Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha election 2024

তাঁকে নিয়ে ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা কতখানি? প্রশ্ন করায় কী জবাব দিলেন তৃণমূলের সাংসদ দেব

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কমিটি থেকে সাংসদ দেবের সরে দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রাজ্য-রাজনীতিতে। সেই আবহে বুধবার একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে।

দেব। —ফাইল চিত্র।

দেব। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৬
Share: Save:

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কমিটি থেকে সাংসদ দেব (দীপক অধিকারী)-এর সরে দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রাজ্য-রাজনীতিতে। সেই আবহে বুধবার একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছে। দিল্লি থেকে তা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ দেব। তাঁর বক্তব্য, এ ব্যাপারে তাঁর বিশেষ কিছু বলার নেই। যা বলার তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলবেন! তাঁর কথায়, ‘‘দিদিই উত্তর দেবেন।’’

প্রকাশ্যে আসা অডিয়ো ক্লিপে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, দেব নাকি তাঁর কাছ থেকে এমপি ল্যাড (সাংসদ তহবিল)-এর ৩০ শতাংশ কমিশন চেয়েছেন। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমি দিদিকে এমন কথা বলেছি যে, দেব আমার কাছ থেকে তাঁর এমপি ল্যাড থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন চাইছেন। দিদি বলেছেন, ‘ছেড়ে দে। ওর কাজটা করিস না।’ কিন্তু আমি তো দিদিকে বলেছি। দিদি জানে। সব দেখেও তো ওকে সাপোর্ট করেছেন। কেন করেছেন? ওকে আবার রাজনীতিতে প্রয়োজন। কাজেই ভালমন্দ, এখানে সততা বলে কিছু নেই। সততার মূল্য নেই। যে যত চুরি জোচ্চুরি-বাটপাড়ি করতে পারবে, তারাই গিয়ে ওই...।’’ বিরোধীদের দাবি, অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠস্বর যাঁর, তিনি আর কেউ নন, ঘাটালের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুই। শঙ্কর অবশ্য দাবি করেছেন, ওই কন্ঠস্বর তাঁর নয়।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

ওই অডিয়ো ক্লিপ প্রসঙ্গে দেবের বক্তব্য, যে হেতু ওই ব্যক্তির সঙ্গে দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা হয়েছে, তাই যা উত্তর দেওয়ার দিদিই দেবেন। বাজেট অধিবেশনের জন্য এখন দিল্লিতে রয়েছেন দেব। সেখান থেকে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘আমার উপর কিছু নির্ভর করে নেই। আমার যা করার, যা বলার, তা আমি দলকে বলে দিয়েছি। যে অডিয়ো ক্লিপটি বেরিয়েছে, সেই মতো দেখলে, দিদি আর ওর মধ্যে কিছু কথা হয়েছ। দিদিই উত্তরটা দেবেন। আমার কিছু বলার নেই।’’

শনিবার একযোগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব। হঠাৎ কেন এই পদত্যাগ, তা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে দেবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ব্যক্তিগত কারণে তিনটি কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়ে থাকতে পারেন সাংসদ। এর পরেই রাজ্য-রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়, তিন-তিনটি সরকারি কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে কি আসলে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে না চাওয়ারই বার্তা দিলেন দেব? তার মাঝেই অডিয়ো ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসে।

এ বিষয়ে বুধবারই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘দেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই কারণেই কেউ একটা এ রকম অডিয়ো ক্লিপ বানিয়ে বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছে।’’

জেলায় দলের একাংশের দাবি ছিল, শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণেই ইদানীং অত্যন্ত ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে পড়েছেন দেব। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। দেবকে বাদ দিয়েই কমিটির মাথা চূড়ান্ত হয়ে যায়। তার পরে অবশ্য চুপ হয়ে যান সাংসদ অনুগামীরা। এই সব মিলিয়ে আর ভোটে না লড়ার কথাও ভাবছেন। যদিও কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। কেউ কিছু প্রকাশ্যে বলছেন না দেখে এক রকম ধোঁয়াশায় রয়েছেন দলের একটি বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে অডিয়ো ক্লিপের বিষয়টিতে শঙ্কর ও দেব দু’জনের নাম জড়িয়ে পড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়ার কথা শাসকদলের।

শঙ্কর অবশ্য জানিয়েছেন, অডিয়োর ওই কণ্ঠ তাঁর নয়। এ বিষয়ে তিনি কোনও ভাবে জড়িত না বলেও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওটা জানি না।’’ অন্য দিকে, সাংসদ দেবের প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন, ‘‘শুনেছি একটি অডিয়ো, যা ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি দলকে জানানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুদাইত বলেন, ‘‘দেব স্বচ্ছ মানুষ, তাকে কলুষিত করতে বিজেপির চক্রান্ত এটা।’’

বছর দুয়েক আগে আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানা কথা’য় দেব একবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি আসন্ন লোকসভা ভোটে লড়তে চান না। তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা ছিল দলের অন্দরে ও বাইরে। তার অবসান হয় গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বৈঠকে। এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেবকেই প্রার্থী করতে চান তিনি। বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আমাদের দলের সম্পদ। বেশ কিছু নেতা তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যার ফলে ওর অসুবিধা হচ্ছে। এমনটা কেন হবে? ও শিল্পী মানুষ। এটা তোমরা কী করছো?’’ দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, অভিনেতা-সাংসদও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন উপস্থিত নেতারা। কিন্তু তার পরেও আচমকা কেন তিনটি সরকারি কমিটির শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে। ইস্তফাপত্রেও কোনও কারণের উল্লেখ করেননি দেব। তাতেই জল্পনা আরও বেড়েছে।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটালে বাংলা সিনেমার সুপারস্টার দেবকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে পরাজিত করে সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জয়ী হন দেব। কিন্তু ঘাটাল থেকে মাঝেমধ্যেই দেবের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের বিবাদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তাই এ বার লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা বৈঠকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, তাতে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী ফের হিসাবে তাঁকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঘাটাল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে দেবের এ ভাবে ইস্তফায় আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Dev TMC ghatal Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE