Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

তিন তালাক বিরোধী আইন স্বাগত, তবু অপেক্ষা ‘অচ্ছে দিনে’র

কেবল মন্দির-মসজিদ বিতর্কেই নয়, অতীতে সিএএ আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র দেওবন্দ ভোটের বাজারে আপাত নীরব, নির্লিপ্ত। মোরাদাবাদের বাস স্টপে চায়ের দোকানে আলাপ হয়েছিল শিক্ষক তৌফিক জামালের সঙ্গে।

—প্রতীকী ছবি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
দেওবন্দ শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৩৭
Share: Save:

‘‘জান হ্যায় তো, জাহান হ্যায়।’’

দারুল উলুম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে খাবারের দোকানে আলাপ ‘রসুল চাচা’র সঙ্গে। দুপুরের পড়ন্ত রোদ। রোজা ভাঙার সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে। তারই মধ্যে শিককাবাব তৈরির তাড়া। প্রশ্ন করেছিলাম, রাম মন্দির, মথুরা ও কাশী নিয়ে। শিককাবাবে মশলা মাখানো হাতটা থামল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। কিছুটা স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘প্রাণ থাকলে সব থাকবে। আমরাও অপেক্ষা করছি অচ্ছে দিনের জন্য। অপেক্ষায় রয়েছি অখিলেশ যাদবের সরকারের।’’ বলেই মাংস-মশলায় মন দিলেন তিনি।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

গোটা উত্তর ভারত তথা গো-বলয়ের হিন্দু সমাজ যখন রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মের পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন দেখছে, অদ্ভুত নিস্পৃহ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলিম সমাজ। কারণ, তাদের একাংশের মতে, যা হওয়ার হবেই। সরকার যদি চায়, তা হলে কে আটকাবে কাশী-মথুরা নিয়ে বহুলপ্রচারিত স্লোগানের রূপায়ণ।

কেবল মন্দির-মসজিদ বিতর্কেই নয়, অতীতে সিএএ আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র দেওবন্দ ভোটের বাজারে আপাত নীরব, নির্লিপ্ত। মোরাদাবাদের বাস স্টপে চায়ের দোকানে আলাপ হয়েছিল শিক্ষক তৌফিক জামালের সঙ্গে। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কথায়, এই সরকারের আমলে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ দেখিয়ে কে আর বাড়িতে বুলডোজার ডেকে আনতে চায়। গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যদি এক জন মুসলিম মন্ত্রী না থাকেন, তা হলে আমাদের বক্তব্য পৌঁছবে কী করে!’’

দেওবন্দের দারুল উলেমা এ দেশের অন্যতম বড় মুসলিম শিক্ষাকেন্দ্র। অতীতে একাধিক বিতর্কিত ফতোয়া জারি হয়েছে এখান থেকেই। ভোটের মরসুমে গজওয়া হিন্দ বিতর্কে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন স্থানীয় প্রশাসনকে নোটিস পাঠিয়ে দারুল উলেমার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু কুড়ি হাজার পড়ুয়ার উপস্থিতিতে গমগম করা গোটা প্রতিষ্ঠানে ইদের ছুটিতে রয়েছেন হাতে গোনা কিছু পড়ুয়াই। অধিকাংশ মৌলবী ছুটিতে বাড়ি গিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখতে গিয়ে আলাপ হল স্থানীয় বাসিন্দা মৈনুদ্দিনের সঙ্গে। শিক্ষিত রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে মৈনুদ্দিন। বড় ভাই, কংগ্রেসের নেতা মাভিয়া আলি ২০১৬ সালে দেওবন্দ বিধানসভা থেকে উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালের পরে দ্বিতীয় বার মুসলিম বিধায়ক পেয়েছিল দেওবন্দ। মইন জানালেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া বা স্থানীয়রা কেউই কোনও বিতর্কিত বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। অতীতের খোলামেলা পরিস্থিতি আর নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের উপর চাপ বাড়ছে। তিন তালাকের পরে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বিল আসতে চলেছে। কাশী বা মথুরার বিষয়টি আদালতে ঝুলছে। আদালত যা রায় দেবে তা মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।’’

ঘরের পাশে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয়ে গিয়েছে। একে একে উত্তরপ্রদেশ, অসম, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি ওই আইন আনার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে। দেওবন্দ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থানীয় বাসিন্দা ফয়িম উসমানের। তিনি বললেন, ‘‘দেখুন দেওয়ানি বিধিতে মেয়েদের পিতার সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। আমাদের ধর্মেও তাই রয়েছে। যা অনেক সময় পালন হয়, অনেক সময় হয় না। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হলে কন্যা সন্তানের পিতার সম্পত্তি পাওয়া অন্তত আইনি অধিকার পাবে। তবে ওই আইনে এমন কিছু যদি থাকে যা শরিয়তবিরোধী, তা হলে দেওবন্দ মুখ খুলবে। অতীতে যে ভাবে সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল।’’

তিন তালাক বিরোধী আইনকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁরা মনে করেন, এতে মুসলিম মহিলারা উপকৃত হবেন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে পসমন্দা মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন সমাজকর্মী সালাউদ্দিন মনসুরি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক মুসলিম স্বামীই তিন তালাকের অপব্যবহার করতেন। আইন আসায় তা ভয়ে অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনও পিতা বা কোনও দাদা চাইবেন না তাঁদের ঘরের মেয়ে বা বোন বিনা কারণে তিন তালাকের শিকার হোক।’’ মুসলিম মহিলাদের শিক্ষার প্রসারে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, ‘‘যে মুসলিম মেয়েরা শিক্ষার আলো পেয়েছে, তারা তিন তালাক অবলুপ্তির পক্ষে। কিন্তু কিছু মুসলিম পরিবার এখনও অতীতেই পড়ে রয়েছে। সেই সব পরিবারের মহিলাদের কাছে বাড়ির পুরুষেরা যা বলল তাই শেষ কথা।’’

তিন তালাক বিরোধী আইনকে স্বাগত জানানো, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আশা-আশঙ্কা, এই সবের মধ্যে থেকে উঠে আসছে আরও কিছু ভাবনা, হয়তো আক্ষেপও— সরকার আইন করার পরিবর্তে যদি সমাজের ভিতর থেকেই উঠে আসত এই সংস্কার। তা হলে বলার কিছু থাকত না। আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কথা মুক্তকণ্ঠে বললেও এখানে চারিয়ে রয়েছে এক অদ্ভুত ভয়। যে ভয় বলছে, ‘অচ্ছে দিন আসবে। প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারবেন সংখ্যালঘুরা।’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE