E-Paper

জল-সঙ্কটে তৃণমূল দায়ী, খোঁচা মোদীর

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জনসভা থেকে আদিবাসীদেরও কাছে টানার বার্তা দেন মোদী।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৮:৫৭
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার পুরুলিয়ার গেঙ্গাড়ার সভামঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাল্টা রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উন্নয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন। পুরুলিয়ার জলকষ্ট না মেটার জন্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করলেন তিনি।তবে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জনসভা থেকে আদিবাসীদেরও কাছে টানার বার্তা দেন মোদী।

পুরুলিয়ায় যে কোনও নির্বাচনেই জল-সঙ্কটের সমস্যাকে হাতিয়ার করে শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণায় বিরোধীরা। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি জানি পুরুলিয়ার লোকদের কি জলকষ্ট। এতে গরিব, দলিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, আদিবাসীদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।’’ তিনি জানান, দেশের প্রতিটি ঘরে নলবাহিত জল পৌঁছনোই তাঁর লক্ষ্য। গত পাঁচ বছরে ১২ কোটির বেশি ঘরে নলবাহিত জল পৌঁছেছে।

এরপরেই মোদী অভিযোগ করেন, ‘‘পুরুলিয়ায় তৃণমূল জলপ্রকল্পের কাজকে এগোতে দিচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশে প্রতি দিন ৩০ হাজার ঘরে জলের সংযোগ দেওয়া হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক মাত্র পাঁচ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়। কারণ তৃণমূল কাজে বাধা দেয়।’’

মোদী এই কাজে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজিরও অভিযোগ তোলেন। পরে খড়্গপুরের সভায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘পুরুলিয়ায় আমাদের এক সঙ্গী জানান, সেখানে জলজীবন মিশন প্রকল্পের কাজে বাধা আসছে। দু-তিন হাজার টাকা তোলা চাওয়া হচ্ছে। না দিলে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটাই তৃণমূলের মা মাটি মানুষের সরকার।”

তৃণমূলের পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘জেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কোথাও কোনও অভিযোগ নেই। নির্বাচনের মুখে পরিকল্পিত ভাবে পুরুলিয়াবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।” তবে জনস্বাস্থ্য ও কারগরি দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া জেলার ৩১ শতাংশ বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছে, আদিবাসী কুড়মি নেতা অজিত মাহাতো নিজেই প্রার্থী হওয়ায় ওই সম্প্রদায়ের ভোট এ বার বড় দলগুলি আগের থেকে কম পেতে পারে। সে কারণে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে থাকা কমবেশি ১৮ শতাংশ আদিবাসী
সম্প্রদায়ের ভোট তাদের পাখির চোখ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে জানান, বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করলে আদিবাসীদের জল, জঙ্গল, জমির অধিকার সুরক্ষিত থাকবে না। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচরণের অধিকার হারাবে আদিবাসী সম্প্রদায়।

এ দিন মোদী আদিবাসী, গরীব, দলিতদের প্রতি বার্তা দিয়ে বলেন, “যাঁদের আগে কেউ পাত্তা দিত না, মোদী আজ তাঁদের পুজো করে। তাঁরা যুগের পর যুগ বঞ্চিত। মোদী তাঁদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গরিব, দলিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় হোক বা আদিবাসী— মোদী সবার কাছে প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। কোনও ভেদাভেদ করা হয়নি।”

এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে মঞ্চে কুড়মি সমাজের ‘হলুদ রঙের’ উত্তরীয় দিয়ে বরণ করেন পুরুলিয়ার বিজেপির প্রার্থী জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করেই বিজেপির ভোট কাটতে এই নির্বাচনে কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো ভোটে লড়ছেন বলে পুরুলিয়ায় বারবার দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন কুড়মি সম্প্রদায় প্রসঙ্গে নীরবই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে পুরুলিয়ায় শিল্পায়নে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা উদ্যোগী মোদী তা জানান। রঘুনাথপুরের ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘১১ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে অনেকের রোজগার তৈরি হবে।”

সিপিএমের কটাক্ষ, রাজ্যের বাম আমলেই তৎকালীন ইউপিএ সরকার আরটিপিএসের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাস করে। প্রধানমন্ত্রী ভোটের স্বার্থে একই প্রকল্পের দ্বিতীয়বার শিলান্যাস করেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 purulia Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy