E-Paper

বাম-কংগ্রেসের ভোটেই বদলে যেতে পারে অঙ্ক

চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

গত বারের মতো এ বারও সংখ্যালঘু-প্রধান চাপড়ার উপরেই কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলের ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করছে। কিন্তু গত বারের চেয়ে এ বার পরিস্থিতি কিছুটা শক্ত হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তার অন্যতম কারণ বাম-তৃণমূলের মিলিত ভোট। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে তাদের ভোট অনেকটাই বেড়েছে, সংখ্যালঘু এলাকায় যার অর্থ সরাসরি তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে হাত পড়া।

চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই এলাকা থেকে সিপিএম প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ ভোট পায়, কংগ্রেস পায় প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ দুই দলের মিলিত ভোট প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই সংখ্যাটা তৃণমূলে নেতৃত্বের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। গত লোকসভা ভোটে সিপিএম পেয়েছিল মাত্র সাড়ে ১০ শতাংশ ভোট, কংগ্রেস সাড়ে চার শতাংশ। অর্থাৎ সেই তুলনায় পঞ্চায়েত ভোটে তাদের বৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশের। এমনকি গত বিধানসভা ভোটে চাপড়ায় তৃণমূল ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের দ্বৈরথে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বাম ও কংগ্রেস যথাক্রমে প্রায় সাড়ে পাঁচ ও প্রায় সাড়ে চার শতাংষ ভোট পেয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে সেই সংখ্যাটা একলাফে এতটা বেড়ে যাওয়ায় জোটের নেতাকর্মীরা এখন অনেক বেশি উজ্জীবিত, যদিও পঞ্চায়েত ভোট এবং লোকসভা ভোটের সমীকরণ আদপেই এক নয়।

সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, চাপড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ২৭৬টি আসনের মধ্যে প্রায় একশো আসনে তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি। আবার হাতিশালা, হাঁটরা, চাপড়া, বেতবেড়িয়া-সহ বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দিলেও তৃণমূল সুষ্ঠু ভাবে ভোট হতে দেয় নি। সিপিএমের চাপড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক জাহাঙ্গির বিশ্বাসের দাবি, “গণনা কেন্দ্রেও প্রচুর কারচুপি হয়েছে। লোকসভা ভোট যদি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, আমাদের ভোট আরও বাড়বে।” তাঁদের দাবি, বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের হাতে কংগ্রেস কর্মীরা এত আক্রান্ত হয়েছেন যে কয়েক মাসের মধ্যে তাঁদের পক্ষে সব ভুলে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া সংখ্যালঘু ভোটারদের একাংশ তাদের উপরে নতুন করে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন বলে বামেদের দাবি।

উল্টো দিকে রয়েছে তৃণমূলের তীব্র গোষ্ঠী কোন্দল। গত বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো জেবের শেখ দলে ফেরার পরে তাঁকে আগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে মহুয়ার ভোট করতে চাওয়া বিধায়ক রুকবানুর রহমানের অনুগামীরা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। দুই গোষ্ঠীর বিবাদ সামনে আসতে শুরু করেছে গোটা চাপড়া জুড়েই। দু'দিন আগেই মহুয়ার সামনেই তাঁর প্রচার গাড়ি থেকে জেবেরকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘরে-বাইরে তৃণমূলের লড়াই ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশই জনান্তিকে স্বীকার করে নিচ্ছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে চাপড়া থেকে প্রায় ৫২ হাজার ভোটে লিড পেয়ে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া প্রায় ৬৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বার সেই ‘লিড’ অক্ষুণ্ণ রাখা তৃণমূলের জয়ের অন্যতম শর্ত। সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে না ঝাঁপালে বাম-কংগ্রেসের কাছে চলে যাওয়া ভোট ফেরানো অসম্ভব বলে দলেই অনেকে মনে করছেন। তবে চাপড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের দাবি, “যে যা-ই বলুক, আমরা সবাই এক সঙ্গে লড়ছি।” বাম-কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তির উপর যে তৃণমূল প্রার্থীর ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে তা স্বীকার করেও তাঁর দাবি, "লোকসভা ভোট আর পঞ্চায়েত ভোট এক নয়। বামেদের ভোট আগের বারের চেয়ে কমবে।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 CPIM Congress Alliance chapra

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy