E-Paper

দিল্লি থেকে ফিরেই টানা কর্মসূচি

বিরোধী দলনেতাকে পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের মহিলারা। বয়স্ক মহিলারা সেদিনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানান বিরোধী দলনেতার কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩
দিঘার মিছিলে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র

দিঘার মিছিলে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র kamilasuvendu21@gmail.com

সকালে যাচ্ছেন পুলিশি ‘সন্ত্রাসে’র শিকার হওয়া দলের স্থানীয় কর্মীদের বাড়িতে। বিকালে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে দলের মহিলা মোর্চার কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে প্রথম সারিতে। সংগাঠনিক বৈঠক হোক দলের কোনও কর্মসূচি, লোকসভা ভোটের আগে জেলায় বিজেপির প্রায় সব অনুষ্ঠানেই হাজির হচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যা দেখে রাজনৈতিক মহল বলছে, ‘ভোট বড় বালাই’!

গত শনিবার ভগবানপুর-২ ব্লকের জুখিয়া অঞ্চলের একতারপুর গ্রামে পুলিশ অনুপ দেবনাথ এবং মঙ্গল দেবনাথ নামে দুই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ। দাবি, বিজেপি কর্মীরা না থাকায় বাড়িতে থাকা মহিলা সদস্যদের মারধর এবং খাবার ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে পুলিশ। ওই সময় দিল্লিতে ছিলেন শুভেন্দু। দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। তবে ঘটনায় সমাজ মাধ্যমে সরব হন শুভেন্দু। এর পরে রাজ্যে ফিরেই তিনি বুধবার সকালে একতারপুর গ্রামে যান। সেখানে তাঁকে পুষ্প বৃষ্টি করে স্বাগত জানান গ্রামবাসী। শুভেন্দু এ দিন ‘অত্যাচারিত’ দলের কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মঙ্গল দেবনাথের সঙ্গে কথা বলেন।

বিরোধী দলনেতাকে পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের মহিলারা। বয়স্ক মহিলারা সেদিনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানান বিরোধী দলনেতার কাছে। শুভেন্দু এ দিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখেন। যাঁরা এ দিন পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, শুভেন্দুর তাঁদের কাছে পাল্টা জানতে চান, ‘‘আপনারা শক্ত রয়েছেন তো! আপনারা প্রস্তুত?’’ তখন গ্রাম জুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘কাঁথি লোকসভা ভোটে তো লক্ষাধিক ভোটে তৃণমূল হারছেই। আর এই ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৫০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবে বিজেপি।’’

গত বিধানসভা ভোটে ভগবানপুরে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয় বিজেপি। তবে এবার পঞ্চায়েত ভোটে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি পদ্ম শিবির। তারপর গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূল এবং বিজেপি শিবিরের মধ্যে নানা বিষয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। বিজেপির অভিযোগ, দলের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মতোই গ্রেফতারি পরোয়ানা বা ৪১ নম্বর ধারায় নোটিস ছাড়া এলাকায় পুলিশ ঢুকলে শাঁখ বাজাবেন। যে ভাষায় কথা বললে পুলিশ বুঝতে পারে, সেই ভাষাতেই আপনাদেরকে গণতান্ত্রিকভাবে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।’’

বিকেলে শুভেন্দু যান সৈকত শহর দিঘায়। গত শনিবার নিউ দিঘায় এক মহিলা পর্যটককে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ দিন দিঘায় বিজেপির মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছিল। কর্মীরা বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তির পাদদেশ থেকে ঝাঁটা হাতে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন। সেই মিছিলে পা মেলান শুভেন্দু। মিছিল শেষ হয় দিঘা থানার সামনে। সেখানে বিধায়ক সুমিতা সিংহ, বিজেপি নেত্রী বনশ্রী মাইতির নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল দিঘা থানায় যায়। তারা ওসির কাছে স্মারকলিপি দেয়।

থানার বাইরে মাইক ছাড়া পথসভা করেন বিরোধীদল নেতা। তিনি বলেন, ‘‘দিঘাতে মহিলা পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনা এর আগে হয়নি। পর্যটন শহরে সিসি ক্যামেরা নেই। পুলিশি বন্দোবস্তও চোখে পড়ে না।’’ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘পর্যটক ধর্ষণ কাণ্ডে যে দুজন যুবক ধরা পড়েছে তাদের একজনের বাবা সিপিএমের পার্টি সদস্য। আরেকজন এলাকায় তৃণমূলের বুথের নেতা। এ ধরনের ঘটনা ইন্ডিয়া জোটের লোকেরাই ঘটিয়েছে।’’ কামদুনি ধর্ষণ কাণ্ডের মতো দিঘা ধর্ষণ-কাণ্ডে পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করবে না বলে শুভেন্দু আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ দিন। তবে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি দাবি করেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে হবে।

ভোটের আগে জনগণকে পাশে টানতে এভাবেই সব কর্মসূচিতে শুভেন্দু নিজে হাজির হচ্ছেন বলে দাবি তৃণমূলের। এ দিন বিরোধী দলনেতা দিঘা ছাড়ার পর ভগবানপুর-২ ব্লকের কায়েমগেড়িয়াতে সভা করে তৃণমূল। সেখানে এক বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান বলে শাসক দলের তরফে দাবি করা হয়। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকায় আমাদের দলের ১৩ জন কর্মী ঘরছাড়া। প্রশাসন যখন তাঁদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছে, তখন শুভেন্দু অধিকারী এলাকায় গিয়ে উস্কানি দিচ্ছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suvendu Adhikari

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy