Advertisement
Back to
Tarader Katha

তারাদের কথা: জুন মালিয়া

Star Candidate of 2024 Lok Sabha Vote 2024: June Malia
শোভন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ২১:০২
Share: Save:
Star Candidate of 2024 Lok Sabha Vote 2024: June Malia

অমৃতকাল

জুনের ভোট ২৫ মে। ৬ মে ছিল মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। সাধারণত বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা শেষ দিনের জন্য অপেক্ষা করেন না। কিন্তু জুন করেছিলেন। কারণ কী? জুন জানাননি। তবে মেদিনীপুরের অনেক তৃণমূল নেতা জানেন, ‘শুভ’ যোগ দেখেই জুন মনোনয়ন জমা দিতে চেয়েছিলেন। বৈশাখ মাসের ওই দিনটিতে সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে বেলা ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ছিল ‘অমৃতযোগ’। অমৃতকালেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জুন।

তেজস্বি-নী

প্রচারে বেরিয়ে বিবিধ ‘প্যারোডি’ গাইছেন। সব গানই নিবেদিত নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির উদ্দেশে। সবচেয়ে বেশি গাইছেন গোবিন্দ-অভিনীত হিট ছবি ‘সাজন চলে সসুরাল’-এর একটি গানের সুরে তৈরি ‘মোদীজি তুম তো ধোকেবাজ হো, ওয়াদা কর কে ভুল যাতে হো!’ সে না হয় হল। কিন্তু এই গান শিখলেন কোথায়? জুন বলছেন, অনুপ্রেরণা লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী।

অগ্নিসাক্ষী ১

অগ্নিসাক্ষী করে জুনের প্রথম বিবাহ সুখের হয়নি। নব্বইয়ের দশকে সেটি ভেঙেও যায়। যমজ পুত্র-কন্যা তখন জুনের কোলসই। অতঃপর পুত্র শিবাঙ্গম এবং কন্যা শিবাঙ্গীকে একাই বড় করেছেন জুন। শিবাঙ্গম এখন পাইলট। শিবাঙ্গী মডেলিং করেন। একটা সময়ে জুনও মডেলিং করতেন। অতঃপর সিনেমা এবং সিরিয়ালে অভিনয়।

অগ্নিসাক্ষী ২

এই অগ্নিও সাক্ষী। তিনি সাক্ষী জুনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের। এই অগ্নিও জুনের মতোই বিধায়ক। নামে ‘মিত্রা’ থাকলেও আপাতত তিনি জুনের শত্রু। অগ্নিমিত্রা পাল। মেদিনীপুর লোকসভায় জুনের মূল প্রতিপক্ষ। জুন অভিনেত্রী। অগ্নিমিত্রা ফ্যাশন ডিজ়াইনার। কাজের সূত্রে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। একটা সময়ে ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রার শো-স্টপার ছিলেন জুন। মেদিনীপুরের র‌্যাম্পে কে কার শো থামাবেন কে জানে!

অগ্নিসাক্ষী ৩

দীর্ঘদিন ‘সিঙ্গল’ থাকার পরে ২০১৯ সালে দীর্ঘ দিনের বন্ধু সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জুন। ‘স্টার স্পোর্টস’-এর বিপণনের প্রধান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সৌরভ। তার পরেও বহু প্রথম সারির ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব সামলেছেন। আপাতত নিজস্ব সংস্থা রয়েছে তাঁর। ঘটনাচক্রে, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের নাতি সৌরভ। অর্থাৎ, জুনের দাদাশ্বশুরের নামেই দেশপ্রিয় পার্কের নামকরণ।

আপনা হাত জগন্নাথ

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দেন জুন। প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েই বিধায়ক। তিন বছর বয়স তাঁর বিধায়ক সত্তার। কিন্তু এর মধ্যেই অমায়িক ব্যবহারের গুণে তিনি বিধানসভার কর্মীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। বিধানসভার কোনও কমিটির বৈঠকে গরহাজির থাকেন না। নিজেই নিজের গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যান সময় মতো।

করবে ভাই বাজিমাত!

জুনের মানসিক প্রস্তুতি ছিল দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে লড়ার। দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে তুলে বর্ধমান-দুর্গাপুরে লড়তে পাঠানোয় খানিক অবাকই হয়েছেন। তবে অগ্নিমিত্রাকে হালকা ভাবে নিচ্ছেন না মোটেই। কারণ, তিনি জানেন, লড়াই সব সময়েই কঠিন। তবে মেদিনীপুরকে বিজেপির ‘গড়’ বলে মানতেও রাজি নন জুন। তাঁর যুক্তি, ‘২০২১ সালের ভোটে সব হিসেব উল্টে গেছে। সাতটার মধ্যে ছ’টা বিধানসভা আমাদের জেতা আছে।’

ষান্মাসিক

বিজেপির কেউ কেউ মেদিনীপুরে জুনকে ‘বহিরাগত’ বলছেন। জুন অবশ্য সে সবে আমল দিচ্ছেন না। শুধু জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি মহিষাদলের মেয়ে। তাঁর গায়ে মেদিনীপুরেরই রক্ত। তাঁর কাকা-কাকিমা এখনও মহিষাদলেই থাকেন। সম্প্রতি দাঁতনে প্রচারে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘিরে ধরে জানান, তাঁরা আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি। জুন তাঁদের কথা দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দিল্লি থেকে আবাস যোজনা আদায় করে আনতে না পারলে সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেবেন! জুনে জিতলে ডিসেম্বর তাঁর সময়সীমা— ছ’মাস!

ইতি শ্রীকান্ত

জুনকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। তাঁর এক ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, গাছতলায় বসে শ্রীকান্ত বলছেন, মিমি-জিমি, নুসরত-মুসরত, জুন মালিয়া যারা লুটেপুটে খাচ্ছে, তারা যদি সম্পদ হয়, তা হলে তো আর পার্টি করা যাবে না। জুন নীরবই ছিলেন। কিন্তু দিদির ধমকে রাজ্যের মন্ত্রীকে জুনের কাছে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়েছিল। শ্রীকান্তের ক্ষোভের সেখানেই ইতি।

ঠান্ডা-ঠান্ডা, কুল-কুল

তৃণমূলে তারকা বিধায়কের সংখ্যা কম নয়। তাঁদের অনেকে দীর্ঘ দিনের বন্ধু। যেমন জুন আর কাঞ্চন মল্লিক। উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন ভোটের প্রচারে বেরিয়ে খানিক অপ্রস্তুতে পড়েছিলেন প্রবীণ রাজনীতিক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিজের প্রচার গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ায়। জুন ব্যাপারটা ভাল ভাবে নেননি। সটান বলেছেন, ‘‘কাঞ্চন বলে মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছিল। জানি না আমি থাকলে কী করতাম!’’

হট-হটার-হটেস্ট

পর্দায় জুনের সাহসী (জনপ্রিয় বর্ণনামূলক শব্দটি হল ‘উষ্ণ’) দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে একটা সময়ে গভীর আলোচনা হত বঙ্গসমাজে। অভিনয়ে সাহসী হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে হিংসা জুনের অপছন্দ নয়। তিনি বৌদ্ধ দর্শনের অনুসারী। প্রতিপক্ষ যতই আক্রমণাত্মক হোন, জুন ধীর এবং স্থির। প্যারোডি গাইছেন। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সারা পৃথিবীতে কিন্তু জুন মাসটাই হটেস্ট! উষ্ণতম।

রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE