কংগ্রেস ভগবানগোলা উপনির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে সিপিএমের একাংশের। এমন দাবিও উঠেছে যে, অবিলম্বে ভগবানগোলা আসনে বাম প্রার্থী ঘোষণা করা হোক।
ইতিমধ্যেই দলের জেলা কমিটির এক প্রবীণ সদস্য সরাসরি সমাজমাধ্যমে দাবি তুলেছেন, এখনই দলকে ভগবানগোলায় প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছেন দলের বহু কর্মী, সমর্থক। এমনকি দলের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা কর্মীদের ওই ক্ষোভকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘জোট ধর্ম অনুসারে ভগবানগোলা বিধানসভা আসনটি সিপিএমেরই প্রাপ্য। তবে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজ্য নেতারাই নেবেন।” কিছু মহলে এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে যে, এই দ্বন্দ্বের ফলে বাম-কংগ্রেস জোট কি ভেঙে যেতে পারে মুর্শিদাবাদে? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “ভাঙলে ভাঙবে। যা হয়েছে উপর থেকে হয়েছে। স্থানীয় ভাবে কোথায় কে কী বলছে আমি জানি না।”
রবিবার সন্ধেয় ভগবানগোলা উপনির্বাচনে হঠাৎই কংগ্রেস আঞ্জু বেগমকে প্রার্থী ঘোষণা করে। তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ও এবিটিএ-র বিদায়ী জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে কড়া ভাষায় একটি পোস্ট করেন। সোমবার আর একটি পোস্টে দাবি তুলেছেন, “অবিলম্বে ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে।”
দুলালবাবু সোমবার বলেন, “যা বলেছি সত্যি কথা বলেছি। দলকে বাঁচাতে বলেছি। এটা শুধু আমার কথা নয়, কর্মীদের মনের কথা। আমাদের হারাবার কী রয়েছে? নেতারা এটা বুঝলে ভাল করবেন।” তবে দলের এক জেলা কমিটির প্রবীণ সদস্য সমাজ মাধ্যমে এই কথা বলার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও দলের কোনও নেতা তাঁকে ফোন করেননি বলে জানান তিনি।
দুলালবাবুর কথায়, ‘‘কার স্বার্থ রক্ষা করতে কংগ্রেস ভগবানগোলাতে প্রার্থী ঘোষণা করল? যে আসন কোনও ভাবেই কংগ্রেসের প্রাপ্য নয়, সেই আসনে কেন কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করল? কংগ্রেস কি আদৌ মুর্শিদাবাদে ঐক্য চায়?’’
দুলালবাবু বলেন, ‘‘সাগরদিঘি বিধানসভায় আমরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেছি। কংগ্রেস জেতার পর কী হয়েছে তা সবাই জানে। তাতে ওদের কিছু না হলেও আমাদেরকে জবাব দিতে হচ্ছে। জঙ্গিপুর ও বহরমপুরে কংগ্রেসকে জেতাবার জন্য সিপিএম এবং মুর্শিদাবাদে অনুরূপ ভাবে কংগ্রেস তার ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু ভগবানগোলা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে আমাদের প্রার্থী দিতে হবে। আজকেই সিপিএমকে প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে।কংগ্রেসকে ওই আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে। কংগ্রেসের কাছে আত্মসমর্পণ করে আমরা ভোট করব না।”
তবে সোমবার তিন লোকসভা আসনের সর্বত্রই প্রার্থী প্রচারে দেখা গিয়েছে দুই দলের কর্মীদেরই। নবগ্রামে সিপিএম অফিসেই তাঁদের ডাকা কর্মিসভায় এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী মুর্তজা হোসেন সহ স্থানীয় নেতারা যান।
এর মধ্যেই ভগবানগোলা ১ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘ভগবানগোলার একটি সামান্য উপনির্বাচন নিয়ে জোট ভেঙে যাক, তা নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীরা কেউ চান না। মহম্মদ সেলিম রাজ্য সম্পাদক, অধীর চৌধুরী কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি। এই দু’জনের জয়ের দিকে চেয়ে আছে সারা রাজ্য। ক্ষুদ্র স্বার্থ এখানে বিবেচ্য নয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)