প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
পরশু, মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক সভা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শহরে কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠে এই সভা হবে। সব ঠিক থাকলে মেদিনীপুরের ওই সভা থেকে এক হাজারেরও বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সাড়ে তিনশোর বেশি প্রকল্পের উদ্বোধনও করতে
পারেন তিনি।
জেলার এক অতিরিক্ত জেলাশাসক বলছেন, ‘‘শিলান্যাস করা যেতে পারে, উদ্বোধন করা যেতে পারে, এমন বেশ কিছু প্রকল্পের নাম সহ একটি তালিকা জেলায় তৈরি করা হয়েছে ঠিকই। সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (রাজ্যে) কাছে পাঠানোও হয়েছে। তবে তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত নয়। শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।’’ সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে মেদিনীপুরের ওই সভা থেকে ৩৭৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পগুলি রূপায়ণে খরচ হয়েছে সবমিলিয়ে ৩৫৫ কোটি ১৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে, ১,১৯৩টি প্রকল্পের শিলান্যাস করতে পারেন মমতা। প্রকল্পগুলি রূপায়ণে খরচ হবে সবমিলিয়ে ১,৯২১ কোটি ৮০ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা।
প্রশাসনিক সভার প্রস্তুতি সারা হচ্ছে। সভা থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান হবে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সব ঠিক থাকলে সভামঞ্চে ডেকে ৫৮ জন উপভোক্তাকে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হতে পারে। সবমিলিয়ে ৩০টিরও বেশি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এরমধ্যে যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী প্রভৃতি প্রকল্প রয়েছে, তেমন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজশ্রী, সবুজসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডও রয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে জেলায় যে সব উপভোক্তা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে প্রায় ৭০ হাজার জনকে এই সভায় হাজির করানো হবে।
একাধিক মহলের অনুমান, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখেই এই পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি। অনেকে মনে করাচ্ছেন, গত বছরের গোড়ায়ও মেদিনীপুরে প্রশাসনিক সভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বার সভা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও ৪৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান করে মমতা শুনিয়েছিলেন, ‘‘আজকেই এ জেলার ৪ লক্ষ লোকের কাছে সরাসরি সরকারি পরিষেবা পৌঁছেছে।’’ তবে এর আগে শেষ কোন সভায় হাজার প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।
মঙ্গলবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে থাকবেন রাজ্য প্রশাসন, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। থাকবেন মন্ত্রী, বিধায়কেরাও। জানা যাচ্ছে, একগুচ্ছ রাস্তার (পথশ্রী), একগুচ্ছ জল সরবরাহ প্রকল্পের (জলস্বপ্ন) শিলান্যাস করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এমকেডিএ-র ৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস হতে পারে। বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের একটি প্রকল্পের শিলান্যাস হতে পারে। প্রকল্পটি হল, ঘাটালের আলমগঞ্জে পাম্প হাউস নির্মাণ। অন্যদিকে, কয়েকটি স্কুল হস্টেলের উদ্বোধন হতে পারে। মেদিনীপুরে ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ তৈরি করেছে এমকেডিএ। এটির উদ্বোধন হতে পারে। দাঁতনের এসিজেএম কোর্ট ভবনের উদ্বোধন হতে পারে। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। সবংয়ের রুইনানের মাদুর হাবের, পিংলার ডাংরার সেতুর (কপালেশ্বরী নদীর উপর) উদ্বোধন হতে পারে। খড়্গপুর-১ এর দেওয়ানমারো, চন্দ্রকোনা- ১ এর খরকপুর, চন্দ্রকোনা-২ এর সীতানগর প্রভৃতি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও উদ্বোধন হওয়ার কথা। একাধিক আদিবাসী সাংস্কৃতিক দলকে ধামসা-মাদল উপহার দেওয়ারও কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এসে সভা করেন। অনেক কিছু বলেন। অনেক প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু কী কাজ হয়, লোকে বুঝতে পারেন না!’’ তাঁর কথায়, ‘‘উনি বারবার দাবি করেন, জঙ্গলমহল হাসছে। অথচ, জঙ্গলমহলের লোকেরা বলছেন, তাঁদের উন্নতি কিছুই হয়নি। কিছুই পাননি তাঁরা।’’ জবাব দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায় বলেন, ‘‘আসলে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় সভা করলে বিজেপির লোকেরা ভয় পায়। ওরা ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে!’’ দীনেনের কথায়, ‘‘এলাকার মানুষেরা মুখিয়ে থাকেন, কখন মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। কারণ, মানুষ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলে তাঁদের কিছু পাওনা মেলে। প্রধানমন্ত্রী এলে তো কিছুই মেলে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy