Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Rachana vs Locket

অনেক ছবিতেই দুই ‘শত্রু’র ভূমিকায় রচনা-লকেট! এ বার হুগলির ঘাটে বাস্তবেও যুযুধান দুই অভিনেত্রী

বয়সে দু’মাসের ছোট-বড় রচনা এবং লকেট। রচনা দু’মাসের বড়। লকেট ছোট। সিনেমা জগতেও লকেটের থেকে কিছুটা ‘সিনিয়র’ বা প্রবীণ রচনা। তবে রাজনীতিতে লকেট এগিয়ে আছেন রচনার থেকে অনেকটাই।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ‘ত্যাগ’ সিনেমার দৃশ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫১
Share: Save:

টলিউডে একসঙ্গে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন দু’জনে। কোনও ছবিতে গলায় গলায় বন্ধু সেজেছেন পর্দায়। আবার এমন বহু চরিত্রেই তাঁদের দেখা গিয়েছে, যেখানে পর্দায় তাঁরা যুযুধান। কখনও বৌদি-ননদ আবার কখনও দুই জায়ের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়কে! রুপোলি পর্দার সেই টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্কই এ বার চোখের সামনে দেখতে পাবেন বলে মনে করছেন হুগলির লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ। কারণ, রবিবার ব্রিগেড থেকে তৃণমূল ঘোষণা করেছে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী হতে চলেছেন রচনা। যে কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই তাঁর বিনোদন জগতের ‘জুনিয়র’ এবং রাজনীতিতে ‘সিনিয়র’গত বছরের জয়ী সাংসদ লকেটকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছে বিজেপি।

গ্ল্যামার জগতের রচনা রাজনীতিতে আনকোরা নতুন। তবে এ ধরনের মুখ ব্যবহার করেই আগেও ভোটে সফল হয়েছে তৃণমূল। রাজনীতির কারবারিদের ধারণা, হুগলিতে তৃণমূলের যে জেতা আসন ২০১৯ সালের লোকসভায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন লকেট, ২০২৪ সালে তা ফিরে পেতেই রচনাকে এনে পুরনো এবং পরীক্ষিত ফর্মুলা কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। অন্য দিকে লকেট অভিনত্রীর খোলস ছেড়ে মাঠ-ঘাটের সক্রিয় রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন ২০১৭-১৮ সাল থেকেই। তার আগে ২০১১ সালে তৃণমূলে এবং ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিলেও অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন লকেট। বস্তুত ২০১৪ সালেই রচনার অভিনয় করা চরিত্র ‘গোয়েন্দা গোগোল’-এর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন লকেট। ২০১৭ সালেও ‘হঠাৎ একদিন’ ছবিতে কাজ করেন দু’জনে। তখন অবশ্য রচনা-লকেট দু’জনেই জানিয়েছিলেন তাঁদের ১৭ বছরের বন্ধুত্ব। রবিবারের পর অবশ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে পরষ্পরের শত্রু হিসাবেই অবতীর্ণ হতে চলেছেন রচনা-লকেট।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা।

তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

রবিবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর রচনাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দিদি আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি পাশে পাব তো? আমি ওঁর অনুরোধ ফেলতে পারি না। পারিওনি। তা ছাড়া আমি বরাবরই তৃণমূলের সমর্থক। নারী শক্তিতে বিশ্বাসী। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে যদি আমি না থাকি, তবে কে থাকবে?’’

অন্য দিকে, রচনার প্রতিপক্ষ লকেটকে রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ সব ছলবলে কিছু হয় না। লড়াইটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। প্রার্থী হচ্ছেন মোদী। লড়াই আসলে মোদী বনাম মমতার। তাই এর বিরুদ্ধে ওকে লড়িয়ে দিয়ে কিছু হবে না।’’

বয়সে দু’মাসের ছোট-বড় রচনা এবং লকেট। রচনা দু’মাসের বড়। লকেট ছোট। দু’জনেই ৪৯। সিনেমা জগতেও লকেটের থেকে কিছুটা প্রবীণ রচনা। ১৯৯৩ সালে রচনার প্রথম সিনেমা মুক্তি পায়। অন্য দিকে, লকেটের প্রথম সিনেমা আসে তার ন’বছর পর। ২০০২ সালে ‘একটু ছোঁয়া’ নামে সিনেমায় অভিনয় করেন লকেট। তার পরে ‘কর্তব্য’ ছবিতেই একসঙ্গে কাজ করেছিলেন দু’জন। বস্তুত, তার পর থেকে পর পর সিনেমায় রচনার সঙ্গে কাজ করেছেন লকেট। ‘মায়ের আঁচল’ ‘পরিবার’, ‘অগ্নি’, ‘ত্যাগ’— দু’বছরের মধ্যে একসঙ্গে পাঁচটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন দু’জনে। সব ছবিতেই নায়ক প্রসেনজিৎ। সব ছবিতেই নায়িকা চরিত্রে রচনা। আর লকেট পার্শ্বচরিত্রে। যদিও ২০০৪ সালের পরে বহুদিন তাঁদের আর এক ছবিতে দেখা যায়নি। ২০১৭ সালে আবার ‘হঠাৎ একদিন’ ছবিতে একসঙ্গে আসেন রচনা-লকেট। সেই সময় নোটবন্দির মতো বিষয়ে সহমত পোষণ করতে দেখা গিয়েছিল দু’জনকে। রবিবারের পর নিশ্চিত ভাবেই তাঁদের আর কোনও বিষয়ে সহমত হতে দেখা যাবে না।

সিনেমায় অভিনয়ের সময় অমিতাভ বচ্চনের নায়িকা হয়েছিলেন রচনা। সেই রচনা বাংলায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন টিভিতে আসার পর। একটি বাংলা চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সঞ্চালনা করে বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েন রচনা। সেই জনপ্রিয়তা এমনই উচ্চতায় পৌঁছয় যে মাঝে একটি সিজ়নের জন্য অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়কে আনা হলেও শেষে রচনাকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি রচনার সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়, রচনা লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া নিয়ে।

অন্য দিকে, লকেটও গত পাঁচবছরে পৌঁছেছেন বাংলার ঘরে ঘরে। কোনও একটি ঘটনা নিয়ে বাংলায় বিজেপি সরব হতে না হতেই লকেট পৌঁছে গিয়েছেন সেখানে। সে সন্দেশখালি হোক বা রিষড়া কোনও জায়গাই বাদ রাখেনি। ২০১১ সালে তৃণমূলে এবং ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগদানের পরও যে লকেট বছর দু’তিন কিছুটা আড়ালেই থাকতেন সেই লকেটই এখন পুরদস্তুর বিজেপি নেত্রী। গলা ফাটিয়ে প্রচার করেন দলের। মোদীর সভায় বক্তৃতাও করেন। সেই লকেট তাঁর একদা বন্ধু এবং বর্তমান প্রতিপক্ষ রচনাকে নিয়ে কী বলছেন?

সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে লকেটকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমি অনেক আগে এসেছি। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি ওঁকে সম্মান করি। তবে যাঁরা সত্যিকারের মানুষের জন্য কাজ করেছেন, জনগণ তাঁদেরই বেছে নেবেন। সব জায়গা সবার জন্য নয়। মিমি, নুসরতকে টিকিট দিয়ে দেখা গিয়েছে, কী করেছেন। এ ভাবে মানুষকে বোকা বানানো যায় না।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE