Advertisement
E-Paper

কীর্তি-শত্রুঘ্ন-ইউসুফ সামনে রেখে ‘বহিরাগত’ অস্ত্রেই তৃণমূলকে বিঁধছে বিরোধীরা, যদিও সেই ‘দৃষ্টান্ত’ সব দলেই

‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধীরা তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূলকে বিঁধতে চাইছে। তবে ইতিহাস বলছে, সিপিএম, বিজেপিও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার বিভিন্ন আসনে রাজ্যের বাইরের মানুষকে প্রার্থী করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৮
Outsider controversy in Bengal politics is age old

(বাঁ দিক থেকে) কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা এবং ইউসুফ পাঠান। —ফাইল চিত্র।

রবিবারের ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় স্পষ্ট হয় গিয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভার মতো এ বারের লোকসভা ভোটেও তৃণমূল হাঁটবে ‘বাংলা এবং বাঙালি’ লাইনে। এক দিকে তুলে ধরা হবে বাঙালি জাত্যাভিমান, অন্যদিকে বিজেপিকে নিশানা করা হবে ‘বহিরাগত’, ‘জমিদার’ বিবিধ শব্দবন্ধে। র‌্যাম্পে হাঁটতে হাঁটতে রবিবারেই অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘এই বারের রায়, বহিরাগতদের বিদায়!’’ কিন্তু সেই ব্রিগেডেই শত্রুঘ্ন সিনহা, কীর্তি আজাদ এবং ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করার পরে তৃণমূলের অন্দরেই এই আলোচনা শুরু হয়েছে যে, ‘বহিরাগত’ শব্দটা ব্যুমেরাং হল না তো?

সোমবার তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিয়েছেন যে, “যে কথা এত দিন রাজু বিস্তা, যশোবন্ত সিংহদের লক্ষ্য করে আমরা বলতাম, এ বার সেটাই বিজেপি বলবে।” তাঁর এমন বক্তব্য যে, “দল যে লাইনে স্লোগান দিচ্ছে, তার সঙ্গে এই তিন প্রার্থীর চয়নে কোথাও একটা স্ববিরোধিতা রয়েছে। সে কারণেই হয়তো ব্রিগেডে কীর্তি আজাদকে তাঁর বক্তৃতায় আগাম বলে রাখতে হয়েছে, তিনি ছ’মাসে বাংলা শিখে নেবেন।” যদিও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ব্যাখ্যা, “বহিরাগত শব্দটা ভৌগোলিক থেকে দেখলে হবে না। তাৎপর্যের দিক থেকে দেখতে হবে। যাঁরা বাংলায় ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখে শ্রমিকদের ভাতে মারতে চান, যাঁরা বাংলার মনীষীদের অপমান করেন, তাঁরা বহিরাগত। বাংলার বাইরের বহু মানুষ আছেন, যাঁরা বাংলাকে ভালবাসেন। বহিরাগতটা রূপকমাত্র।”

কুণাল ব্যাখ্যা দিলেও তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা এ নিয়ে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন। ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই মানছেন, ‘বহিরাগত’ শব্দ নিয়ে তাঁদের বিড়ম্বিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। বিশেষত বাঙালি মহল্লায় এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে। যেমন প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তিকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। দুর্গাপুরের বেনাচিতি এলাকার এক দাপুটে তৃণমূল নেতা সোমবার বলেন, “দল বলেছে যখন নামতে হবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে প্রার্থীর নাম শুনে গা গরম হয়নি।” তবে তৃণমূলের বৃহদাংশের বক্তব্য, কীর্তি ওই আসন ‘বার’ করে নেবেন। দলের এক বিদায়ী সাংসদের কথায়, ‘‘ওই আসনে অবাঙালি ভোটার রয়েছেন। কীর্তি এর আগে একাধিক বার লোকসভার ভোট লড়ে জিতেছেন। তাঁর নামের একটা ওজনও আছে। তা ছাড়া, ওই আসনে গতবারও তো একজন অবাঙালিই (বিজেপির সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া) জিতেছিলেন।’’

বিজেপির কীর্তি-অস্ত্রের ‘মোকাবিলা’ করতে আসানসোলের প্রস্তাবিত প্রার্থী ভোজপুরী ছবির গায়ক-নায়ক পবন কুমারের কথা বলছে তৃণমূল। তিনিও ‘বহিরাগত’ তো বটেই। যদিও নাম ঘোষণার পরদিনই তিনি নিজেই তৃণমূলের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেন।

তবে রবিবারের ব্রিগেডে প্রকাশিত তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় ‘বহিরাগত’ নিয়ে বিরোধীরা বিঁধতে দেরি করেনি। রবিবার প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পরেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে আক্রমণাত্মক পোস্ট করেচিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার বিজেপি নেতা তথা মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের হাতে কিছু নেই বলে বাইরে থেকে লোক ধরে আনছে! যাঁরা নিজেদের রাজ্যে রিজেক্টেড (প্রত্যাখ্যাত), তাঁরা এখানে প্রোজেক্টেড (তুলে ধরা) হচ্ছেন। বাংলায় কি লোক নেই? কথায় কথায় বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলবে আর বিহার-গুজরাত থেকে লোক ধরে নিয়ে আসবে?” সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “তৃণমূলের এখন আইএএস, আইপিএস, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকার কোটা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই এ বার বাইরের রাজ্য থেকে লোক আনতে হচ্ছে। বিধানসভায় ওরা স্লোগান দিয়েছিল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। এ বার দেখাল, তৃণমূল বাংলার ছেলেদের চায় না। এখানকার ছেলেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে কাজ করতে যাবেন, আর বাইরের রাজ্যের বিজেপির থেকে লোক এনে বাংলার সাংসদ করবে।”

সন্দেহ নেই, বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধীরা তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূলকে বিঁধতে চাইছে। তবে বাংলার ইতিহাস বলছে, সিপিএম, বিজেপি-ও সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন আসনে রাজ্যের বাইরের মানুষকে (বহিরাগত) প্রার্থী করেছে। তাঁদের কেউ জিতেছেন, কেউ হেরেছেন। ২০০৯ এবং ২০১৯ সালে দার্জিলিং থেকে বিজেপি সাংসদ হয়েছিলেন যশোবন্ত এবং রাজু। তাঁরা কেউই বাংলার নন। যশোবন্ত রাজস্থানের মানুষ। রাজু মণিপুরের। আবার ২০১৪ সালে সুহাসিনী আলিকে ব্যারাকপুরে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। সুহাসিনী এক সময়ে কানপুরের সাংসদ ছিলেন। তিনি প্রবাদপ্রতিম স্বাধীনতা সংগ্রামী লক্ষ্মী সায়গলের কন্যা। সেই ভোটে দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন সুহাসিনী। উল্লেখ্য, দীনেশও বাংলা নয়, গুজরাতের মানুষ। রাজ্যসভার ক্ষেত্রেও এমন নজির রাজ্যে রাজ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “প্রশ্নটা দ্বিচারিতার। এক দিকে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে, যারা বাংলা পড়তে পারে না, লিখতে পারে না, ভাষা বোঝে না, তারা বহিরাগত। তার আধ ঘণ্টার মধ্যে এমন লোকেদের প্রার্থী করা হচ্ছে, যাঁরা তৃণমূলের সূচকেই বহিরাগত।” সুজনের আরও বক্তব্য, “এঁদের কারও সঙ্গে সুহাসিনীর তুলনা চলে না। কারণ, রাজনৈতিক কারণে তাঁর সঙ্গে বাংলার যোগ ছিল। তাঁর মায়ের সঙ্গেও গভীর যোগ ছিল বাংলার।”

TMC Lok Sabha Election 2024 Outsiders Election Candidates Yusuf Pathan kirti azad Shatrughan Sinha tmc candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy