Advertisement
E-Paper

সন্দেশখালি ছাড়তে নারাজ বিজেপি, লাগাতার সফরের ছক, পদ্ম ফোটাতে চোখের জলে অক্সিজেনের খোঁজ

সন্দেশখালি নিয়ে সোমবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত ছ’দিনের কর্মসূচি তৈরি করে রেখেছে রাজ্য বিজেপি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু’টি জনসভা রয়েছে। একটি বারাসতে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ১২:২২
লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি নিয়ে বড় পরিকল্পনা বিজেপির।

লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি নিয়ে বড় পরিকল্পনা বিজেপির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছে রাজ্য বিজেপি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে বাম জমানার পতন ঘটিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারেরাও যে সেই কৌশলেই সন্দেশখালির আন্দোলনকে জিইয়ে রেখে জমি মজবুত করতে চাইছেন, তা মোটামুটি স্পষ্ট তাঁদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকে। সন্দেশখালি নিয়ে সোমবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত ছ’দিনের কর্মসূচিও তৈরি করে রেখেছে রাজ্য বিজেপি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু’টি জনসভা রয়েছে। একটি বারাসতে। সন্দেশখালি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে।

সন্দেশখালি নিয়ে ইতিমধ্যেই একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। জাতীয় মানবাধিকার, মহিলা, তফসিলি, শিশু কমিশন সন্দেশখালি যাওয়ায় তার থেকেও ফয়দা তুলতে চেয়েছে তারা। সেই ধারাই চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পদ্মশিবিরের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তা-ই চান। সেই নির্দেশকে কাজে লাগাতে পরিকল্পনাও পাকা বঙ্গ বিজেপির। সন্দেশখালিতে গিয়ে বা সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের রেশ ধরে রেখেই লোকসভা ভোটে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায় তারা। রাজ্য বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি শাখার তৈরি ‘দ্য বিগ রিভিল– দ্য সন্দেশখালি শকার’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ৪ মার্চ, সোমবার হবিবপুরের বিধায়ক জোয়েল মুর্মুর নেতৃত্বে বিজেপির তফসিলি উপজাতি মোর্চার প্রতিনিধি দলের সন্দেশখালি যাওয়ার কথা। জোয়েল ওই মোর্চার সভাপতি। ৫ মার্চ সন্দেশখালি যাওয়ার কথা ইন্দ্রনীল খাঁর নেতৃত্বে বিজেপির যুব মোর্চার প্রতিনিধি দলের।

আগামী ৬ মার্চ বারাসতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভা রয়েছে। সন্দেশখালি পর্বের আবহে যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি সূত্রেও দাবি, সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের মোদীর সভায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মার্চের ১ এবং ২ তারিখ যথাক্রমে আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরে সভা করে গিয়েছেন মোদী। ওই দু’টি সভা থেকে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন। মোদীর সেই আক্রমণের ঝাঁজ বারাসতের সভায় বাড়তে পারে বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। সব কিছু ঠিক থাকলে, ৯ মার্চ শনিবার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতেও সভা করার কথা রয়েছে মোদীর। বিজেপি সূত্রে খবর, সেখানেও মোদীর ভাষণে সন্দেশখালির কথা উঠে আসতে পারে। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও সন্দেশখালির আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে দিতে চাইছে দল। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, সন্দেশখালির আন্দোলনকে জাতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে বিজেপির। বিতর্কের শুরুতেই তা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তার পর থেকে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা সন্দেশখালি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। রাজধানীর রাস্তাতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই দিল্লিতে নতুন বঙ্গ ভবন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে চাণক্যপুরী থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রীর দু’টি সভার মাঝে আগামী ৭ মার্চ এবং ৮ মার্চেও সন্দেশখালি নিয়ে কর্মসূচি রেখেছে বিজেপি। ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ওই এলাকায় যেতে পারেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে আগেই সন্দেশখালি গিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। লকেটও সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোজেরহাট এলাকায় তাঁকে আটকে দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। লকেটের দাবি, তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। ৮ মার্চ শুক্রবার দলের তফসিলি মোর্চার সভাপতি সুদীপ দাসের নেতৃত্বেও একটি দলের সন্দেশখালি যাওয়ার কথা। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, হয়তো প্রতি বারই সন্দেশখালি যেতে গিয়ে প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু তার পরেও বার বার সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন যত আটকাবে, তত তাদের আসল রূপ উন্মোচিত হবে। আমরা চাই সন্দেশখালি নিয়ে শোরগোল হোক। এটাকে নানা ভাবে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল, রাজ্য সরকার। আমরা সেটা হতে দেব না। সন্দেশখালিতে তৃণমূলের লোকেরা কী করেছে, তা গোটা বাংলার জানা উচিত। এই রাজ্য সরকারের আসল চরিত্র গোটা বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’

এর আগে জাতীয় তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধি দল সন্দেশখালিতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারির সুপারিশও করে এসেছে। দু’দফায় গিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। দ্বিতীয় দফায় কমিশনের চেয়ারম্যান রেখা শর্মা রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারির পরিস্থিতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক ভাবেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। ন্যাজাট থানায় গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত ও তাঁর অনুগামীরা। সন্দেশখালি ঢোকার চেষ্টা করায় টাকিতে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হন। সরস্বতী পুজোর দিন সেই আন্দোলনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় সুকান্তকে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকেরা। তার পর থেকেই ধীরে ধীরে সেখানে জনবিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। তৃণমূল নেতা শাহজাহান-সহ তাঁর দুই শাগরেদ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করতে শুরু করেন সন্দেশখালির মহিলারা। সন্দেশখালিতে তফসিলি সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগও ওঠে। এ ছাড়াও তোলাবাজি, চাষের জমি কেড়ে ভেড়ি তৈরি-সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যার জেরে ‘অস্বস্তি’তে পড়ে শাসক তৃণমূল। শিবু ও উত্তমকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। ৫৫ দিন পর শাহজাহানকেও গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এই ঘটনা পরম্পরায় তৃণমূল ‘অস্বস্তি’-তে পড়েছে বলেই দাবি বিজেপির। ফলে তারা সেই পরিস্থিতিকে যথাসম্ভব জিইয়ে রাখতে চায়।

Lok Sabha Election 2024 Sandeshkhali Incident BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy