—প্রতীকী চিত্র।
আগামী ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা। তার আগে পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি টাকা বা ১০ হাজারের বেশি দামের উপহার নিয়ে যাতায়াত করলে সঙ্গে থাকতে হবে উপযুক্ত নথি। না হলে সেই টাকা বা উপহার বাজেয়াপ্ত করতে পারে পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি কমিটি। টাকা বা উপহারের উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া না গেলে হতে পারে লিখিত অভিযোগও। অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত টাকা বা উপহার জমা থাকবে সরকারি হেফাজতেই।
নির্বাচনের চলাকালীন বেআইনি আর্থিক লেনদেন বা উপহার দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা আটকাতে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। শনিবার নির্বাচন ঘোষণার সময়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছিলেন, আসন্ন নির্বাচনে তাদের চারটি ‘এম’-এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। যার মধ্যে অন্যতম হল টাকা (মানি)।
প্রতি বারই নির্বাচনের আগে বেআইনি আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে নানা অভিযোগ জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কোথাও হিসাব বহির্ভূত অর্থ ব্যয় কোথাও আবার টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ সামনে আসে। এ ধরনের ঘটনা আটকাতেই সমস্ত রকম আর্থিক লেনদেনের উপরে কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তিনটি শিফটে ২৪ ঘণ্টাই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নজরদারি চালান হবে। প্রত্যেক শিফটেই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের কোনও না কোনও আধিকারিক উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের উপস্থিতিতে তল্লাশি চালিয়ে কারও কাছে উপযুক্ত নথি ছাড়া নগদ ৫০ হাজারের বেশি টাকা বা দশ হাজার টাকার বেশি দামের উপহার পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
১৬ তারিখ ভোট ঘোষণার পর থেকে আগামী ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত এই নজরদারি চলবে। ওই আধিকারিক জানান, ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর নগদ অর্থ নিয়ে যে গাড়িগুলি এটিএম মেশিনে টাকা সরবরাহ করতে যায়, সেগুলিকেও নজরদারির আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে না। উপযুক্ত নথি না থাকলে আটকে দেওয়া হচ্ছে সেই গাড়িগুলিকেও। তাই ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে, নগদ টাকা নিয়ে যাওয়া গাড়িতে ড্রাইভারের নাম, পরিচয়, কোথা থেকে কোথায় টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কী উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কত টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার সম্পূর্ণ তথ্য যুক্ত একটি করে কিউ আর কোড লাগাতে হবে গাড়িতে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সেই কোড স্ক্যান করে সমস্ত তথ্য মিলিয়ে তবেই গাড়ি যেতে দেবেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যদি টাকা বা উপহার বাজেয়াপ্ত করা হয়, তা হলে তা ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে একটি নির্দিষ্ট কমিটির কাছে। বীরভূমে সেই কমিটিতে থাকছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ), অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) এবং জেলা ট্রেজারি অফিসার। সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি-সহ এই কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। কমিটি যদি মনে করে, এই টাকা বা উপহার নির্বাচনে অবৈধ খরচের জন্য বা ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নয়, তা হলে তাঁরা সেগুলি ফেরত দিয়ে দেবেন। যদি কোনও অভিযোগ দায়ের হয়, তা হলে সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছুই ছাড়া হবে না। ভোট ঘোষণা দিন থেকেই এই কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর থেকে যতদিন পর্যন্ত সবগুলি ঘটনার নিষ্পত্তি না হচ্ছে, তত দিন এই কমিটি কাজ করবে।
ওই আধিকারিক বলেন, “আগামী এক মাসের মধ্যে বেশ কিছু বিয়ে বা অন্য সামাজিক অনুষ্ঠানের দিন রয়েছে। সেগুলির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা বা বেশ কিছু টাকার গয়নাগাটি কেনার প্রয়োজন পড়তেই পারে। সে ক্ষেত্রে পাকা বিল, বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র এবং কী প্রয়োজনে টাকা তোলা হচ্ছে বা উপহার কেনা হচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য সঙ্গে রাখাই ভাল। সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করা নয় বরং অবাধ নির্বাচন পরিচালনা করার উদ্দেশ্যেই এই নজরদারি। তাই সন্তোষজনক কারণ থাকলে ভয়ের কিছুই নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy