বাঁ দিক থেকে, মহুয়া মৈত্র, শুভেন্দু অধিকারী এবং অমৃতা রায়। —ফাইল চিত্র।
আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের বর্তমান কুলবধূ অমৃতা রায়। বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে পদ্মশিবিরে যোগ দিলেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের বধূকেই প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। অমৃতার বিজেপিতে যোগদানে সেই জল্পনাই আরও জলবাতাস পেল বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার রাজবাড়িতে যাওয়ার আগে করিমপুরের সভা থেকে মহুয়াকে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। মঙ্গলবারই মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগে তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে লোকপাল। তা নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগরের যিনি আছেন, তিনি তো.... বাপরে বাপ! তিনি তো পাসওয়ার্ড বাইরে পাচার করে দিয়েছেন। ভ্যানিটি ব্যাগ ঘুষ হিসাবে নেয়। আমি জীবনে কোনও দিন শুনিনি। দেখেছেন তো, লোকপাল কাল কী করেছে? সিবিআইকে দিয়ে দিয়েছে। করিমপুরের বিধায়ক ছিলেন না? ব্যাগ গুছান তাড়াতাড়ি।’’
সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সূত্রে কেন্দ্রের তরফ থেকে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে সংসদে একাধিক বার সরব হয়েছিলেন মহুয়া। সেই আদানি গোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ওঠে মহুয়ার বিরুদ্ধে। সেই সব অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। তার কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী করা হয়। আসন্ন লোকসভায় তাঁকে কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থীও করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শুভেন্দুর আক্রমণ নিয়ে অবশ্য বিশেষ কিছু বলতে চাননি মহুয়া। তিনি শুধু বলেন, ‘‘কোথাকার কে এসে আমার সম্পর্কে কী বলল, তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় আমার নেই। আইনি বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
করিমপুরের সভা শেষে শুভেন্দু সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর যান। দলীয় সূত্রে খবর, রাজবাড়িতে অমৃতার সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। পরে কৃষ্ণনগরের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন রাজবধূ। শুভেন্দুর হাত থেকে পদ্মশিবিরের পতাকাও নিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত বিভিন্ন বিধানসভায় এলাকা থেকে অন্তত ৭০ জন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি দলীয় সূত্রের।
১০ দিন আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সিপিএমও প্রাক্তন বিধায়ক এস এম সাদিকে প্রার্থী করে কৃষ্ণনগরে প্রচারে নেমে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়ায় বিজেপি কর্মীরা কিঞ্চিৎ হতোদ্যম! বিজেপি সূত্রে দাবি, অমৃতাকে প্রার্থী করার বিষয়ে জেলা নেতৃত্বই প্রথম আগ্রহ দেখায়। সেই মতো দলের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়। বেশ কয়েক দফা কথাবার্তার পর প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন রাজবধূ। দলীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতেই অমৃতার সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়ে যায়। এর পরেই সোমবার অমৃতা কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। বিজেপি প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা তিনিও ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকারও করেছেন বলে সূত্রের দাবি। যদিও সবটাই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের হাতে বলে জানিয়েছে বিজেপির সূত্র। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘অমৃতা রায়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে ঠিকই তবে শেষ সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নেবেন। আমরাও চূড়ান্ত নাম জানার জন্য প্রতীক্ষায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy