সাক্ষী থাকুক পঁচিশে বৈশাখ। রবিবার, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। ছবি: সুমন বল্লভ
ভোটের দুন্দুভি ধ্বনি থেমেছে। প্রচারের ঢক্কা নিনাদও। রাজনৈতিক কলতান এখন শান্ত, অতএব বহুদিন পর রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইতিউতি আনাগোনা টের পাওয়া গেল। রবীন্দ্রজয়ন্তী যেহেতু, সেহেতু আকাশভরা সূর্য-তারার উদাত্ত অস্তিত্বের টের পাওয়া গেল বেশ কয়েকটা দিন পর।
পলতা থেকে পাকুড়, সবখানে আজ ছিল ঠাকুর পুজো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। পুজো তো করলাম নিষ্ঠাভরে, আত্মস্থ করলাম কতটা? সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ক্রমাগত সংঘাতরত হিংসাদীর্ণ এই বঙ্গীয় সমাজে রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক থাকতে পারতেন অন্যভাবে। ধূপ-দীপ-মালা ছেড়ে আমরা যদি তাঁর ভাবের ঘরে প্রবেশ করতে পারতাম রবীন্দ্রনাথ অধিকতর খুশি হতেন, এই নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকে না।
রবীন্দ্রনাথ কি আমাদের ভাবনায় নেই? ভয় শূন্য চিত্তে কি আমরা চলি না? চলি তখনই, যখন রাজনৈতিক দাদার আশ্রয় থাকে। এ কথাও ঠিক, শির আমাদের উচ্চ হয় তখনই, যখন তা রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট হয়। মুক্ত জ্ঞানের পরিবর্তে গণ্ডিবদ্ধ রাজনীতিক-নির্দিষ্ট জ্ঞানের পরিধির মধ্যেই বাস করতেই স্বচ্ছন্দ আমরা। নৈমিত্তিক দীর্ণতায় ক্লিষ্ট আমি হরিপদ কেরানি, এখনও স্বপ্ন দেখি আকবর বাদশা হওয়ার। হায়, তাও রাজনৈতিক দাদারই হাত ধরে।
অথচ রবীন্দ্র প্রেমে কোথাও খাদ ছিল না। পল্লীর পর্দা-ওড়া সন্ধ্যায় হারমোনিয়ামে রবীন্দ্র রেওয়াজে খামতি ছিল না। বহিরঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে নিলাম যতটা, অন্তরঙ্গে নিতে পেরেছি তো? সম্প্রতি অনেক শিরদাঁড়াকে সোজা হতে দেখে আশার সঞ্চার জেগেছে। অন্যায় সহনকারীও ঘৃণার যোগ্য এ কথা কি বুঝতে শিখলাম আমরা?
ভোট যাবে, ভোট আসবে। এ দল যাবে, ও দল আসবে। এ প্রজন্ম যাবে, ও প্রজন্ম আসবে। থাকবেন শুধু রবীন্দ্রনাথ। আমরা যেন তাঁকে সম্মান জানানোর যোগ্য হই, এই প্রার্থনাই থাকল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy