E-Paper

কুর্সি দখলের আগাম প্রস্তুতিতে বরাত বাড়ছে নিষিদ্ধ বাজির

ব্যবসায়ীদের দাবি, ফলাফল তাদের পক্ষে যাবে ধরে নিয়ে বিজয়োৎসবের জন্য বাজির বরাত দিয়ে রেখেছে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৮:০৪
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

যে ছাঁকনিতে ফেলে আসল আর নকল আলাদা করা হবে, সেই ছাঁকনিই বিকল! কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নিষিদ্ধ, তার পার্থক্য করার জন্য তৈরি ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-র কিউআর কোড-এর অবস্থা এমনই। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে দেশের কোথাওই সবুজ বাজির কিউআর কোড তৈরির কাজ চলছে না। কোনও বাজির বাক্সের গায়েই নতুন করে দেওয়া হচ্ছে না নিরি-র হলোগ্রাম-সহ কিউআর কোড। ফলে বোঝার উপায়ই নেই, কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ!

অভিযোগ, এই সুযোগে দেশের নানা প্রান্তের মতো এই রাজ্যেও দেদার চলছে নিষিদ্ধ বাজি তৈরি। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই এই সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাজির কেনাবেচা বাড়ে। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছে ভোট। ব্যবসায়ীদের দাবি, ফলাফল তাদের পক্ষে যাবে ধরে নিয়ে বিজয়োৎসবের জন্য বাজির বরাত দিয়ে রেখেছে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। এই কারণে এখন নুঙ্গি, মহেশতলা, বজবজ, বারাসত-নারায়ণপুরের মতো ‘বাজি মহল্লা’য় শ্রমিকদের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। কিন্তু, যে সব বাজি তৈরি হচ্ছে, সবই তো বেআইনি? উত্তরে এক বাজি ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘কিউআর কোডই যখন নেই, তখন কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, ধরা হবে কী করে? এটাই তো যত পারা যায়, ব্যবসা করে নেওয়ার সুযোগ!’’

নিরি-র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মূলত তিন শ্রেণির সবুজ বাজি হয়— সোয়াস বা ‘সেফ ওয়াটার রিলিজার’, স্টার বা ‘সেফ থারমাইট ক্র্যাকার’ এবং সাফাল বা ‘সেফ মিনিম্যাল অ্যালুমিনিয়াম’। নিরি-র নির্দেশ মতো উপাদান ব্যবহার করে এই তিন গোত্রের সবুজ বাজি বানানোর পরে পরীক্ষার জন্য সেগুলি নিরি-র দফতরে পাঠাতে হয়। সেখানে নানা পরীক্ষায় পাশ করে বিক্রির ছাড়পত্র পেলে বাক্সের উপরে সিআইএসআর-নিরি লেখা হলোগ্রাম এবং কিউআর কোড বসিয়ে দেওয়া হয়। বাজি বিশেষে কিউআর কোড হয় আলাদা আলাদা। মোবাইলে ‘সিএসআইআর-নিরি গ্রিন কিউআর কোড’ অ্যাপ ডাউনলোড করে কোডটি স্ক্যান করলেই বেরিয়ে আসে নিরি-র ছাড়পত্র এবং কী কী উপাদান কোন মাত্রায় দিয়ে বাজি তৈরি হয়েছে, সেই তালিকা। সঙ্গে থাকে প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরি-র কলকাতা শাখার এক বিজ্ঞানী বললেন, ‘‘একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল। বাজি এবং বাক্স বিশেষে ওই কোডগুলি তারাই তৈরি করে দিত। কিন্তু গত কয়েক মাসে একাধিক অভিযোগ আসায় ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। নতুন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’’ কিন্তু অভিযোগ, তারই মধ্যে চলছে বেআইনি বাজি তৈরি এবং বিক্রি। সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই মন্তব্য করতে চাননি। সেখানকার এক কর্তা শুধু দাবি করেন, ‘‘উন্নত অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলিতে কিউআর কোড স্ক্যান করা যাচ্ছিল না এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে কিছু গন্ডগোল হচ্ছিল। সেই কারণে নিরি-র তরফে আর কাজ করতে চাওয়া হয়নি। তবে প্রতি বছর যে ভাবে অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, সেই হারে কিউআর কোড স্ক্যানার উন্নত করার চেষ্টা নিরি-র তরফে দেখা যায়নি।’’

প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাসে ‘মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস’ (এমএসএমই) মন্ত্রকের অধীনে সবুজ বাজি তৈরি, মজুত এবং বিক্রি সংক্রান্ত একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টোরেজ অ্যান্ড সেলিং স্কিম’। পুজোর সময়ে ওই পথে বাজি তৈরির উদ্যোগ কিছুটা গতি পায়। কিন্তু তখনও ক্রেতাদের তরফে অভিযোগ আসতে থাকে বাজির বাক্সের গায়ে লাগানো কিউআর কোড নিয়ে। সেগুলি স্ক্যান করাই হয়ে ওঠে দুষ্কর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Firecrackers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy