Advertisement
E-Paper

গৃহস্বামী স্নান করছেন, হঠাৎ পিঠে সাবান ঘষে দিলেন ধুতি-পাঞ্জাবি দাদা

নির্বাচনের হাওয়া ওঠায় আজকাল কিছু আজব এবং উদ্ভট ঘটনা ঘটছে চারিপাশে। যার কোনও উপযুক্ত ব্যাখ্যা আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

সব্যসাচী চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০০
Bengali Actor Sabyasachi Chowdhury writes on the upcoming Lok Sabha Election 2024

মন্দিরের সামনের ধাপে গ্যাঁট হয়ে বসে, ডান হাঁটুতে হাত বোলাতে বোলাতে ছিলিমে এক মোক্ষম টান দিলেন বাবাঠাকুর। তার পর বললেন, শোন রে ব্যাটা। নির্বাচন বড় সহজ বিষয়। তবে মনুষ্যজাতির কাজই হল সরলকে গরল করে দেখা। অনেকের মধ্যে এক জনকে বেছে নেওয়াকে নির্বাচন করা বলে। সে কাজ অতীব সহজ। কিন্তু এক জনকে আগে থেকেই নির্বাচিত করে রাখার পরেও যখন ফের তাকেই ভিড়ের মধ্যে থেকে মিছিমিছি বাছতে হয়, সে বড় জটিল কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

আমি হলাম গে জন্মক্ষ্যাপা। মুখ্যুসুখ্যু, বোকাসোকা মানুষ। জটিলতার ধার ধারি না। এই অবস্থায় বাকি মুখ্যুরা যা করে থাকে, আমিও তাই করেছি। কলিযুগের কল্কি অবতারের চাপে পড়ে একখানা চকচকে স্মার্টফোন ট্যাঁকস্থ করলাম। ব্যস, বুদ্ধি খুলে গেল! তবে কোনও এক অজ্ঞাত মহাপুরুষ একদা বলে গিয়েছিলেন, অশিক্ষিতের হাতে বিনি পয়সার ইন্টারনেট আর অফুরন্ত অলস সময়, এই দুইয়ের মিশ্রণ হল মানবতার মোক্ষম মারণাস্ত্র। তাই যথা সাবধানে মূলত মুখপুস্তক ব্যবহার করে কিঞ্চিৎ তথ্যসংগ্রহের পরে নির্বাচন সম্পর্কে একটা ভাসা ভাসা ধারণা জন্মেছে মনে। সেই আখ্যানই শোনাই তবে।

চাদ্দিক দেখেশুনে যত দূর বুঝলাম, এই পোড়া দেশে রাজা-বাদশাদের দিন অনেক কাল আগেই ফুরিয়েছে। এখন ক্ষমতার সম্পূর্ণ দখল মন্ত্রীদের হাতে। তাঁদের অধিবেশনের জন্য আবার দু’খান কক্ষ রয়েছে। নিম্নকক্ষটি লোকসভা। উচ্চকক্ষটি দেবসভা। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দেবগণ সেখানে বিরাজ করেন বলেই এই অলঙ্কৃত নামকরণ। কোনও নির্দিষ্ট নেতার নামে কটাক্ষ করে নয়। তবে তাঁরা যে কক্ষেই অধিবেশন করুন না কেন, সাধারণ মানুষ তাঁদের নেতা বা মন্ত্রী বলেই আখ্যা দিয়ে থাকেন। কলুর বলদেরা অবশ্য নেতাগণকে নিজেদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। সাধারণত ‘দাদা’ বা ‘দিদি’ বলতে মুহুর্মুহু জ্ঞান হারায় এবং তাঁদের কথাতেই দেশের কাজে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতে, থুড়ি নিয়োজিত করতে কোমরে কষে গামছা বাঁধে।

অন্য দিকে, প্রশাসন নামের এক জগদ্দল মহাপরাক্রমশালী প্রাণী নাকি কুণ্ডলিনী শক্তির মতোই কুণ্ডলী পাকিয়ে মূলাধারে শুয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের আগে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে তুড়ি মেরে একটা হাই তুলে যাত্রা শুরু করে সহস্রারের পথে। যত দূর বুঝেছি, যাঁরা গাড়ি, ঘোড়া বা নিদেনপক্ষে একখানা দ্বিচক্রযান চালান, তাঁরাই নাকি সকলের আগে টের পান, নির্বাচন আসন্ন। মাস কয়েক আগে থেকেই আলকাতরার চামড়া গুটিয়ে রাস্তাগুলোর হাড় জিরজিরে চেহারা বার করে তাতে লম্বা লম্বা খাল কাটা হয়। কুমির অবশ্য আসে নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরেই।

নির্বাচন আরও এগিয়ে এসেছে বোঝা যায়, যখন নেতাদিগকে দেখা যায় নীলবাতি লাগানো সাদা শুভগাড়ি করে শহর থেকে গ্রামগুলির উদ্দেশে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়তে। ইংরেজিতে অবশ্য তাদের ‘এসইউভি’ না কী যেন একটা বলে! গ্রামে পৌঁছতে শুভগাড়ি লাগলেও নির্বাচনের প্রচার কিন্তু করতে হয় নিরলঙ্কার, খোলস ছাড়ানো, পতাকা জড়ানো জিপগাড়ি, টেম্পো বা টোটোর পিঠে চেপে।

তবে এই যে একেবারে দুয়ার টপকে গেরস্তের উঠোনে জনদরদি নেতারা পৌঁছে যাচ্ছেন, এতে গ্রামবাসীর বিস্তর সুবিধাও হচ্ছে বইকি! যেমন এক গৃহস্বামী সবে কলতলায় স্নান করতে শুরু করেছিলেন। হঠাৎ সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক দাদা এসে তাঁর পিঠে সাবান ঘষে দিয়ে গেলেন। ও দিকে আবার এক বধূ সবে খেয়ে উঠেছেন, কোত্থেকে এক শুদ্ধ বসনধারী নারী এক গণ্ডুষ জল এনে তাঁর মুখ আঁচিয়ে দিয়ে গেলেন।

নির্বাচনের আগে সাধারণত নেতাগণ যে যে বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন, তার মধ্যে কিছু জিনিস দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য বস্তু বইকি! আগেই তৈলচিত্রটা একটু স্পষ্ট করে নিই। মানে তেলের দামের কথাই বলছিলাম! যেটুকু বুঝলাম, তেলের দাম অনেকটা কেসি নাগের অঙ্ক বইয়ের ওই গোদা হনুমানটার মতন, যে একটা তেল চুপচুপে বাঁশ বেয়ে উঠতে থাকে। উঠতেই থাকে। বিভিন্ন নেতাগণ এসে তার ল্যাজ ধরে টেনে খানিক নামায় বটে, তবে তার উপরে ওঠার চেষ্টা ক্ৰমবৰ্ধমান।

আবার কিছু ধূর্ত শৃগাল নাকি ‘ইন্ডাকশন’ নামক এক যন্ত্রে চালডাল ফুটিয়ে খেয়ে, নিজেদের ভাগের গ্যাস সিলিন্ডার দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে দুনিয়ায় গ্যাস দেওয়ার লোকের অভাব নেই বলেই রক্ষে। আজকাল এই নিয়ে কারও নাকি সে রকম অসুবিধা হচ্ছে না।

তবে নির্বাচনের হাওয়া ওঠায় আজকাল কিছু আজব এবং উদ্ভট ঘটনা ঘটছে চারিপাশে। যার কোনও উপযুক্ত ব্যাখ্যা আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। উদাহরণস্বরূপ বলি, দিন কয়েক আগে বাজারে একটি গরু ঝুড়িভর্তি পদ্মফুল দিয়ে প্রাতরাশ সারছিল। তাই নিয়ে নাকি এক ভয়ানক রাজনৈতিক বচসা বেধে গিয়েছে। এ হেন প্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের যে কী সম্পর্ক তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে বোধগম্য হয়নি।

সর্বশেষে বলি, নির্বাচনের বীজমন্ত্র হল ভোট। কাকে দিবি, তা তোর ব্যক্তিগত বিষয়। তবে কে জিতবে সেটার সিদ্ধান্ত ‘ডিম্ভাত’ নেবে। তন্ত্রমতে যদি সিদ্ধান্ত নিস, তবে বলি ‘ইড়া’ হল বামপথ যা আবেগপ্রবণ জীবনে ভারসাম্য আনে, তবে অতি বামে গেলে অতীতে হারিয়ে যাবি, অলসতা থাবা বসাবে শরীরে। ‘পিঙ্গলা’ হল ডান পথ, যা শেষ হয় মস্তিষ্কের ‘অহং’ ক্ষেত্রে, অতি ডানে গেলে নিজের মধ্যে ‘আমিত্ব’ জন্মাবে, যা থেকে মুক্তি নেই। তবে ‘সুষুম্না’ হল মধ্যপথ, সুপ্ত বটে, তবে স্বশুদ্ধিকরণ করে জাগিয়ে তুলতে পারলে আমৃত্যু ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবি। শিরদাঁড়া বেচে কোনও নেতার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না। কপালে ভাতা না জুটলেও ভাত ঠিক জুটে যাবে।

আমি তবু বলব, ক্ষ্যাপার সব কথা মনে ধরিসনি। নিজের মতোই চল।

বোবার কোনও শত্তুর নাই, আর ক্ষ্যাপার শত্তুর মুখ্যুরাই। ক্ষ্যাপার চাল নাই, চুলো নাই, ভোটার কার্ডও নাই। আসার দিনটি নির্বাচন করিনি, যাওয়ার দিনটিও করব না। তা হলে বৃথা মাঝের দিনগুলিই বা করি কেন?

রাখে বড়মা তো মারে কোন শ্লা..!

(লেখক অভিনেতা। মতামত নিজস্ব)

Sabyasachi Chowdhury Bengali Actor Bamakhyapa Lok Sabha Election 2024 Celeb Column
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy