Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

সামনে অধীর-সেলিম, রাস্তায় নেমেছে জোট

বাংলায় ২০১৬ ও ২০২১, দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের। লোকসভা ভোটে সমঝোতা এই প্রথম। রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা সেলিম ও অধীর পাশাপাশি দুই কেন্দ্রে প্রার্থী।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

 সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২০
Share: Save:

টানাপড়েন ছিল পুরুলিয়ায়। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না মেনে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক সেখানে আলাদা লড়ছে। সেই পুরুলিয়াতেই কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যৌথ মিছিলে রাস্তা ভেসেছে জনস্রোতে! মুর্শিদাবাদ জেলার যে ডোমকলে এক কালে সিপিএম ও কংগ্রেসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হত, সেই এলাকারই জনকল্যাণ ময়দানে ভিড়ে ঠাসা সমাবেশে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ‘নামব না, নামব না’ করেও দমদমে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর প্রচারে দলের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের সঙ্গে দেখা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহরাঞ্চল) কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদারকেও। সিপিএমের তরফে সহযোগিতার একই রকম অভিজ্ঞতা সদ্য ভোট হয়ে যাওয়া রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রাম্‌জেরও (ভিক্টর)।

কয়েকটি ঘটনা উদাহরণ মাত্র। তবে বিচ্ছিন্ন নয়। রাজ্যে এ বার লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট আগের চেয়ে বেশি তৃণমূল স্তরে পৌঁছতে পারছে বলে দু’দলের কাছেই রিপোর্ট আসছে। দু’দলের নেতৃত্বেরই বক্তব্য, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মেরুকরণের রাজনীতির দাপটে তৃতীয় পক্ষকে বেশ কিছু দিন ধরেই কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়েছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে এ বার সিপিএম ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টা লড়াই দিতে অনেক বেশি মরিয়া। তারই পাশাপাশি, সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প শুধুই বিজেপি— এই ধারণা জনমানসে কিছুটা হলেও ভাঙতে শুরু করেছে বলে জোট-প্রার্থীদের প্রচারে সাড়া মিলছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশ্য বাম ও কংগ্রেসের বোঝাপড়াকে ‘জোট’ বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে আসন সমঝোতা। তবে দু’দলেরই নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে ‘জোট’ই চলছে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

বাংলায় ২০১৬ ও ২০২১, দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের। লোকসভা ভোটে সমঝোতা এই প্রথম। রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা সেলিম ও অধীর পাশাপাশি দুই কেন্দ্রে প্রার্থী। বাম ও কংগ্রেস শিবিরের ‘বিক্ষুব্ধ’ কিছু অংশের দাবি, দুই নেতা নিজেদের স্বার্থ মাথায় রেখেই জোট করেছেন! তবে ভোট-পর্ব যত গড়াচ্ছে, তত নানা জেলা থেকে আসা রিপোর্ট বলছে, দু’দলের দুই সেনাপতি ময়দানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ায় এ বার জোটে বেশি ‘আন্তরিকতা’ চোখে পড়ছে। ডোমকলে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘দরকার হলে জান দিয়ে দেবেন তবু সেলিম ভাইকে হারতে দেবেন না!’’ এমন বার্তা আগে শোনা যায়নি। প্রদেশ সভাপতির মতে, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের স্বার্থে সব রকম ভাবে চাইবে ভোটটা যাতে তাদের দু’পক্ষের মধ্যেই ভাগ হয়। আমরা দুর্নীতির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করতে এই দু’দলের বিরুদ্ধে জোট করেছি। সেটা শুধু দেখানোর বা নাটক করার জন্য নয়! সর্বত্রই কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা এই জোটের পক্ষে কাজ করছেন।’’

মুর্শিদাবাদ চষে প্রচারের ফাঁকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমেরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে গেলে বিজেপিকে দরকার, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে এই মোহ কাটতে শুরু করেছে। কেন্দ্রে সরকার চালিয়ে বিজেপি কী করেছে এবং এর পরে কী করতে পারে, মানুষ বুঝতে পারছেন। সেই কারণেই গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কথা তাঁরা শুনছেন।’’ সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের মতে, বিজেপি-আরএসএস যে ভাবে মেরুকরণ চায়, বাংলায় সেই পরিস্থিতি এখন নেই। এবং এই সমীকরণের নিরিখেই সিপিএম নেতারা দাবি করছেন, বহরমপুর থেকে ফের কংগ্রেসের অধীর জিতে আসবেন। সেলিমের কথায়, ‘‘অধীর চৌধুরীর আলাদা প্রভাব আছে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। আর আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ওরা (বিজেপি, কখনও তৃণমূল) যত ধর্ম-জাত-পাতের কথা বলবে, আমরা তত বেশি করে ভাত-কাজ-শিক্ষার কথা বলব!’’

কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে সিপিএম ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিল। পুরুলিয়ায়।

কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে সিপিএম ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিল। পুরুলিয়ায়। — নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র, যুব, মহিলা-সহ সিপিএমের সব গণ-সংগঠনই এ বারের ভোটে প্রবল ভাবে সক্রিয়। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে সিপিএমকে পাশে পেয়েছিলাম। কিন্তু এই রকম আত্মিক ভাবে মিশে যাওয়া আগে দেখিনি। আসনের হিসেব ধরছি না, আমাদের ভোট নিশ্চিত ভাবে বাড়বে। সেই ভোটকে পুঁজি করে ২০২৬ সালে বিধানসভায় লড়তে হবে।’’ কলকাতা উত্তরের কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের সমর্থনে রবিবারই পটুয়াটোলার সিপিএম কার্যালয় থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিট পোস্ট অফিস পর্যন্ত রোড-শো’য়ে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। প্রচারের ফাঁকেই তাঁর কাছে অমিতাভেরা অনুরোধ করেছেন, লোকসভার ফল যা-ই হোক, বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা রেখেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত যেন নিয়ে রাখা হয়।

জোটের সমীকরণ বা প্রচারে সাড়া ভোট-বাক্সে কত দূর পৌঁছবে, এখনও অজানা। তবে অধীর-সেলিমদের উদ্যোগ চিন্তা বাড়াছে বিজেপি ও তৃণমূল শিবিরের!

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 CPM Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE