কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন সাংসদ সঞ্জয় নিরুপমের মুখে শোনা গেল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান! সেই সঙ্গে মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বললেন, ‘‘কংগ্রেস এখন একটি ভেঙে পড়া রাজনৈতিক দল।’’
নিরুপম বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘‘কংগ্রেসে এখন পাঁচটি ক্ষমতার কেন্দ্র রয়েছে— প্রথম সনিয়া গান্ধী, দ্বিতীয় রাহুল গান্ধী, তৃতীয় প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, চতুর্থ কংগ্রেস সভাপতি (মল্লিকার্জুন খড়্গে) এবং পঞ্চম কেসি বেনুগোপাল।’’ সনিয়া-রাহুল-খড়্গের দলকে এখন ‘সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল বলা যায় না’ দাবি করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের অবস্থা এখন বিহারের কারখানাগুলির মতো।’’
আরও পড়ুন:
দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বুধবার রাতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব ছ’বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছেন তাঁকে। যদিও নিরুপম বৃহস্পতিবার সকালে দাবি করেন, এআইসিসি-র তরফে বহিষ্কারের ঘোষণার আগেই তিনি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে চিঠি পাঠিয়ে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এর পর সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর স্লোগানের পর মরাঠা রাজনীতিতে জল্পনা, তিনি এ বার বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, নিরুপমকে বুধবার সকালে লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের ‘তারকা প্রচারক’ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল কংগ্রেস। প্রকাশ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের সমালোচনা করায় তাঁকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও এআইসিসির একটি সূত্র সে সময় জানিয়েছিল। শেষমেশ রাতে সেই পদক্ষেপই করেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে মুম্বইয়ে আসন সমঝোতা নিয়ে উদ্ধবের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা (ইউবিটি)-র আচরণে ক্ষুব্ধ নিরুপম গত সপ্তাহে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের জল্পনা দানা বেঁধেছিল।
কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুম্বইয়ের একটি আসন থেকে নিরুপম লড়তে চাইলে তাতে উদ্ধব-শিবির আপত্তি জানিয়েছিল। তা নিয়েই ক্রুদ্ধ হন তিনি। নিরুপম গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের বিরুদ্ধে খাদ্য দুর্নীতিরও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। একদা প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের ঘনিষ্ঠ নিরুপম পরবর্তী সময়ে শিবসেনা ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। প্রথমে রাজ্যসভা এবং ২০০৯ সালে মুম্বই উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদও হয়েছিলেন।
২০১৪-য় ওই কেন্দ্রে বিজেপির গোপাল শেট্টির কাছে হেরে যান তিনি। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে মুম্বই উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রে লড়ে নিরুপম পরাস্ত হয়েছিলেন শিবসেনার গজানন কীরটিকরের কাছে। এর পরে ওই বছরের শেষ পর্বে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের পরে কংগ্রেস এবং এনসিপি উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়ে ‘মহাবিকাশ অঘাড়ী’ জোটের সরকার গড়ার সময় নিরুপম বলেছিলেন, ‘‘এই সর্বনাশা সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে কংগ্রেসের পক্ষে ক্ষতিকারক হবে।’’ মুম্বইয়ে অ-মরাঠি হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর নেতা নিরুপম বিজেপিতে যোগ দিলে লোকসভা ভোটে ‘পদ্ম’ শিবিরের বাড়তি সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।