E-Paper

কড়া ভূমিকা আধাসেনার, পঞ্চায়েতের ভয় কাটিয়ে বুথমুখী নিউ টাউন

কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায়, শনিবার দেখা গেল, ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে কঠিন মুখে পাহারায় আধাসেনার জওয়ানেরা। সন্দেহজনক জমায়েত দেখলেই সে দিকে গিয়ে জটলা ভেঙে দিচ্ছেন তাঁরা।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৪ ০৮:০২

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক বছর পরেই ছবিটা বদলে গেল একশো আশি ডিগ্রি।

এক বছর আগে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পঞ্চায়েত ভোটের সকালে ছবিটা ছিল ঠিক বিপরীত। ওই কলেজেরই চতুর্দিক পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। মুখে কাপড় বেঁধে ভোটারদের বুথে পৌঁছতে বাধা দিতে দেখা গিয়েছিল দুষ্কৃতীদের। সেই বাধা উপেক্ষা করতে গিয়ে নিগ্রহের শিকারও হয়েছিলেন বাসিন্দারা। দেখা মেলেনি পুলিশের।

কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায়, শনিবার দেখা গেল, ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে কঠিন মুখে পাহারায় আধাসেনার জওয়ানেরা। সন্দেহজনক জমায়েত দেখলেই সে দিকে গিয়ে জটলা ভেঙে দিচ্ছেন তাঁরা। হাসিমুখে বুথের বাইরে লাইন দিয়েছেন ভোটারেরা। আক্ষরিক অর্থেই যেন গণতন্ত্রের উৎসব। শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় এই ছবি দেখা গেল বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অধীন, নিউ টাউনের এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজে।

কিন্তু এ দিন আধাসেনার পাহারাদারিতে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে তর্জনী তুলে নিজস্বী তুললেন অনেকেই। লাঠি নিয়ে চলা ডি বি ব্লকের বাসিন্দা, নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়কে এক জওয়ান হাত ধরে বুথের বাইরে এনে চেয়ারে বসালেন। প্রৌঢ়া নিবেদিতা বলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দিতে পারাটাই তো সুস্থ সমাজের পরিচয়। পঞ্চায়েতে এত গোলমাল হল যে ভয়ে সে বার ভোট দিতে আসার সাহসই পাইনি।’’

এ বার লোকসভা ভোটে ওই কলেজ ছাড়াও নিউ টাউনের একাধিক জায়গায় বুথ হয়েছে। নিউ টাউন মেলা মাঠের বাইরে দাঁড়ানো বরুণ দাসের মুখেও শোনা গেল পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা। বরুণ বলেন, ‘‘আধাসেনা নামতে দুষ্কৃতীদের দাঁত-নখ পেটের ভিতরে সেঁধিয়ে গিয়েছে। ২০১০ সাল থেকে নিউ টাউনে আছি। দু’বার ভোট দিয়েছি। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে চরম অসভ্যতা হয়েছিল। ভোট বয়কটের প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে কাউকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বুথের কাছে এসেও ফিরে গিয়েছি। আজ নির্ভয়ে ভোট দিলাম।’’

বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে ছয়টি পঞ্চায়েতেই ভোটের দিনে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন বাসিন্দারা। তার মধ্যে শহর এলাকা নিউ টাউনও ছিল। এ দিন সেখানে যেমন ভোট দিয়ে হাসিমুখে কেন্দ্র থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে, তেমনই খোশ মেজাজে দেখা গিয়েছে গ্রামীণ এলাকার মানুষকে। পাথরঘাটার বাসিন্দা আজান আলি বলেন, ‘‘দিনটা তো ভালই কাটল। তবে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। রাতে অবশ্য কী হবে জানি না।’’

এই শান্তির বাতাবরণের নেপথ্যে যে আধাসেনার ভূমিকা রয়েছে, তা মানছেন সাধারণ ভোটার থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও। বিজেপির অনুপম ঘোষ বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় তৃণমূল ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা ঠেকিয়ে দিয়েছি। তবে পঞ্চায়েতে ভোটদানে বাধা পাওয়া মানুষ এ বার ঢেলে ভোট দিয়েছেন।’’ আবার সিপিএম নেতা সপ্তর্ষি দেব বলেন, ‘‘কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি। গ্রাম এলাকাগুলিতেও মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন।’’ অবশ্য তৃণমূল নেতা মহম্মদ আফতাবুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে আগে যা হয়েছে, এ বার তা হবে না।’’

আধাসেনার কড়া হাতে ভোট পরিচালনার দু’টি নমুনাও দেখা গেল। এ পি জে কলেজের ২০০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের শিবির রয়েছে জানিয়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের তরফে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিছু সময়ের মধ্যে এসে ওই শিবির বন্ধ করে দেয় আধা সেনা ও পুলিশ। আবার যাত্রাগাছি মাদ্রাসায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করা এক যুবকের কলার চেপে এক জওয়ান ধমকে বললেন, ‘‘এখান থেকে সরে যাও, বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 central forces New Town

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy