Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

সব পরিকল্পনা ঠিক মতো এগোলে তমলুক লোকসভা থেকে বিজেপির টিকিটেই প্রার্থী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

দেশে লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতে চলেছে এ মাসেই। আর আগামী মঙ্গলবার বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার একটি সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছেন সে কথা।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ২২:১০
Share: Save:

তিনি চাকরি ছাড়ছেন। তিনি রাজনীতিতে যাচ্ছেন। জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু কোন দলে যাচ্ছেন, তা জানাননি। জানিয়েছেন, তৃণমূলে কোনও ভাবেই নয়, অন্য কোনও দলে। এবং, যে দলে যাবেন, সে দল তাঁকে প্রার্থী করলে আসন্ন লোকসভা ভোটে লড়ার কথাও তিনি ভেবে দেখবেন। রাজ্য রাজনীতির নানা প্রান্তেই গত কয়েক দিন ধরে চোরাস্রোতের মতো বইতে শুরু করেছিল তাঁর ‘রাজনৈতিক’ ভবিষ্যতের কথা। বিভিন্ন সূত্রের যা খবর, তাতে সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, ইস্তফা দেওয়ার পর বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এবং প্রার্থী হচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে। যে কেন্দ্রে এখন খাতায়কলমে ‘তৃণমূল’ সাংসদ শিশির অধিকারীর পুত্র তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী।

দেশে লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতে চলেছে এ মাসেই। আর আগামী মঙ্গলবার বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার এবিপি আনন্দের সাক্ষাৎকারে বিচারপতি নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। কোন দলে যোগ দেবেন, সে প্রসঙ্গ উঠতেই বলেছিলেন, ‘‘বাম, বিজেপি, কংগ্রেস বা অনেক ছোট দল রয়েছে। কেউ টিকিট দিতে চাইলে আমি ভেবে দেখব।’’ বিজেপি তাঁর যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানায়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ইস্তফা গৃহীত হলে তবেই তিনি প্রতিক্রিয়া দেবেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য একেবারে চুপ থাকেননি। বলেছেন, “রাজনীতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নিষ্ঠাবান মানুষকে দরকার, সে তিনি যে দলেই যোগ দিন না কেন।” সেই সঙ্গে তাঁর মত, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপিই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাভাবিক পছন্দ হওয়া উচিত।’’ তবে বিজেপি ব্যতীত অন্য দলে যোগ দিলে আদর্শগত কারণে তিনি যে বিরোধিতা করবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুকান্ত।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এই আবহেই তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী ফেসবুকে একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এনেছেন যা বিচারপতির বিজেপি যোগ নিয়ে জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন সেটির সত্যতা যাচাই করেনি। শাসকদলের দাবি, ফোনালাপের ওই অডিয়ো ক্লিপে শুভেন্দুর পিতা শিশির স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তমলুক থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই দাঁড়াচ্ছেন বিজেপির টিকিটে। শিশিরের কণ্ঠ বলে তৃণমূল যা দাবি করেছে, সেই কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে, ‘‘না না, তমলুকে আমার ছেলে টিকিট পায়নি। তমলুকে পাবে কেন? তমলুকে অভিজিৎ গাঙ্গুলি।’’

কিন্তু তমলুকেই কেন? অনেকে বলছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে যদি সত্যিই তমলুক থেকে প্রার্থী করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা হয়ে থাকে, তা হলে এর নেপথ্যে রয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পেশা। তিনি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা শুনেছেন, ‘সাড়া জাগানো’ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের মনে আশা-ভরসা জুগিয়েছেন যে, তাঁরাও বিচার পাবেন। ঘটনাচক্রে, ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের একটি বিরাট অংশই পূর্ব মেদিনীপুরের। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই আবার তমলুকের। যাঁদের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর ‘অগাধ আস্থা’। এই দিকটি নজরে রেখেই হয়তো বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে তমলুক থেকে দাঁড় করানোর কথা ভেবে থাকতে পারে বিজেপি।

এর সঙ্গে আরও একটি অভিমত রয়েছে। অনেকের দাবি, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, শুভেন্দুর দুই ভাই সৌমেন্দু এবং দিব্যেন্দুকে এ বারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। সৌমেন্দু গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দিব্যেন্দু এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ। ঘটনাচক্রে তমলুকেরই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে শাসকদলের যে আর কোনও সম্পর্ক নেই, তা রাজ্য-রাজনীতিতে কারও অজানা নয়। এ বার সৌমেন্দুকে বিজেপি কাঁথির প্রার্থী করার পর জল্পনা তৈরি হয়েছিল, দিব্যেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়ে তমলুক থেকে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যদি তমলুকের প্রার্থী হন, তা হলে দিব্যেন্দুর প্রার্থী হওয়া হচ্ছে না। অন্তত পূর্ব মেদিনীপুরে। এ ক্ষেত্রে দিব্যেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য কেউই কোনও মতামত দিতে চাইছেন না। তবে কারও কারও মত, দিব্যেন্দু তমলুক থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়ালে তৃণমূল জোরালো ভাবে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলতে পারত। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দাঁড়ালে শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সেই অস্ত্র অনেকটাই ভোঁতা হয়ে যাবে। সৌমেন্দু প্রার্থী হওয়ার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘সৌম্যেন্দু আমার ভাই বলে তো টিকিট পায়নি! বিজেপির সমর্থকেরা ওকে চায় বলে পেয়েছে। সেই জন্যই নেতৃত্ব ওর উপর আস্থা রেখেছেন। ও তো জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদকও।’’

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তমলুকের বিজেপি প্রার্থী হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার পর থেকেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশ বা রায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে শাসক তৃণমূল। দলের মুখপাত্র অরূপ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘শিশির অধিকারী নিজেই স্বীকার করে নিলেন যে, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীর নাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরেও কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের বিগত দিনের সব রায় নিরপেক্ষ ছিল, পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না। ফোনের বার্তালাপের ক্লিপ সমাজমাধ্যমের সূত্রে প্রাপ্ত।’’ অরূপ আনন্দবাজার অনলাইনকেও বলেছেন, ‘‘বিজেপি দাবি করে যে, তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। দিল্লি থেকে প্রার্থী ঘোষণার আগেই শুভেন্দু অধিকারীর বাবা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম বলে দিলেন। যাঁর নাম বললেন তিনি এখনও বিচারপতির চেয়ারে রয়েছেন। এতে বিজেপির ওই দাবির আর সারবত্তা থাকে না। এর থেকেই স্পষ্ট, বিচারপতি হিসাবে তিনি যা রায় দিয়েছিলেন, সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। আর বিজেপির কী দশা, এক জন খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ (শিশির, কাঁথির সাংসদ) জেপি নড্ডার আগে বিজেপির প্রার্থীর নাম বলে দিচ্ছেন।’’

রবিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারের পর তৃণমূলের কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভেবে ভাল লাগছে যে, আমি যে কথা ওঁকে বলেছিলাম, উনি সেই মর্মেই এগোচ্ছেন। ফলে এটাও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ওঁর যে রায় বা পর্যবেক্ষণ ছিল, তা রাজনৈতিক।’’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘আমরা বার বার বলতাম, ওই চেয়ারে বসে উনি যে মন্তব্যগুলো করতেন, তা করা যায় না। এ বার যদি উনি কোনও রাজনৈতিক দলে যান, তা হলে রাজনৈতিক লড়াই হবে৷ আমি জানি না, শুভেন্দু কতটা পারবে৷ কিন্তু আমার কাছে তমলুকে তৃণমূলই জিতবে৷ তাই উনি জাস্টিসের সিট ছেড়ে দিয়ে যদি হেরে যান, এটাতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগবে।’’

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপি প্রার্থী হওয়ার জল্পনা আরও বাড়িয়েছে দুই তারিখের ‘ঘনিষ্ঠতা’। গত বুধবার শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, আগামী ৭ মার্চ ‘বড় যোগদান’ হতে চলেছে বিজেপিতে। ঘটনাচক্রে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দেবেন ৫ তারিখ। এতে দুইয়ে দুইয়ে চার যোগফল দেখছেন অনেকে। আবার অনেকে প্রশ্ন রাখছেন, রাজনৈতিক অঙ্কে সব সময় দুইয়ে দুইয়ে চার হয় কি?

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Justice Abhijit Gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE