E-Paper

‘টিম’ নামতেই সামনে ফাঁকফোকর

দিলীপের কটাক্ষ, “ওদের (তৃণমূলের) লোকজনদের ডাকতে গেলে নাচানাচি করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীও নাচেন। এখানকার প্রার্থীও নাচছেন। নাচানাচি করে, ম্যাজিক করে ওদের লোক জড়ো করতে হচ্ছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:১০
বর্ধমানের সদরঘাট দামোদর পাড়ে ছট পুজায় দিলীপ।

বর্ধমানের সদরঘাট দামোদর পাড়ে ছট পুজায় দিলীপ। ছবি: উদিত সিংহ। 

সংগঠনের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। এখনও দলের অনেক পুরনো নেতা-কর্মীদের প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি উঠছে। তার মধ্যেই কাজ শুরু করেছে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের ‘টিম’। জেলার প্রতিটি মণ্ডলে ‘প্রবারী’ হিসাবে কাজ করছেন তাঁরা। বুথ কমিটি তৈরিতে ‘জল’, বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি সংগঠনের বেআব্রু চিত্র সামনে আসছে। দলের একাংশই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ, বর্ধমান উত্তর, ভাতার ও মন্তেশ্বর বিধানসভায় সংগঠনের হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, প্রবারীরা প্রতিটি মণ্ডলে ‘বসে থাকা’ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছে। এ দিকে, উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের সঙ্গে পা মেলানো নিয়ে সোমবার বর্ধমানের তেলিপুকুরে চা-চক্রে যোগ দিয়ে কটাক্ষ করেন বিজেপি প্রার্থী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অবশ্য দাবি, নাচ করা তো ভালই। এতে শরীর সুস্থ থাকে।

দিলীপের কটাক্ষ, “ওদের (তৃণমূলের) লোকজনদের ডাকতে গেলে নাচানাচি করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীও নাচেন। এখানকার প্রার্থীও নাচছেন। নাচানাচি করে, ম্যাজিক করে ওদের লোক জড়ো করতে হচ্ছে। আর আমাদের দেখলেই লোক রাস্তায় চলে আসছে। এটাই পার্থক্য।” তৃণমূলের দাবি, দিলীপ বার বার মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করছেন। কমিশন শো-কজ় করার পরেও আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ বলেন, “উনি (দিলীপ ঘোষ) যে নারীবিদ্বেষী সেটা বারবার প্রমাণ হচ্ছে।” যদিও দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, “আমি এখনও বক্তব্য শুনিনি। দিলীপ দা’র মন্তব্যের ব্যাখ্যা একমাত্র দিলীপ দা-ই দিতে পারেন। ওটা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী অনেক জায়গাতেই নাচেন। এক দিক থেকে ভাল। নাচানাচি করাটা তো খারাপ নয়। ব্যায়াম করা হবে, শরীরও সচল থাকবে।”

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত থেকে একটি অডিয়ো প্রচারমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)। সেখানে বর্ধমান শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২৫৮ নম্বর বুথের এক মহিলাকে সভাপতি বলে জানান মণ্ডল-প্রবারী। যা শুনে ওই মহিলাকে অবাক হয়ে বলতে শোনা যায়, “আমি তো দু’তিন দিন দলের অফিসে গিয়েছিলাম। রাজনীতির কিছুই বুঝি না। আমাকে কী ভাবে বুথ সভাপতি করা হল। এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হল, অথচ আমি জানলাম না! আর আমি বুথেও বসব না।” দলের কাছ থেকেই পাওয়া তালিকা ধরে মণ্ডল-প্রবারী ওই মহিলাকে ফোন করেছিলেন, তা কথোপকথনে পরিষ্কার। বিজেপির একাংশের দাবি, এ ভাবেই ভুয়ো রিপোর্ট করে রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। দিলীপদার নিজস্ব ‘টিম’ কাজ করতেই সব ধরা পড়ছে। বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি, প্রবীণ নেতা নরেশ কোনারের দাবি, “ভুয়ো সংগঠন করে দলকে ফাঁপানো হয়েছে, তা আমরা বার বার বলেছি। সাংগঠনিক নেতা এসে সেটাই ধরছেন। শুধু সন্ত্রাসের কথা বলে সংগঠনের বেহাল দশা কাটানো যাবে না।” কয়েক দিন আগে কানাইনাটশালে গিয়ে সংগঠন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন দিলীপ। দলের পতাকা, দেওয়াল লিখন নিয়ে ‘ফাঁকিবাজি’ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন।

এ দিন অবশ্য সংগঠনের দুর্বলতার কথা দিলীপ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “তৃণমূলের সংগঠন কোথায়? তৃণমূলের সঙ্গে গুন্ডা, পুলিশ আছে। আমি যে বুথে যাব, সেখানে ১০টা লোক থাকবে। আমার সঙ্গে ঘুরবে। যাঁরা বেরোচ্ছে না, সে বিজেপি নয়। তৃণমূল-কংগ্রেসের লোক কেন বিজেপির হয়ে বার হবে। বিজেপির লোক বিজেপির হয়ে বের হবে।” দলের অনেকেই মনে করছেন, গত বিধানসভায় ভোটের পরে ‘সন্ত্রাসে’র কারণে অনেকেই বার হচ্ছেন না। দিলীপ বলেন, “এ বার সবাই বুথে বসবে। বুথ সামলাবে। বাইরে থেকে কেউ কিছু করতে এলে কি ভাবে ফিরে যাবে, সেটা আমরা ঠিক করেন। আর গতবারের ঘটনা ঘটতে দেব না।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “দিলীপ ঘোষ যেখানে যায় মূল সমেত উপড়ে ফেলে।” বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোট করবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় নয় বলেও জানান তিনি।

তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বিজেপির সঙ্গে লোক নেই বর্ধমানের মানুষ তা দেখছেন। সে জন্যই হতাশা থেকে হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন। যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মদত পায় বিজেপি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 TMC BJP Dilip Ghosh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy