Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

‘মোদীর উন্নয়নে শামিল বাংলা’, জেতা বা হারা সব আসনে একই সুর চাই! পদ্ম-নির্দেশ প্রার্থীদের জন্য

লোকসভা নির্বাচনে তিনিই যে বিজেপির ‘মুখ’, তা এত স্পষ্ট করে এর আগে নিজের মুখে বলেননি নরেন্দ্র মোদী। তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে নিজের সরকারের নাম নিজেই ‘মোদী’ বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

মোদী, মোদী এবং মোদী। এটাই প্রচার-নীতি পদ্মের।

মোদী, মোদী এবং মোদী। এটাই প্রচার-নীতি পদ্মের। ছবি: পিটিআই।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর ছবি বড়। প্রার্থীর ছবি তুলনায় ছোট। নরেন্দ্র মোদীর কাজের প্রচার বড় করে। প্রার্থীর পরিচয় ছোট করে। এটাই দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপির প্রচারমন্ত্র। এমন মন্ত্র ঠিক করে দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা দেশে এই নীতিতেই হতে হবে লোকসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচার। কারণ, বিজেপি মনে করছে, জয় আসবে একমাত্র নরেন্দ্র মোদীর মুখচ্ছবিতেই। প্রার্থী নন।

এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথম চারটি ভোট ঘোষণার আগে। সব ক’টিতেই দেখা গিয়েছে, মোদীর ভাষণে মোটামুটি চারটি ভাগ রয়েছে। প্রথমটিতে বাংলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কোন প্রকল্প চালু রয়েছে। কী কী উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। দ্বিতীয়, বাংলায় কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা পেয়েছে দিল্লি। এর মধ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের কথা বেশি করে বলেছেন তিনি। তৃতীয়, বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ। আর চতুর্থ তথা শেষ ভাগে নেতা কর্মীদের কাছে তাঁর আর্জি। প্রতি সভায় শপথ নেওয়াচ্ছেন এই বলে যে, ‘‘নিজের নিজের এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে বলবেন, মোদী আপনাকে প্রণাম জানিয়েছে।’’ প্রতিটি ভাগেই কম পক্ষে এক বার ‘মোদীর গ্যারান্টি’র কথা শোনাচ্ছেন মোদী।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

মোদী তাঁর নিজের বক্তৃতাতেও কেন্দ্রের যে কোনও প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে নিজের নামই নিচ্ছেন। ‘মোদী গরিবের কথা ভাবে’ থেকে ‘মোদী মানে দুর্নীতির বিরুদ্ধ লড়ে’— বলছেন মোদী নিজেই। প্রচারের এই সুর সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চায় কেন্দ্রীয় বিজেপি। বাংলায় ইতিমধ্যেই ৪০ জন প্রার্থীর কাছে চলে এসেছে সেই নির্দেশ। জেতা আসনে তো বটেই, ২০১৯ সালে জয় মেলেনি এমন কেন্দ্রেও প্রচারে জোর দিতে হবে সেই এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদে পাওয়া বিভিন্ন সুবিধার উপর। প্রচার পুস্তিকা থেকে হোর্ডিং-ব্যানারে বলতে হবে রেল থেকে সড়ক নির্মাণ, আবাস যোজনা থেকে বাড়ি বাড়ি জল প্রকল্পে কেন্দ্র কত টাকা ওই এলাকার জন্য খরচ করেছে। আর ২০১৯ সালে জেতা আসনের জন্য নির্দেশ আরও কড়া।

হেরে যাওয়া আসনে কেমন প্রচার হবে? উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের কথা। ২০১৯ সালে ওই আসনে তৃণমূলের কাছে বিজেপি হেরেছিল প্রায় ৯০ হাজার ভোটে। এর পরেও যে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার ওই আসনের এলাকার উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে, সেই বিষয়টির প্রচারে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রকল্পের সুবিধা কত মানুষ পেয়েছেন বা কেন্দ্র ওই এলাকার জন্য ঠিক কত খরচ করেছে, তার হিসাব নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে হবে প্রার্থীদের। জলজীবন মিশন থেকে উজ্জ্বলা প্রকল্পে রান্নার গ্যাসের সুবিধা— সবই জানাতে হবে। এর পরে রয়েছে কেন্দ্রের উদ্যোগে কী কী উন্নয়নমূলক কাজ ওই এলাকায় হয়েছে, তার খতিয়ান। সেখানে বলতে হবে খড়্গপুর-বর্ধমান-মোরগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে থেকে খড়্গপুর-শিলিগুড়ি অর্থনৈতিক করিডরের কথা। আবার বর্ধমান রেল স্টেশনের নতুন রূপের খরচ থেকে কোথায় ডবল লাইন হয়েছে বা কোথায় কত টাকার সেতু বানিয়েছে রেল, সে সবও লিখতে হবে প্রচার পুস্তিকায়।

রাজনৈতিক সভায় প্রচারে এর সঙ্গেই উল্লেখ করতে হবে, কোন কোন প্রকল্প ‘রাজ্যের বাধায়’ এখনও করা যাচ্ছে না সেই অভিযোগ। দলের তেমনই নির্দেশ। যেমন বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী অসীম সরকারের প্রচারে বলতে হবে, সেখানে রেলের মোট প্রকল্প ৫৪ হলেও রাজ্যের জন্য কাজ আটকে আছে ২৮টিতে। আটক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা আছে ২১,১৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রকল্পের সুবিধা থেকে ওই এলাকার কত মানুষ ‘বঞ্চিত’ তা-ও বলতে হবে। পাশাপাশি বলতে হবে, কেন্দ্রের প্রকল্প নয়, ‘মোদীর প্রকল্প’ থেকে বঞ্চিত। তেমনই চান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

জেতা আসনে কী করতে হবে? গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮ আসনে জিতলেও এখন তাদের হাতে ১৭। বাবুল সুপ্রিয়র ছেড়ে আসা আসানসোল ছাড়া বাকি সর্বত্র সাংসদ তহবিলের কত টাকা কোন খাতে কোথায় খরচ হয়েছে, তার বিবরণ ভোটারদের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে হবে। দলের যা নির্দেশ, তাতে শুধু গোটা লোকসভা আসন নয়, তার ভিতরে থাকা প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক কেমন উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সাংসদ করেছেন, তা-ও জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাংসদ তহবিলের অর্থও ‘মোদীর উন্নয়নে শামিল বাংলা’ প্রচারের অঙ্গ।

এই ভাবে যে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে, তা মেনে নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিলের টাকা তো কেন্দ্রেরই। মোদীজি একটা নিয়ম করে দিয়েছেন যে, সব সাংসদকে তাঁর মেয়াদ শেষের আগে পাঁচ বছরের খরচের হিসাব দিতে হবে। ভোটের প্রচারেও সেটা সর্বত্র উল্লেখ করা হবে।’’ সুকান্ত জানান, করোনার কারণে কিছু দিন সাংসদ তহবিলের টাকা দেওয়া বন্ধ থাকলেও গত পাঁচ বছরে ১৭ কোটি টাকা করে পেয়েছেন বিজেপি বা অন্য দলের সকল সাংসদ। সুকান্তের বালুরঘাটে ভোটগ্রহণ দ্বিতীয় দফায়। ইতিমধ্যেই তিনি বিধানসভা পিছু কত টাকা কোন খাতে খরচ করেছেন, তার বিস্তারিত হিসাবের হ্যান্ডবিল ভোটারদের দিচ্ছেন। সুকান্তের কথায়, ‘‘এটাই মোদীজির স্বচ্ছতা। বিরোধীরা কি এর থেকে শিখবেন, যে মানুষের টাকা মানুষের জন্য খরচ করলেও তার হিসাব দেওয়াটাই নৈতিকতা? তৃণমূলের সাংসদেরা তো দূরের কথা, রাজ্য সরকারই হাজার হাজার কোটির হিসাব দেয়নি কেন্দ্রকে!’’

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব জেতা আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে, সেখানেও একই নীতি কার্যকর হচ্ছে। যেমন রায়গঞ্জ বা মেদিনীপুরের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী এবং দিলীপ ঘোষ অন্য আসনে লড়ছেন। কিন্তু তাঁদের আসনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও বিদায়ী সাংসদের কাজের হিসাব সামনে এনেই প্রচার করতে হবে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE