Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Arabul Islam

অস্তাচলে আরাবুল ইসলাম? ভাঙড়ে দলের আহ্বায়ক পদ থেকে তাজা নেতাকে সরিয়ে দিলেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড় বিধানসভার আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছিল আরাবুলকে। সেই পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়েছে। ফলে আরাবুল সাংগঠনিক দায়িত্বে নেই। প্রশ্ন উঠছে, ‘আরাবুল জমানা’ কি শেষ?

Ahead of the Lok Sabha polls, the TMC removed jailed Arabul Islam from all posts in the party

আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৫
Share: Save:

একটা সময়ে ভাঙড়ের রাজনীতিতে তাঁর ওপরেই নির্ভর করত তৃণমূল। সেই আরাবুল ইসলামকেই দলের সব সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দিলেন শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব। বুধবার তৃণমূলের তরফেই এ কথা জানানো হয়েছে হয়েছে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড় বিধানসভার ‘আহ্বায়ক’ পদ দেওয়া হয়েছিল আরাবুলকে। সেই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে আরাবুল দলের আর কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বে নেই। এখন তিনি শুধু তৃণমূলের একজন কর্মী। যে সূত্রে ভাঙড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তৃণমূলে ‘আরাবুল জমানা’ কি শেষ?

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিস আরাবুলকে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগে গ্রেফতার করে। তার পরে আরও একাধিক মামলা দায়ের হয় আরাবুলের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি। সেই সময়ে দলের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় খানিকটা ‘বিস্মিত’ আরাবুল-অনুগামীরা। তবে গত কয়েক বছরে ভাঙড়ের রাজনীতিতে ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েছিলেন আরাবুল। তাই তিনি সাংগঠনিক পদ হারানোর পরেও ভাঙড়ে সে ভাবে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ লক্ষ করা যায়নি।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

আরাবুলকে দলের সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগ তুলে স্ত্রীর মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আরাবুল। তাঁর স্ত্রী জাহানারা বিবি অভিযোগ করেছেন, স্বামীর বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে বলে তাঁরা অবগত। এর বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা রয়েছে কি না, তা জানতে চাইলেও কলকাতা পুলিশ তাঁদের সেই তথ্য দিচ্ছে না। শাসকদলের নেতার স্ত্রীর এমন অভিযোগে ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছে কলকাতা পুলিশ। সোমবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে ওই মামলার শুনানিতে আরাবুলের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেন, পুলিশি হেফাজতে রেখেই একের পর এক মামলায় যুক্ত করা হচ্ছে আরাবুলকে। দু’দিন আগেই নতুন একটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁকে। ওই অভিযোগের জবাবে রাজ্যের আইনজীবী দাবি করেন, মোট ক’টি মামলা রয়েছে, তা জানাতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। আগামী সোমবারের মধ্যে রাজ্যের কাছে ওই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করে হাইকোর্ট। তার পরেই বুধবার আরাবুলকে দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভাঙড় ছিল বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত। সেই ভোটে তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসু ভাঙড় থেকে ৫২ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড় আসনে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন আরাবুল। সেই ভোটে বামফ্রন্টের ২৩৫ আসন জয়ের মধ্যেও ভাঙড়ে আরাবুলের জয় তৃণমূলের কাছে ছিল বড় প্রাপ্তি। সেই থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে আসেন আরাবুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আরাবুলের গোষ্ঠীর সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। তৎকালীন বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার ভূমি ও ভূমিরাজস্ব মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার গোষ্ঠীর সঙ্গে আরাবুলের গোষ্ঠীর বিবাদ ছিল তখন ভাঙড়ের রাজনীতির নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমানে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শওকত মোল্লাও আরাবুলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রেজ্জাকের পাশে ছিলেন। তখন থেকেই ভাঙড়ে ‘আরাবুল জমানা’র সূত্রপাত। অধুনা জেলবন্দি নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরাবুলকে ‘ভাঙড়ের তাজা নেতা’ বলে আখ্যা দেওয়ার পরে দলের অন্দরে ভাঙড়ের বিধায়কের ‘প্রতাপ’ আরও বৃদ্ধি পায়।

কিন্তু সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের দলের মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন আরাবুল। সেই ঘটনার জেরে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়জয়কার হয়ে রাজ্যে পালাবদল হলেও ভাঙড়ে পরাজিত হন আরাবুল। অধুনাপ্রয়াত তৃণমূল নেতা নন্নু হোসেন ভাঙড়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে হারিয়ে দেন আরাবুলকে।

এর পরে ২০১৫ সালে দলবিরোধী কার্যকলাপের জেরে ছ’বছরের জন্য তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হয় ‘তাজা নেতা’কে। যদিও মাস আটেকের মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোড়া ধাক্কা খান আরাবুল। যে রেজ্জাকের সঙ্গে লড়াই করে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান, ভাঙড় বিধানসভায় তাঁকেই প্রার্থী করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ বুজে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আরাবুলের উপায় ছিল না। একই সঙ্গে দলের অন্দরে তাঁর ‘প্রবল প্রতিপক্ষ’ শওকতকে ক্যানিং পূর্ব আসন থেকে টিকিট দেয় তৃণমূল। রেজ্জাক-শওকত দু’জনেই জেতেন। আর ভাঙড়ের রাজনীতিতে ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকেন আরাবুল। পঞ্চায়েত ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হলেও তাঁর আর আগের মতো দাপট ছিল না। কারণ, তত দিনে ভাঙড় তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব চলে গিয়েছে শওকতের হাতে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে চিকিৎসক রেজাউল করিমকে ভাঙড়ে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। কিন্তু সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি সেখানে জিতে যান। বিজেপি ছাড়া সারা রাজ্যে ওই একটি আসনেই জিতেছিল বিরোধী পক্ষ। ওই হারে আরাবুলের বিরুদ্ধেই ‘অন্তর্ঘাতের’ অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূলের একাংশ। পরে পঞ্চায়েত ভোটে তাঁকে ‘আহ্বায়ক’ পদ দেওয়া হলেও চাবিকাঠি ছিল শওকতের হাতেই। এ বার সেই পদ-সহ দলের সব পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। যা জেনে ভাঙড়ের আরাবুল-অনুগামীরা বলছেন, ‘‘আরাবুল’দার পাশে দাঁড়াতে পারেন, এমন কোনও নেতা বোধ হয় আর তৃণমূলে নেই।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Arabul Islam Lok Sabha Election 2024 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE