E-Paper

শিল্প-চাষ কিছুই নেই, তবু সিঙ্গুরে এগিয়ে তৃণমূলই

বেড়াবেড়ির এক চাষি ৪ বিঘা জমি ফেরত পেয়েছিলেন। কষ্টেসৃষ্টে বিঘাখানেক জমির হাল ফিরেছে। বাকিটা পতিত। ওই চাষির কথায়, ‘‘এর থেকে কোনও শিল্প হলেই ভাল হত।’’

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ০৮:২০
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

‘ক্ষত’ মেরামত হয়ে গিয়েছিল গত বিধানসভা ভোটেই। এ বার লোকসভা ভোটের ফলাফল ফের বোঝাল— শিল্প-কৃষি কিছু না পেয়েও সিঙ্গুরের ভোটার তৃণমূলের পাশেই আছে। প্রায় ১৯ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় লিড পেয়েছেন হুগলির এই কেন্দ্র থেকে।

টাটারা ফিরে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথা মতো গাড়ি কারখানার জন্য নেওয়া জমি ফিরিয়েছিলেন চাষিদের। জমিদাতারা চেয়েছিলেন, সে জমি চাষযোগ্য হিসাবে তাঁদের হাতে আসুক। তেমনটা ঘটেনি বলে অভিযোগ। ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানার জন্য নেওয়া প্রায় হাজার একর জমির বহু অংশ এখনও কার্যত পতিত। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা।

তবু লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের সুবাদে তৃণমূল এখানে বিরোধীদের পিছনে ফেলেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই। বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডের দাবি, ‘‘সিঙ্গুরের একাংশ শিল্প চেয়েছে বলেই লিড কমেছে তৃণমূলের। বিধানসভার তুলনায় হাজার দশেক ভোটের ব্যবধান কমিয়েছি। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য পুরোটা পারলাম না।’’ একদা জমি আন্দোলনের পরিচিত মুখ তথা সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধারাও মানছেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প না থাকলে তৃণমূল পিছিয়ে পড়ত।’’ শিল্প আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সিঙ্গুর থেকে লিড পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ২০২১-এর বিধানসভায় তৃণমূল ২৮ হাজার ভোটে জেতে। অঙ্কের হিসাবে এ বার ‘লিড’ হাজার দশেক কমলেও বিজেপিকে তা ছাপিয়ে গিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উঠে আসছে দক্ষ সংগঠক হিসাবে এক সময়ে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে মমতার ‘ডান হাত’ বেচারাম মান্নার কথা। বেচারাম অধুনা সিঙ্গুরেরই বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী। বেচারামের দাবি, জমি নিয়ে কারও কোনও ক্ষোভ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওই জমি যে তিনটি পঞ্চায়েতে, সেখানে দল ভাল ফল করেছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে সেটা হত না।’’ কারখানার জন্য নেওয়া জমির অধিকাংশ অনাবাদী বলেও মানতে নারাজ তিনি।

বেড়াবেড়ির এক চাষি ৪ বিঘা জমি ফেরত পেয়েছিলেন। কষ্টেসৃষ্টে বিঘাখানেক জমির হাল ফিরেছে। বাকিটা পতিত। ওই চাষির কথায়, ‘‘এর থেকে কোনও শিল্প হলেই ভাল হত।’’ তবে এক সময়ে ‘অনিচ্ছুক’ চাষি হিসাবে মাসে ২ হাজার টাকা এবং ১৬ কেজি চাল পান বলে জানালেন। স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢোকে। বললেন, ‘‘দিদিমণি জমি ফেরত তো করছেন। কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।’’ খাসেরভেড়ির বিএ পাশ এক যুবতীর খেদ, ‘‘জমিও গেল, শিল্পও গেল! কোনও একটা থাকলে আয়ের উপায় হত।’’ ‘‘তবু লক্ষ্মীর ভান্ডার তো আছে,’’ বলছেন তিনিও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 TMC Rachna Banerjee Singur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy