Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
CPM

গোড়া থেকেই বিরোধিতা, বন্ডের শূন্য অস্ত্র সিপিএমের

এই রাজ্যে সিপিএমের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৬০৬০ কোটি টাকার বিপুল চাঁদা পেয়েছে বিজেপি।

—প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:০১
Share: Save:

আসনে শূন্য। বন্ডেও শূন্য!

শূন্যই এ বার লোকসভা নির্বাচনের মরসুমে সিপিএমের জন্য প্রচারের বড় হাতিয়ার! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই এই হাতিয়ার ধারালো করতে পেরেছে সিপিএম। একেবারে গোড়া থেকেই তারা বন্ড ব্যবস্থার বিপক্ষে। নির্বাচনী বন্ড বাতিল করার দাবিতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। বন্ড মারফত কোন দলের তহবিলে কত টাকা গিয়েছে, সেই তালিকাতেও নাম নেই সিপিএমের। ফলে, নৈতিক অবস্থানে অন্য সকলের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারছে তারা। কৌটো নিয়ে যে গণ-সংগ্রহ অভিযানকে লাগাতার কটাক্ষ করে এসেছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা, এখন সে সব ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসে গিয়েছে বিমান বসুদের সামনে!

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এই রাজ্যে সিপিএমের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৬০৬০ কোটি টাকার বিপুল চাঁদা পেয়েছে বিজেপি। তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্তি খুব কম নয়। শুধু ডিয়ার লটারি সংস্থার কাছ থেকেই তৃণমূলের ঘরে এসেছে ৫৪২ কোটি টাকা। কেবল এক রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার নিরিখে দেখলে তৃণমূলের চাঁদা-প্রাপ্তির অনুপাত চাঞ্চল্যকর বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। দেশের ১৭ রাজ্যে এখন বিজেপির শাসন। মোট বিক্রীত বন্ড এর ৪৭.৪৬% পেয়েছে বিজেপি। আর একটি রাজ্যে শাসন করে ১২.৬% বন্ড মারফত পেয়েছে তৃণমূল। দুই শাসক দলকে একসঙ্গে বেঁধার পাশাপাশি সিপিএমের প্রশ্ন, যদি একাধিক রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকতো, তা হলে আনুমানিক কত টাকা তারা পেত!

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘নির্বাচনী বন্ডের তোলাবাজিতে বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলের গাঁটছড়া বাঁধা রয়েছে!’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘সিপিএম গোড়া থেকে এই লড়াই করেছে। একেবারে বিল পেশ হওয়া থেকে সংসদের ভিতরে-বাইরে চলেছে লড়াই। সংসদে এই বিলে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই সময়ে এ রাজ্যের সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। যে যে আশঙ্কা তিনি জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেগুলিই স্বীকৃত হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, অধুনা প্রয়াত অরুণ জেটলি এই সংক্রান্ত বিল পেশ করেছিলেন। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যসভায় তখন গরিষ্ঠতা ছিল না বিজেপির। রাজ্যসভা যাতে আটকাতে না পারে, তার জন্য নির্বাচনী বন্ডের বিলকে ‘অর্থবিল’ বলে পেশ করেছিল বিজেপি সরকার। ইয়েচুরির নেতৃত্বে তারও বিরোধিতা হয়েছিল।

দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি এখন বলছেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্নীতিকে বৈধতা দিতে চাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি এখন জনতার আদালতে। যাঁরা স্বাধীন ভারতে এই রকম দুর্নীতির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন, ভোটদাতাদের অবশ্যই তাঁদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’’ বন্ডের তথ্য আড়াল করার জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের (এসবিআই) চেষ্টার প্রসঙ্গ এনে তাঁর আরও দাবি, ‘‘ইচ্ছাকৃত মিথ্যা কথা বলার জন্য এসবিআই-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই একই ব্যবস্থা নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও। কারণ, এই ব্যাঙ্কের মালিকানা রয়েছে সরকারের হাতেই।’’

তোপের মুখে পড়ে বিজেপি ও তৃণমূল অবশ্য সিপিএমকে পাল্টা নিশানা করতে চাইছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘মাত্র একটা রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে সিপিএমের এত সম্পত্তি কী ভাবে, তার কোনও ব্যাখ্যা আছে?’’ তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘কৌটো নেড়ে যে দল চলে না, মহম্মদ সেলিমেরা ভালই জানেন। রাজ্যে শূন্য হয়ে গিয়েছেন, লোকসভা ভোটে আবার শূন্য হবেন, সেটা বুঝেই এ সব নিয়ে হইচই করছেন।’’

সিপিএমের আবার পাল্টা দাবি, বন্ডের টাকার কোনও ব্যাখ্যা দিতে না পেরে বিজেপি ও তৃণমূল এই কটাক্ষ করছে। বন্ডে টাকা দেওয়া সংস্থার তালিকা দেখিয়ে সিপিএমের অভিযোগ, বিজেপির নির্বাচনী বন্ডে ওষুধ সংস্থার টাকা ঢুকেছে। তার পরে সরকারি দাম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শিথিল হয়েছে, ওষুধের বাড়তি দাম এখন দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একই ভাবে বন্ডে বিদ্যুৎ সংস্থার টাকা রাজ্যের শাসক দলের তহবিলে যাওয়ার পরে বিদ্যুতের বাড়তি মাসুল দিচ্ছেন এই শহরের মানুষ। সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই বন্ড ব্যবস্থা বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই অসাংবিধানিক ব্যবস্থায় পাওয়া টাকা বিজেপি, তৃণমূল-সহ সংশ্লিষ্ট দলগুলির ফেরত দেওয়া উচিত। ফেরত যখন দেয়নি, সেই টাকা যাতে নির্বাচনে কাজে লাগানো না হয়, তা দেখা উচিত নির্বাচন কমিশনের।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Electoral Bonds Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE