Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াদের আন্দোলনে অবশেষে নমনীয় বিশ্বভারতী

লাগাতার আন্দোলনের চাপে অবশেষে পিছু হটল বিশ্বভারতী! রবিবার বিকেলে আন্দোলনকারী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য স্বপন দত্ত। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের পদত্যাগ-সহ দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আলোচনায় ঠিক হয়েছে, এত দিন ধরে বিশ্বভারতীর স্কুল স্তরের পড়ুয়ারা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হত, সেই ব্যবস্থাই বহাল থাকবে।” স্বপনবাবুর দাবি, বিশ্বভারতীর পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:১৭
Share: Save:

লাগাতার আন্দোলনের চাপে অবশেষে পিছু হটল বিশ্বভারতী!

রবিবার বিকেলে আন্দোলনকারী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য স্বপন দত্ত। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের পদত্যাগ-সহ দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আলোচনায় ঠিক হয়েছে, এত দিন ধরে বিশ্বভারতীর স্কুল স্তরের পড়ুয়ারা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হত, সেই ব্যবস্থাই বহাল থাকবে।” স্বপনবাবুর দাবি, বিশ্বভারতীর পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাতে বাংলোর বাইরে এসে ছাত্রছাত্রীদের থেকে মাইক নিয়ে সুশান্তবাবুও বলেন, “পাঠভবন এবং শিক্ষাসত্রের পড়ুয়াদের স্নাতক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে আগের ব্যবস্থাই বলবত্‌ থাকবে। স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রেও যা নিয়ম ছিল, তা-ই থাকবে। তবে, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি নেওয়া হবে।” এই ঘোষণা শেষ হতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা।

এত দিন ধরে পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় কার্যত অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল বিশ্বভারতীতে। প্রশ্ন উঠছে, কর্তৃপক্ষ যদি শেষমেশ এই সিদ্ধান্তই নিলেন, তবে তা আগেই কেন নেওয়া হল না। অবশ্য তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। এত দিন পাঠভবন এবং শিক্ষাসত্র থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া নম্বরের ভিত্তিতে বিশ্বভারতীর স্নাতক স্তরে সরাসরি ভর্তি হতে পারত। বস্তুত, বিশ্বভারতীতে প্রথম থেকেই এই প্রথা চালু রয়েছে। মেধাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যুক্তিতে প্রচলিত ওই ব্যবস্থাকেই তুলে দিতে নোটিস জারি করেছিলেন বিশ্বভারতীর বর্তমান কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদেই গত ২৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক, কর্মী, আধিকারিক এবং অভিভাবকদের একাংশ। ক্লাস বয়কটের পাশাপাশি চলছিল মিছিল, বিক্ষোভ, অবস্থান। শুক্রবার দুপুর থেকে উপাচার্যের বাংলো ‘পূর্বিতা’র সামনে অবস্থানে বসে পড়েন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। মাইকে রবীন্দ্রনাথের গান এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানে উচ্চকিত ছিল আবাসন চত্বর। অচলাবস্থা কাটাতে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই কর্তৃপক্ষ আলোচনার প্রস্তাব দিতে শুরু করেন। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ফোন করেন স্বপনবাবু। ছাত্ররা দাবি করেন, কেবল তাঁদের সঙ্গে নয়, আন্দোলনের ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র সঙ্গে কথা বলতে হবে। ৫০ ঘণ্টা ধরে অবস্থান চলার পরে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ফোন করে বিশ্বভারতীর প্রো-ভোস্ট সবুজকলি সেন বিকেলে রতনকুঠিতে আলোচনা হবে বলে জানান। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের এই মর্মে চিঠি পাঠান সহ-উপাচার্য। এর ঘণ্টাখানেক আগে অবশ্য আন্দোলনকারীদের বাধায় উপাচার্যের আবাসনের সামনে থেকে ফিরে যেতে হয় রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা তপতী মুখোপাধ্যায়কে। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কী কারণে এখানে এসেছেন। তপতীদেবী তাঁদের জানান, উপাচার্যের স্ত্রী অসুস্থ বলে খবর পেয়ে দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু, আন্দোলনকারীরা তপতীদেবীকে ভেতরে যেতে দেননি বলে অভিযোগ। পড়ুয়াদের অবশ্য দাবি, “ওঁর অসুস্থতার খবর শুনে আমরাই বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করি। হাসপাতালের সিএমও শশাঙ্কশেখর দেবনাথকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে অনুরোধ করি।”

এ দিন বিকেল ৫টার পরে রতনকুঠিতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বিশ্বভারতী। সহ-উপাচার্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আলোচনায় যোগ দেন প্রো-ভোস্ট সুবজকলি সেন, তপতী মুখোপাধ্যায় এবং বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shantiniketan visva bharati vc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE