E-Paper

ছেলে, স্বামীর কাজের আশায় ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন শ্যামলী-সুনয়নীরা

ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলী বিশ্বাসের স্বামী সুকুমার। পেশায় ভাগচাষি সুকুমার গ্রামে হরিনাম সংকীর্তনের দলেও ছিলেন।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৯:১৬
কাজ পাওয়ার আশায়।

কাজ পাওয়ার আশায়। নিজস্ব চিত্র ।

একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল গ্রামের বহু মানুষের প্রাণ। তারপরে আড়াই বছর ঘুরতে চলল। লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। রাজনৈতিক দলের পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্সে এলাকা ভরে গিয়েছে। নেতা, কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন করছেন। তবে স্বজনহারা পরিবারগুলিতে এখনও রয়ে গিয়েছে হাহাকার, যন্ত্রণা। তাঁদের অভিযোগ, ওই সময় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কাজের আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজ জোটেনি।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বাগদার পারমাদনের বাসিন্দা শিবানী মুহুরির মৃত্যু হয়। রাতে দেহ নিয়ে নবদ্বীপে সৎকারের জন্য যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী কয়েক জন। নদিয়ার হাঁসখালির ফুলবাড়ি মাঠের কাছে রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে শববাহী গাড়িটি। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১০ জন-সহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পারমাদন ও সংলগ্ন এলাকারই ১৪ জন বাসিন্দা মারা যান। অনেকে জখম হয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলী বিশ্বাসের স্বামী সুকুমার। পেশায় ভাগচাষি সুকুমার গ্রামে হরিনাম সংকীর্তনের দলেও ছিলেন। এলাকায় কেউ মারা গেলে নামসংকীর্তন করতে শ্মশানযাত্রায় যেতেন। তিনিও আর ফেরেননি। শ্যামলীর দুই মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন ধার-দেনা করে। সুকুমারই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে শ্যামলীর যাবতীয় আনন্দ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলে কলেজের পড়া শেষ করেছে। এখন বাবার ভাগে নেওয়া জমিতে চাষবাস করেন। শ্যামলীর বাড়ির অবস্থা জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে ভাঙা টালি ভেঙে ঘর জলে ভেসে যায়। ছেঁড়া একটি ত্রিপল টালির উপরে দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা চলে।

শ্যামলী বলেন, ‘‘সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ছেলের কাজের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু কাজ হয়নি। স্বামীর মৃত্যুর পরে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করেছিলাম। বাকি টাকা দিয়ে এত দিন কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলাম। ওই টাকাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভোট দিতে যাব, যদি ছেলের কোনও কাজ হয় এই আশায়।’’

সমীর বলেন, “বাবা যখন চাষ করতেন, আমি বাবার জন্য খাবার নিয়ে যেতাম মাঠে। পটলে ফুল ছোঁয়ানো ছাড়া কোনও কাজ বাবা শেখাননি। চাষের কাজ শেখাতে চাইতেন না।” পরিস্থিতির চাপে অবশ্য সমীরকে বাবার সেই কাজই বেছে নিতে হয়েছে।

দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন গোপাল সরকার। বাড়িতে আছেন স্ত্রী, ছেলে-বৌমা। গোপালের ছেলে গৌরাঙ্গ জমি ভাগে নিয়ে চাষবাস করেন। গৌরাঙ্গের স্ত্রী সুনয়নী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় পরে নেতা-মন্ত্রীদের ভিড় জমে গিয়েছিল। সকলেই কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কেউ কথা রাখেননি। স্বামীর কাজের খুবই প্রয়োজন। আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ভোট দিতে যাব, যদি স্বামীর একটা কাজের ব্যবস্থা হয়।’’

ওই সময়ে গ্রামে গিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। ভোটের প্রচারে উঠে আসছে সে সব প্রসঙ্গ। তৃণমূল নেতা সঞ্জয় নন্দী (টিঙ্কু) বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর কাজের আশ্বাস দিয়েছিলেন মৃত ও জখমের পরিবারের জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি দেখা করতে গিয়েছিলেন সাংসদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ভাবে দেখা করেননি উনি।’’

বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘শান্তনু ঠাকুর দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারের সদস্যদের এমস, পেট্রাপোল বন্দরে চাকরি দিতে পারতেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা টাকা ছাড়া কাউকে চাকরি দেন না। মৃত পরিবারের সদস্যেরা টাকা দিতে পারেননি বলে চাকরি হয়নি।’’

বিজেপি পক্ষ থেকে পাল্টা প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে, দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা। কয়েক জনের কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা। বিজেপির প্রশ্ন, তৃণমূল কেন কাজের ব্যবস্থা করেনি।

শান্তনু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের তিন জন সদস্যকে কল্যাণী এমস-এ চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। দু’জন মেয়ে এবং এক জন ছেলে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা চাকরি করেননি। তৃণমূল সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করছে। যাঁদের চাকরি দিয়েছিলাম, তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’রাজনৈতিক এই ঘূর্ণাবর্তে পড়ে ভাগ্য ফেরে না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Bagda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy