সৌগত রায়। —ফাইল চিত্র।
দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি যে কোনও পুজো-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে দলের কর্মীদের পারিবারিক অনুষ্ঠান— কোথাওই তাঁর উপস্থিতিতে ছেদ পড়ে না। কিন্তু উন্নয়নের কাজ কতটা হয়? লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমে বিষয়টি নিয়ে দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়কে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ রক্ষায় সাংসদের জুরি মেলা ভার। কিন্তু কাজ কতটা করেছেন? চোখে তো পড়ে না।’’
যদিও সৌগতের দাবি, সর্বত্র যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর সংযোগ বেশি। দিল্লিতে লোকসভা অধিবেশনের দিনগুলি বাদ দিলে বাকি সময়ে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রেই সর্বদা দেখা যায় সাদা পাঞ্জাবি ও ধুতি পরা বর্ষীয়ান ওই নেতাকে। কিন্তু শুধু চোখে দেখতে পাওয়ার সঙ্গে কি উন্নয়নের আদৌ কোনও যোগ রয়েছে? অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আবহে সেই প্রশ্নই ছুড়ে দিচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন— কোনও কিছুতেই কার্যত দিশা দেখাতে পারেননি ওই সাংসদ।
যেমন, পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের বড় অংশ বলছেন, ‘‘উনি (সৌগত) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময়ে ২০০ কোটিরও বেশি টাকার জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু আজও পর্যাপ্ত জল মেলে না।’’ পরিস্রুত পানীয় জলের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার অভিযোগ তুলছেন দমদমের বিজেপি নেতা গৌতম সাহা মণ্ডলও। সৌগতের অবশ্য দাবি, শুধু পানিহাটি নয়, খড়দহ, নিউ ব্যারাকপুর, দমদম, দক্ষিণ ও উত্তর দমদমে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন জল প্রকল্প করেছেন। দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ২০০৯ সাল থেকে সাংসদ তিনি। সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘রেকর্ড বলছে, তিন বারের ওই সাংসদ লোকসভায় সব চেয়ে বেশি বক্তব্য রেখেছেন। সব চেয়ে বেশি প্রশ্ন এবং জ়িরো আওয়ারে সর্বাধিক আলোচনা করেছেন। কিন্তু দমদম লোকসভা কেন্দ্রে এত বছরে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প আনতে পারেননি।’’
প্রাক্তন ওই সিপিএম বিধায়কের আরও অভিযোগ, বরাহনগর, কামারহাটি, উত্তর দমদমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিস্তীর্ণ জমি পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যটন, কারিগরি শিক্ষার কলেজ বা অন্য কোনও প্রকল্পের প্রস্তাব এত দিনেও সাংসদ দেননি। সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমি এক বার সাংসদ হয়ে রাজ্যে অনেকগুলি জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের অনুমোদন করিয়েছিলাম। কিন্তু সৌগতবাবু ক’টা করেছেন, তা জানা নেই। আর মানুষ বলছে, উনি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছেন, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।’’ সৌগতের অবশ্য দাবি, ‘‘বললেই তো হবে না! কেন্দ্রে বিরোধী পক্ষে থেকে বড় প্রকল্প আনা দুষ্কর।’’
বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ভবিষ্যতের স্বার্থে নগরোন্নয়নের সুসংহত পরিকল্পনা দরকার। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রকল্প বার করে আনাটাই সাংসদের আসল চ্যালেঞ্জ। তবে ছোটখাটো নাগরিক সমস্যা মেটাতেও এই সাংসদ ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলে বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘‘খড়দহে বহু রাস্তা ভাঙা, কাঁচা নর্দমা রয়েছে। পানিহাটি পানীয় জল ও ভাগাড়ের সমস্যায় জেরবার। বরাহনগরে বহুজাতিক সংস্থার আবাসনের পিছনের এলাকা বেহাল। আসলে মানুষ ওঁকেই সর্বত্র দেখতে ও প্রতিশ্রুতি শুনতে পান। কিন্তু উন্নয়ন কেউ দেখতে পান না।’’
যদিও শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের অনেকেরই দাবি, যে কোনও প্রকল্পের জন্য টাকা চাইলেই তা সাংসদ তহবিল থেকে মেলে। পাল্টা বিরোধীরা বলছেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স, শববাহী গাড়ি, সুইমিং পুল, বাতিস্তম্ভের মতো প্রকল্পই কি সাংসদের একমাত্র কাজ?’’ যদিও সৌগতের দাবি, ‘‘করোনার জন্য কিছুটা কম হলেও প্রাপ্ত ১৭ কোটির পুরোটাই খরচ করেছি। তবে ওই টাকায় বড় কিছু হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy