Advertisement
Back to
Tarader Katha

তারাদের কথা: মহুয়া মৈত্র

star candidates of Lok Sabha Vote 2024: Mahua Moitra
শোভন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:
star candidates of Lok Sabha Vote 2024: Mahua Moitra

গ্রুপ থিয়েটার আর সারমেয় সমাচার

গ্রুপ থিয়েটারকে তিলমাত্র অশ্রদ্ধা না-করেই বলা যায়, নাটকের হদ্দমুদ্দ! মহুয়া মৈত্র হলেন সেই বিরল ব্যক্তিত্ব, যাঁর পোষ্য সারমেয়কে নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। যে পোষ্যের ‘দখল’ নিয়ে প্রাক্তন বান্ধব এবং তাঁর মধ্যে টানাপড়েন দিল্লি পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তার গলার বকলস, তার আদর করে চিবনোর রবারজাত ঠ্যাং নিয়ে থানাপুলিশ! বাস্তবের এই চিত্রনাট্য গ্রুপ থিয়েটারের হিট নাটককেও ছাপিয়ে যাওয়ার মতো!

কেশনগরের রসগোল্লা

তিনি শরীর সচেতন। সময়-সুযোগ পেলে বিদেশের ম্যারাথনে দৌড়ন। নচেৎ ট্রেডমিলে। যেখানেই যান সঙ্গে থাকে ঈষদুষ্ণ জলের বোতল। তাতে শরীরের সিস্টেম দুরস্ত থাকে। ঠান্ডা জল নৈব নৈব চ! তবে গরম রসগোল্লায় তিনি কুপোকাৎ। কৃষ্ণনগরের (তিনি প্রবীণদের স্টাইলে তথা অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিখ্যাত কবিতার অনুসরণে বলেন ‘কেশনগর’) সোনাপট্টির গলিতে দুলাল ঘোষের দোকানের বেঞ্চে বসে রাত সাড়ে ১০টাতেও গপগপ করে রসগোল্লা সাঁটান।

পহলে দর্শনধারী

দর্শন হিরানন্দানির থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া। নরেন্দ্র মোদী এবং গৌতম আদানিকে নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন করার জন্য তিনি নাকি উৎকোচ হিসেবে নগদ দু’কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী নিয়েছিলেন দুবাইয়ের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। মহুয়া তাঁর সংসদের লগ-ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দর্শনের অফিসকে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। দ্বিতীয় অভিযোগ মহুয়া অস্বীকার করেননি। তবে পাশাপাশিই বলেছেন, সেটা কোনও অপরাধ নয়। ‘বন্ধু’ দর্শনের কাছ থেকে স্কার্ফ, লিপস্টিক, আই-শ্যাডো উপহার নেওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেননি মহুয়া। কিন্তু দু’কোটি টাকা নগদবিদায়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাদ মে দোষবিচারী

‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগে লোসভার এথিক্স কমিটি মহুয়ার বিচার করে। কমিটির শুনানিতে ডাকা হয় মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইকে। ডাকা হয়েছিল মহুয়াকেও। কিন্তু তিনি ওই শুনানি থেকে ওয়াক আউট করেন। শেষপর্যন্ত গত ডিসেম্বরে মহুয়াকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আম আদমি থেকে খাস আদমি

মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যানের ভাইস প্রেসিডেন্টের চাকরি ছেড়ে ২০০৯ সালে রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’ সংগঠনের মারফত রাজনীতির ময়দানে আগমন তখন বছর পঁয়ত্রিশের মহুয়ার। তবে ‘ক্ষয়িষ্ণু’ কংগ্রেস তাঁকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। ২০১০ সালে তিনি ঠিকানা বদলে চলে যান কালীঘাটে। তার ছ’বছর পরে ২০১৬ সালে নদিয়ার করিমপুর বিধানসভায় তাঁকে টিকিট দেন মমতা। প্রায় চার দশকের ‘বাম ঘাঁটি’-তে ঘাসফুল ফোটান মহুয়া। ২০১৯ সালেই কৃষ্ণনগর লোকসভার টিকিট এবং জয়। সাংসদ হওয়ার পর থেকেই তিনি সর্বভারতীয় স্তরে পরিচিত মুখ। সংসদের তাঁর একাধিক বক্তৃতা ভাইরাল। ‘আম’ (সাধারণ) আর নন। তিনি এখন ‘খাস’ (বিশেষ)।

দিদির কীর্তি

মহুয়ার আগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন তাপস পাল। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে জেতা সাংসদ তাপস ২০১৯ সালের ভোটের আগে মহাবিতর্কিত এক মন্তব্য করে নিজেকে এবং দলকে বিশেষ ফাঁপরে ফেলেছিলেন। মমতা তখনই ঠিক করে নেন, ২০১৯ সালে তাপসকে আর কৃষ্ণনগরের টিকিট দেবে না তৃণমূল। বদলে সেখানে পাঠানো হয় মহুয়াকে। তাঁর প্রথম ব্রিফই ছিল: তাপসের নামটাই কৃষ্ণনগর লোকসভার মানুষকে ভুলিয়ে দিতে হবে। যেন তিনি সেখানে ছিলেনই না! মহুয়াই সেখানে তৃণমূলের প্রথম প্রতিনিধি। ‘দাদা’র কীর্তি সার্থক ভাবে ভুলিয়ে দিতে পেরেছিলেন ‘দিদি’ মহুয়া।

লে লে বাবু দো আনা

দু’পয়সার সাংবাদিক! মহুয়া মৈত্রের এই বাক্যবন্ধ সোরগোল ফেলে দিয়েছিল রাজ্য-রাজনীতিতে। রুদ্ধ্বদ্বার দলীয় বৈঠকে কয়েকজন সাংবাদিক ঢুকে পড়েছিলেন। বিরক্ত মহুয়া দলের কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘‘ওই দু’পয়সার সাংবাদিকগুলোকে বার করে দাও!’’ তাঁর দল তৃণমূল ওই মন্তব্য থেকে দূরত্ব রচনা করেছিল। প্রবল ক্রুদ্ধ সাংবাদিকদের একাংশ তাঁকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মহুয়া অবশ্য বয়কট-টয়কটের তোয়াক্কা করেননি। করেন না। তখনও না। এখনও না।

ফুটানি কা ডিব্বা

ইংরেজিতে ভ্যানিটি ব্যাগ। রসিক হিন্দিতে ফুটানি কা ডিব্বা! মহুয়ার ‘ফুটানি’ আছে। তাঁর একটি ডিব্বাও আছে বটে। সেটি কুলীন। ফরাসি কোম্পানি লুই ভিঁতোর তৈরি। সেই ব্যাগ নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন ‘কৃষ্ণনাগরিক’। লোকসভায় বক্তৃতা করতে উঠছেন। পাশে লুই ভিঁতো। দাঁড়ানোর পর নাকি একটু আড়ালে লুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। বিজেপি সাংসদেরা দেখে ফেলে বেজায় হল্লা শুরু করেন। তার পর থেকে অবশ্য মহুয়া অকুতোভয়। ডিব্বা নিয়ে ঘোরেন তাঁর যাবতীয় ‘ফুটানি’-সহ।

চশমে বদ্দুর

দিল্লির কড়া রোদে চোখ জ্বালা করে। শুকনো গরমে মাথা ধরে। লু লেগে পুড়ে যায় চোখের চারপাশের ত্বক। ছোট রোদচশমায় শানায় না। তাই মুখের তুলনায় বেঢপ সাইজ়ের সানগ্লাস পরেন। এখন সেটাই মহুয়ার ট্রেডমার্ক।

চায়ে পে চর্চা

জন্ম অসমের কাছাড় জেলায়। বাবার চা বাগান ছিল। ইস্কুলের পাট চুকিয়ে পাড়ি দেন বিদেশে। পড়তেন ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট হোলিওক কলেজে। পড়াশোনা শেষ করে নিউ ইয়র্কে জেপি মর্গ্যানের চাকরিতে। ধীরে ধীরে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে উত্তরণ। তবে পারিবারিক চা বাগানের ব্যবস্থা থাকলেও তিনি কফিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। লন্ডনে স্টারবাক্‌সে বসে কফি মাগে চুমুক— আহ্!

জুবিলি হিরোইন

সামনের অক্টোবরে ৫০ বছর বয়স হবে। গত ডিসেম্বরে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর নতুন সংসদ ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “এখন আমার ৪৯ বছর বয়স। আরও অন্তত ২৫ বছর সংসদের ভিতরে-বাইরে রাজনীতি করব।” অর্থাৎ, ৭৫ বছর। অর্থাৎ, প্ল্যাটিনাম জুবিলি। তদ্দিন পর্যন্ত তিনিই হিরোইন।

রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE