Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
CPM West Bengal

সিপিএম ‘টুনির মায়েদের’ আত্মমর্যাদা দিতে চায়, মমতার মহিলা ভোটে থাবা বসাতে প্রচার সেলিমদের

বিবিধ কারণেই তৃণমূলের দিকে মহিলা ভোট ঝুঁকে রয়েছে। ২০২১ সালের ভোটে মমতার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর প্রতিশ্রুতি যে ‘ম্যাজিক’-এর মতো কাজ করেছিল, তা মানেন বিরোধী শিবিরের নেতারাও।

—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৪
Share: Save:

তিন বছর আগে ব্রিগেড সমাবেশের ‘থিম সং’-এ ‘টুম্পাসোনা’র সুর ব্যবহার করেছিল সিপিএম। এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে বহুল প্রচলিত গান ‘টুনির মা’কে ব্যবহার করল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এবং তা ব্যবহার করা হয়েছে স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের প্রচারে।

একটি লিফলেট মুর্শিদাবাদের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছ‌ে সিপিএম। যার একটি উপ শিরোনাম— ‘টুনির মায়ের নাম কী?’ তার মধ্যে মহিলাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। সিপিএমের ওই প্রচারপত্রে রয়েছে, দেশের লক্ষ লক্ষ মহিলা সারাজীবন শুধু কারও মা, কারও স্ত্রী বা কারও মেয়ের পরিচয় বহন করে চলেন। তাঁদের নিজেদের কোনও পরিচয় থাকে না। সিপিএম তাঁদের সেই ‘পরিচয়’ দেবে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সিপিএম সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ ছাড়াও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির প্রচারেও এই লিফলেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, এই দুই কেন্দ্রেই উল্লেখযোগ্য হারে সংখ্যালঘু এবং মহিলা ভোট রয়েছে। এই দুই কেন্দ্রে সিপিএমেরও দুই প্রার্থী সংখ্যালঘু। গত ১৩ বছরে রাজ্যের তৃণমূলের ভোটের ফলাফলের বিশ্লেষণ বলছে, মহিলা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তাঁর দল তৃণমূলের ‘আধিপত্য’ রয়েছে। তবে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী যথাক্রমে মহুয়া মৈত্র এবং অমৃতা রায় দু’জনেই মহিলা। সিপিএমের তা নয়।

বিবিধ কারণেই তৃণমূলের দিকে মহিলা ভোট ঝুঁকে রয়েছে। ২০২১ সালের ভোটে মমতার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর প্রতিশ্রুতি যে ‘ম্যাজিক’-এর মতো কাজ করেছিল, তা মানেন বিরোধী শিবিরের নেতারাও। সেই প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিতেই থেমে থাকেনি। তা বাস্তবায়িতও হয়েছে। রাজ্যে দু’কোটির বেশি মহিলা এখন সেই প্রকল্পের উপভোক্তা। উপরন্তু, এপ্রিল মাস থেকে তাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের বর্ধিত অঙ্ক পাচ্ছেন। যা সাধারণ শ্রেণিভুক্তদের ক্ষেত্রে বাড়িয়ে মাসিক ৫০০ টাকা থেকে দ্বিগুণ ১০০০ টাকা করা হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৫০ টাকা। ওই প্রকল্প যে কতটা ‘ফলদায়ী’, তা বুঝেছে বিজেপিও। তাই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, রাজ্যের ক্ষমতায় এলে তাঁরা ওই প্রকল্পের অর্থ বাড়িয়ে মাসিক তিন হাজার টাকা করবেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ‘স্বাস্থ্যসাথী’তেও পরিবারের যে কার্ড, তা বাড়ির মহিলাদের নামেই। ফলে সেখানেই হাত বাড়াতে চাইছে সিপিএম।

যদিও সিপিএমের এ হেন প্রচারকে ভোটের আগে ‘চটক’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। শাসকদলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলার মহিলাদের সব দিক থেকে আত্মমর্যাদা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু মাত্র সরকারি প্রকল্পে মহিলাদের সুবিধা দেওয়া নয়, সার্বিক ভাবে তাঁদের আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে। পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা— এত মহিলা প্রতিনিধি কোনও দলের নেই। মানুষ অভিজ্ঞতাতেই মিলিয়ে নিতে পারবেন, তৃণমূলের সময়ে মহিলাদের কতটা আত্মমর্যাদা তৈরি হয়েছে।’’

ঘটনাচক্রে, এ বার সিপিএমের প্রচার কৌশলেও কিছু বদল এসেছে। অন্যান্য বার প্রচারসামগ্রীতে যে সব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ ভাষা লেখা হত, এ বার তা নেই। দলের লোকেরাই বলতেন, ‘‘টুপি পরা তাত্ত্বিকেরা ঠান্ডা ঘরে বসে যা লেখেন, তা সাধারণ মানুষের ভাষা নয়।’’ সেলিম সম্পাদক হওয়ার পরে কম কথায় অনেকটা বলার একটা অনুশীলন দলে চালু করেছেন বলে সিপিএম সূত্রে খবর। সেলিম নিজেও দলের সার্কুলারে অতিরিক্ত যুক্তাক্ষর লেখার বিরুদ্ধে। সেলিম ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, সোজা কথা সোজা ভাবে না বলতে পারাটা ‘দৈন্য’। তা কাটাতে এবং নতুন ঘরানা তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘ দিন দলে ‘উপেক্ষিত’দের দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি। ‘সময়োপযোগী’ প্রচারসামগ্রী তৈরি করছেন তাঁরা। কিন্তু তার প্রভাব কি ভোটে পড়বে? অন্ধকার সিপিএমের ঘরে কি টুনি জ্বলবে? জবাব মিলবে আগামী ৪ জুন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE