Advertisement
E-Paper

বেহালা পশ্চিম: ভোটযুদ্ধে ব্রাত্য বন্দি বিধায়ক পার্থের পার্টি অফিস, ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত তৃণমূলের

সম্প্রতি লোকসভা ভোট উপলক্ষে বেহালা পশ্চিমের কর্মী সম্মেলন হয় তৃণমূলের। বেহালা শরৎ সদনে আয়োজিত এই সভায় হাজির হয়েছিলেন প্রার্থী মালা রায়ও। ঘটনাচক্রে সেখানেও বিধায়ক পার্থের নাম একটি বারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩০
TMC will not operate any Lok Sabha election work from Partha Chatterjee’s MLA office

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

এক সময় রাজ্য রাজনীতির দাপুটে নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি কারাগারে। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর দল তৃণমূল দলীয় পদ-সহ মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। প্রায় দু’দশকের বেশি সময় পর দক্ষিণ কলকাতায় ভোটের মঞ্চে নেই তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব। যদিও, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার ভোট প্রস্তুতিতে তাঁর অনুপস্থিতি চোখেই পড়ছে না বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। এমনকি, এ বারের ভোটে তাঁর অতিপরিচিত কার্যালয়টিকেও বাদের খাতায় ফেলে দিয়েছেন বেহালা পশ্চিমের অন্তর্গত তৃণমূলের ছোট-বড়-মেজো-সেজো গোছের নেতারা। বেহালা পশ্চিম বিধানসভার তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, অঘোষিত ভাবে পার্থ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বের তরফে। তাই কাউন্সিলরেরা সচেতন ভাবেই ম্যান্টনের অফিসে যাচ্ছেন না। এমনিক ভোটের কাজেও তাঁর অফিস ব্যবহার করা হচ্ছে না। দলীয় নির্দেশ প্রসঙ্গে কোনও নেতাই অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। তবে আড়ালে-আবডালে সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন।

জেলযাত্রার আগে যে কোনও ভোটের সময় বেহালার ‘শক্তি কেন্দ্র’ ছিল পার্থের ম্যান্টনের অফিসে। ২০০১ সালে পার্থ বিধায়ক হওয়ার পর থেকে এই অফিসে বসেই নিজের কাজকর্ম করতেন। আবার ভোটের সময় সেই অফিসের গুরুত্ব বেড়ে যেত কয়েকশো গুণ। বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পাশাপাশি ঠিক হত ভোটের নানা রণকৌশলও। কিন্তু ২০২৪ সালের ভোটে পার্থের অনুপস্থিতিতে সেই বিধায়ক অফিসও ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। বেহালা পশ্চিমের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ওই বিধানসভা এলাকার সব কাউন্সিলরকে।

তৃণমূলে থাকার সময়ে যে দলীয় কার্যালয়ে বসতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

তৃণমূলে থাকার সময়ে যে দলীয় কার্যালয়ে বসতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা পুরসভার মোট ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা এলাকা। ১১৮-১১৯, ১২৫-১৩২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই বিধানসভায় বর্তমানে তৃণমূলের ১০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। সেই ১০ জন কাউন্সিলরের ন’জনই এখন আর পার্থর বেহালা ম্যান্টনের অফিসে যান না। তাঁরা নিজ নিজ ওয়ার্ডে বসেই ভোটের কাজ করছেন। বেহালার এক দাপুটে কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘কে আছে, কে নেই আমরা তা ভাবছি না। সব কাউন্সিলরই তৃণমূলের, দলের নির্দেশ মেনে কাউন্সিলরেরা নিজ নিজ এলাকার ভোট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। তাই পার্থের অফিসে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ছে না।’’

অন্য ন’জন কাউন্সিলর পার্থের অফিসে না গেলেও, এখনও সেই অফিসে যান ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ সরকার (ভজা)। ২০০১ সালে প্রথম বার বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই পার্থের সঙ্গে বেহালায় আগমন ভজার। তাঁর আনুগত্যের কারণেই ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের পুরভোটে ভজাকে টিকিট পাইয়ে দেন তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব। সিপিএমের জনপ্রিয় কাউন্সিলর রত্না রায় মজুমদারকে হারিয়ে কাউন্সিলর হন ভজা। বেহালা পশ্চিমের তৃণমূলের অন্দরেই সে দিন ভজার মনোনয়নের বিরোধী ছিলেন অনেকেই। ভোটের দিন গুন্ডাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বুথের পর বুথ লুট করে রিগিং করে ভজা জিতেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল দলের অন্দরে। তা ছাড়াও বেহালার কর্মীরা তো বটেই, নেতাদের সঙ্গে ভজার ‘দুর্ব্যবহার’ নিয়েও ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু তৃণমূল মহাসচিবের ‘ভয়ে’ই তখন আর মুখ খোলার সাহস করেননি কেউ। তাই সে দিনগুলির কথা স্মরণে রেখেই পার্থের অফিস থেকে দূরত্ব রচনা শুরু করেছেন কাউন্সিলর থেকে শুরু করে নেতা-কর্মীরা। ভজার ‘দুর্ব্যবহার’-এর কারণে পার্থের উপর রুষ্ট ছিলেন অনেকেই। তিনি ইডির হাতে ধরা পড়তেই পার্থের অফিসের ধারেকাছে যান না বেহালার আর কোনও নেতা। পার্থ-ঘনিষ্ঠ ভজা পার্থের অফিসে গেলেও দলীয় নির্দেশ মেনে তিনিও ভোটের কাজের জন্য ম্যান্টনের অফিস ব্যবহার করছেন না বলেই খবর।

মাস কয়েক আগে জামিনের শুনানিতে আলিপুর আদালতে পার্থকে আনা হয়েছিল। সেই সময় বেহালার এক আইনজীবী তৃণমূল নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। সূত্রের খবর, কেঁদে পার্থ তাঁর কাছে অনুরোধ করেন, ‘‘তোরা আমাকে বের কর। আমি আর পারছি না।’’ ওই আইনজীবী নেতা পাল্টা বলেন, ‘‘পার্থদা, আমি আপনার কেসের কিছুই জানি না। আপনি আপনার লোকদের বলুন আমাকে সব কাগজপত্র দিতে। আমি চেষ্টা করে দেখছি।’’ ঘটনাচক্রে এই আইনজীবী নেতাও বেহালা পশ্চিমের একটি ওয়ার্ড থেকে পুরভোটে টিকিট প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু বিধায়কের ক্ষমতাবলে তাঁর টিকিটটি কেটে দিয়েছিলেন পার্থই, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। আরও হরেক ঘটনায় পার্থের ওপর ক্ষুব্ধ বেহালা পশ্চিমের নেতা-কর্মীরা।

বেহালার এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘গত ১০-১২ বছরে পার্থকে বেহালার মানুষ বদলে যেতে দেখেছিলেন। তাঁর অফিসে আর সাধারণ কর্মী-নেতাদের ভিড় দেখা যেত না। দেখা যেত, প্রোমোটার, বদমাইশ, গুন্ডা, এক সময়ে জেলখাটা আসামিদের। পার্থের চোখের মণি, যিনি পার্থর দৌলতে কাউন্সিলর হয়েছেন, তিনিই এই সব অসামাজিক অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতেন। দলের কর্মীদের সঙ্গে যে পার্থের দূরত্ব বাড়ছে, তা তিনি বোঝেননি। এখন তাঁর অফিস ভোটের কাজে ব্যবহার না করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে দলের থেকে বেশি দায় পার্থের।’’ সম্প্রতি লোকসভা ভোট উপলক্ষে বেহালা পশ্চিমের কর্মী সম্মেলন হয় তৃণমূলের। বেহালা শরৎ সদনে আয়োজিত এই সভায় হাজির হয়েছিলেন প্রার্থী মালা রায়ও। ঘটনাচক্রে সেখানেও বিধায়ক পার্থের নাম একটি বারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি।

Partha Chatterjee Lok Sabha Election 2024 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy