Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Dilip Ghosh

দিলীপকে আরও কোণঠাসা করতেই কি দিল্লির চিঠি? জবাব দেওয়ার আগে পাল্টা প্রচারের তাল ঠুকছেন ঘোষ

সোমবার থেকে প্রচার শুরু করে মঙ্গলবারেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সতর্ক করে চিঠিও পাঠিয়েছেন। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিলেও এখন দিলীপের ভাবনায় প্রচারের নতুন ছক।

Why BJP leadership sends show couse letter to Dilip Ghosh

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ১২:৩১
Share: Save:

নিজের জেতা আসন পাননি। মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছে তাঁর জন্য আনকোরা বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। গত লোকসভা নির্বাচন তো বটেই বিধানসভা ভোটের নিরিখেও ‘কঠিন’ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে দিলীপ ঘোষকে। এ বার দলের তরফে কার্যত ‘ক্ষমা চাইতে বলা’ চিঠি পাঠানোয় কি দিলীপ বিজেপির অন্দরে আরও ‘কোণঠাসা’ হয়ে গেলেন?

এমনিতে বিতর্ক রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপের ছায়াসঙ্গী। অনেকে বলেন, দিলীপের প্রধান শত্রু তাঁর মুখ। রবিবার প্রার্থিপদে নামঘোষণার পরে সোম ও মঙ্গল দোলখেলার মধ্য দিয়েই নতুন আসনে জনসংযোগ শুরু করেছিলেন দিলীপ। প্রতিপক্ষ কীর্তি আজাদকে ছক্কা মারার জন্য প্রথম থেকেই ব্যাট চালাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই মঙ্গলবার একটি লোপ্পা ক্যাচও তুলে দেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণের সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তিকে আক্রমণ করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘বিহার, ইউপি থেকে দিদি গোয়াতে গিয়ে বলেন গোয়ার মেয়ে। ত্রিপুরাতে গিয়ে বলেন ত্রিপুরার মেয়ে।’’ এর পরেই তিনি মমতার উদ্দেশে তাঁর পিতৃপরিচয় নিয়ে কুরুচিকর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন বলে শোরগোল ওঠে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

তৃণমূল দিলীপের বক্তব্যের পাল্টা প্রচার শুরু করে। নির্বাচন কমিশনে নালিশও জানায়। তার পরেই মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চিঠি পান দিলীপ। যাতে বলা হয়েছে, “মাননীয় দিলীপ ঘোষ, আপনার আজকের বক্তব্য অশোভনীয় এবং অসংসদীয়। ভারতীয় জনতা পার্টির নীতির পরিপন্থীও। দল এই বক্তব্যের নিন্দা করছে। সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার নির্দেশানুসারে আপনি যত দ্রুত সম্ভব আপনার আচরণের ব্যাখ্যা দিন।”

বুধ সকালেই প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন দিলীপ। যেটা দল চেয়েছিল। কিন্তু কেন এমন করল দল? বিজেপির রাজ্য নেতারা মনে করছেন এর পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচন পর্বের শুরুতেই দিলীপের মন্তব্য ঘিরে যাতে বিতর্ক বড় আকার না নেয়, তার জন্যই তড়িঘড়ি চিঠি। দ্বিতীয়ত, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিলীপকে সমর্থন না করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বা নেত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়। দল মহিলাদের সম্মান করে— এই বার্তা বাংলার ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কারণ, রাজ্যের বড় অংশের ভোটার তৃণমূলকে ভোট দেয় ‘বাংলার মেয়ে’, ‘দিদি’ মমতাকে দেখে। তৃতীয় কারণটিও গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের প্রচার সব শুরু হয়েছে। দিলীপ এমন মন্তব্য আরও যাতে না করেন, সে জন্য গোড়াতেই তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া।

কিন্তু দিলীপ কি সতর্ক হয়েছেন? তিনি যখন রাজ্য সভাপতি ছিলেন, তখন এমন অনেক বক্তব্যের জন্য তাঁকে দিল্লির ধমক শুনতে হয়েছে। সেটা দিলীপ নিজেও স্বীকার করেন এবং নিজেকে ‘ঠোঁটকাটা’ বলে দাবি করে খানিকটা গর্বই প্রকাশ করে থাকেন। এ বার যে মন্তব্য দিলীপ করেছেন, সেই একই কথা তিনি অতীতেও বলেছেন। তবে তখন দোরগোড়ায় ভোট ছিল না। দ্বিতীয়ত, এ বার ভোটের প্রচারে যে বিজেপি সে ভাবে ব্যক্তি আক্রমণে যাবে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে ইতিমধ্যেই হয়ে যাওয়া তাঁর চারটি জনসভায় সে ভাবে কোনও ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ দেখা যায়নি। মাত্র এক বারই তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভাইপো’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। অথচ, ২০২১ সালের নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময়ে মোদী বার বার ‘দিদি, দিদি...’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন।

অতঃপর দিলীপ কী করবেন? দমে যাবেন? তাঁর অনুগামীরা এই চিঠি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দিলীপ তেমন কিছু করেননি। বরং দলের নির্দেশ মেনে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তবে দিলীপ পাল্টা রাজনীতির ছকও যে কষে ফেলেছেন তা স্পষ্ট। বুধবার সকালে বর্ধমান টাউন হল প্রাঙ্গণে চা-চক্র বসিয়েছিলেন দিলীপ। সেখানে অনেক মহিলাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কাছে দিলীপ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি কি মহিলাবিরোধী বলে মনে হয় আপনাদের?’’ সেই সঙ্গে তিনি কেন ওই মন্তব্য করেছিলেন, তার ব্যাখ্যাও দেন। বস্তুত, কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবি চিঠিতে দলকে কী লিখবেন, তা ঠিক করার আগেই দলের চিঠি নিয়ে পাল্টা প্রচারে নেমে পড়েছেন দিলীপ। ঘনিষ্ঠদের এ-ও বলেছেন যে, এই চিঠি পাওয়ার ফয়দা তুলতে হবে নির্বাচনী প্রচারে। বুঝিয়ে দিতে হবে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে কোথায় ফারাক।

তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠিতে কী লিখবেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে দিলীপ বলেন, ‘‘সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি কী লিখব, সেটা শুধু তাঁরা জানবেন যাঁদের লিখব।’’ তাঁকে ‘কোণঠাসা’ করতেই কি এই চিঠি? দিলীপ বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করা যায় না। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেটা চাইবেন কেন? আমি তো দলকে অনেক দিয়েছি। আরও দেব। এই আসন অনেক ভোটে জিতে উপহার দেব মোদীজিকে। আর এটাই আমাদের দলের পরম্পরা। কোনও ভুল হলে বড়রা বকাঝকা করতেই পারেন ছোটদের। এর মধ্যে মান-অভিমানের কিছু নেই।’’

এ বার থেকে কি তিনি একটু সতর্ক হয়ে মন্তব্য করবেন? দিলীপ বলেন, ‘‘সতর্ক আমি সব সময়েই। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূল আমার দলের সর্বোচ্চ নেতা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ দলের সভাপতিকে নাড্ডা-গাড্ডা-চাড্ডা বলে ক্ষমা চেয়েছিলেন? প্রধানমন্ত্রীকে অনেক নামে ডেকেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেহারা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। ক্ষমা চেয়েছেন কখনও?’’ এ সব কথা কি ভোটের প্রচারে বলবেন? দিলীপের জবাব, ‘‘বলতেই পারি। আমাদের সম্মাননীয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে রোজ খারাপ কথা বলা হয়। তাঁর বাবা প্রবীণ রাজনীতিক শিশিরবাবুকেও ওঁরা ছাড়েননি। কাঁথিতে গিয়ে শুভেন্দুদার বাবা তুলিয়েছেন। ক্ষমা চেয়েছেন কখনও?’’ রাগত স্বরে দিলীপ আরও বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে এসে নারী-পুরুষ ভাগ করা ঠিক নয়। পুরুষদের যা খুশি বললেও কেউ কিছু বলে না। অথচ কথায় কথায় মহিলা কার্ড খেলা হয়। এটা ঠিক নয়।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE