Advertisement
E-Paper

বাংলার টাকা সত্যিই দিচ্ছে না কেন্দ্র? ব্যাখ্যা-সহ জবাব মোদীর, ধূপগুড়ির সমাবেশ থেকে আক্রমণ তৃণমূলকে

আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে। ভোটের প্রচারে আবাসে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: টুইটার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: টুইটার।

আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে। ভোটের প্রচারে আবাসে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তৃণমূল। তাদের দাবি, গত দু’টি অর্থবর্ষে আবাসের টাকাই পাঠায়নি কেন্দ্র। পাল্টা বিজেপি দাবি করছে যে, কেন্দ্র প্রকল্পের টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। এ নিয়ে টানাপড়েনের আবহে জলপাইগুড়ির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন, তিনি চান, প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারের হাতে না দিয়ে, সরাসরি প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জনতার টাকা কী ভাবে আমি তৃণমূলকে লুট করতে দেব?’’ মোদীর এই মন্তব্য থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তৃণমূলের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগকে প্রকারান্তরে মান্যতাই দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী? তিনি কি আদতে মেনেই নিলেন, কেন্দ্র প্রকল্পের টাকা রাজ্যকে দেয়নি?

গত মাসে লোকসভা ভোটঘোষণার আগে বঙ্গসফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিভিন্ন সভায় তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আবাস প্রকল্পের টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই টাকায় ‘দুর্নীতি’ হয়েছে। এর পরেই ১০ মার্চ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আবাস প্রকল্পে মোদীর দাবি খণ্ডন করে চিঠি দেখিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে আবাস প্রকল্পে একটি টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জও ছুড়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির মাঠে মুখোমুখি বিতর্কসভাতেও ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বিতর্কসভা হয়নি। তার পর থেকে আবাসে ‘বঞ্চনা’ নিয়ে আরও সুর চড়িয়েছে শাসকদল। গত সপ্তাহে জলপাইগুড়িতে ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যয়ের ঘটনাতেও আবাসে ‘বঞ্চনা’ নিয়ে মোদীকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা। রবিবার তার জবাব দিলেন মোদী।

ধূপগুড়ির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাকা বাড়ির জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। মোদীর বক্তব্য, টাকা সরাসরি প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকুক। কিন্তু তৃণমূল বলে, কেন্দ্রের টাকা আগে তাদের খাতে আসুক। এ বার আপনার বলুন (জনতার উদ্দেশে), জনতার টাকা কী ভাবে আমি তৃণমূলকে লুট করতে দেব?’’ মোদীর অভিযোগ, বাংলার প্রতি ঘরে কলে জল আনার জন্যও কেন্দ্র টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকাও সাধারণ মানুষের উপকারে লাগেনি। কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো যায়। কিন্তু বাংলার সরকার তা চালু করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। তৃণমূলকে বিঁধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের আমলে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রমুক্ত হয়েছেন। ১০ বছরে যা উন্নয়ন করেছি, সেটা শুধু ট্রেলার। গরিবদের কল্যাণের জন্য মোদীর যে প্রকল্প রয়েছে, তাতে ব্রেক লাগিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। বাংলায় চা-বাগানের হালও খারাপ। তৃণমূলের ছোট নেতারাও বড় বাংলোতে থাকেন। অথচ চা-বাগানের কর্মীদের মূল সুবিধাটুকু দিচ্ছেন না।’’

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘আবাসে বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন পুরুলিয়ার সভা থেকে। আবাসের উপভোক্তাদের সঙ্গে বিজেপির লোকেরা ফোনে যোগাযোগ করে ভোটের আগে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, ‘‘১১ লক্ষ বাড়ির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। বাড়ি দেওয়ার জন্য। ভোটের আগে কল সেন্টার থেকে সে সব বাড়িতে ফোন করছে। ফোন করে বলছে, ‘নতুন করে বিজেপিতে আবেদন করো, ঘর পাবে।’ আমি বলেছি, না বন্ধু, ভোট হলে ১১ লক্ষ মানুষের ঘর তৈরি করব। মাটির বাড়িতে যাঁরা পদ্ম আঁকছেন, তাঁদের বলি, ওটা পদ্ম নয়, গদ্য নয়, ভাঁওতা, জুলুমবাজি। আমরা চাই গরিবের ভালবাসা। আমরা চাই আদিবাসী, মাহাতোদের নিয়ে একসঙ্গে থাকতে।’’

লোকসভা ভোটে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলেই সাধারণ মানুষ প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন না বলে দাবি করে জনমানসে আলোড়ন তৈরি করতে চাইছে তারা। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘বঞ্চিত’দের কাছে স্পষ্ট করে বলতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের টাকা দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই তাঁদের মজুরি মিটিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রের উপর ভরসা না করে রাজ্যের ৫৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারকে রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ভাতে মারতে চেয়েছিল। বাঁচিয়েছেন মমতা। ‘১০০ দিনের বকেয়া মেটানো’কে সামনে রেখে ‘আবাসে বঞ্চনা’ নিয়ে সরব হয়েছে তারা।

গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ সালে ইন্দিরা আবাস যোজনা নামে ওই জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। পরে তার নাম পাল্টে হয় ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’। তাতে ন্যূনতম ২৫ বর্গমিটার আয়তনের মেঝেবিশিষ্ট পাকা বাড়ি উপভোক্তাকে দেওয়া হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এ রাজ্যের গরিব মানুষদের প্রাপ্য আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে না। বিজেপির দাবি, একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনা-সহ যাবতীয় কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চরম দুর্নীতি হয়েছে। রাজ্য ঠিক মতো হিসাব দিতে না পারায় টাকা আটকে গিয়েছে। এই আবহে তৃণমূল সূত্রে খবর, একশো দিনের কাজের মতো আবাস যোজনার উপভোক্তাদের বকেয়া টাকাও দিতে চায় রাজ্য সরকার। সব জেলার দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে নাকি এমনই বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রে দাবি, অভিষেকের আশ্বাস, যে ভাবে কেন্দ্র টাকা আটকে রাখা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার একশো দিনের কাজের কিছু টাকা দিয়েছে মানুষকে, যেমন ভাবে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দ্বিগুণ করা হয়েছে, সেই ভাবে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে থেকে রাজ্য সরকারই আবাস যোজনার টাকা দেবে। এই আবাস যোজনার টাকা উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে এ বার সরাসরি খোদ প্রধানমন্ত্রীই বার্তা দিলেন।

Narendra Modi Rally Lok Sabha Election 2024 Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy