠিক কতটা গুরুত্ব তাঁরা দিচ্ছেন। বিজেপি সভাপতি বলেছেন, লোকসভা ভোটে জিতে দেশে সরকার গড়ার পরে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার মতো রাজ্যে জয় পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সেই সব কোনও জয়ই জয় নয়! অমিতের কথায়, “২০১৪-র লোকসভা ভোট থেকে মোদীজির বিজয়রথ যাত্রা শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে বিজেপি-র সরকার না গড়া পর্যন্ত সেই বিজয়যাত্রা সম্পূর্ণ হবে না!”
সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে তাল রেখে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ডাক দিয়েছেন, মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের মতো তাঁরা বাংলায় সাফাই অভিযান শুরু করবেন। যার লক্ষ্য হবে তৃণমূলকে সাফ করা! রাহুলবাবুর আরও মন্তব্য, “তৃণমূল আগে বলেছিল, উল্টে দিন, পাল্টে দিন। দু’টো এক সঙ্গে হয় না। তৃণমূল ২০১১ সালে সিপিএমকে উল্টে দিয়েছিল। পরের বার আমরা তৃণমূলকে পাল্টে দেব!” দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আবার একটি বলিউডি ছবির প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সারদা তদন্তে সিবিআই যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে ২০১৪-য় ‘ভাগ মদন ভাগ’ চলছে। সেটাই ২০১৫-য় ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ এবং ২০১৬-য় ‘ভাগ মমতা ভাগ’ হয়ে দাঁড়াবে!
ধর্মতলার এ দিনের সমাবেশের অনুমতি দিতে চায়নি পুরসভা এবং প্রশাসন। আদালতে গিয়েছিল বিজেপি। তার পরেও টানাপড়েন চলেছিল সভার ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত। সমাবেশে শেষ পর্যন্ত যা ভিড় হয়েছে, তাতে বিজেপি নেতৃত্ব উৎসাহিত। তবে তাঁদের যে আরও ভিড়ের প্রত্যাশা ছিল, একান্তে তা মানছেন দলের নেতাদের একাংশ। যদিও একই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, সভায় জনসমাগম আটকানোর জন্য কোথাও অবরোধ হয়েছে, কোথাও বাস মালিকদের ভয় দেখানো হয়েছে। আবার কোথাও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy