Advertisement
১০ মে ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

শুভেন্দু বলেছিলেন, ৭ মার্চ ‘বড় যোগদান’, ৫ তারিখে বিচারপতির ইস্তফা! দুইয়ে দুইয়ে চার করছে পশ্চিমবঙ্গ

শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, ৭ মার্চ বড় যোগদান হবে। অন্য দিকে, রবিবারই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতির ময়দানে যাবেন। তার পরে অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন।

Speculation about political future of Justice of Calcutta High Court Abhijit Gangopadhyay

শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে) এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৬
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতেও পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়। গত বুধবার সেই সৌমেনকেই দলে ফিরিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, ৭ মার্চ ‘বড় যোগদান’ হবে। অন্য দিকে, রবিবারই পেশাজীবন থেকে ইস্তফা দিয়ে ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যেতে চান বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরই জানান, মঙ্গলবার তিনি বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, আগামী ৭ মার্চ তাদের দলে যোগ দেবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ওই সূত্রটির আরও দাবি, রাজ্যের একটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী হতে চলেছেন তিনি।

শুভেন্দুর বড় যোগদানের ঘোষণা এবং বিজেপি সূত্রের দাবি— এই দু’টিকে মিলিয়ে অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন। যদিও তিনি কোন দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে রবিবারও ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “রাজনীতির ময়দানেই আমি যাব। কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে শুরু করব, সেটা আজই বলছি না।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনি কি লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে চলেছেন?’’ উত্তরে বিচারপতি বলেন, ‘‘যদি আমি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিই, তারা যদি আমাকে টিকিট দেয়, আমি বিবেচনা করে দেখব।’’ পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিচারপতি জানান, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির কাছে ইস্তফা দেওয়ার পর ওই দিনই দুপুর দেড়টায় হাই কোর্ট সংলগ্ন সূর্য সেন মঞ্চের পাদদেশে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

বিচারপতির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনার আবহে মুখ খুলেছে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলিও। বিচারপতিকে ‘ব্যতিক্রমী চরিত্র’ বলে অভিহিত করে তাঁকে কংগ্রেসে স্বাগত জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সাম্প্রতিক অতীতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন অধীর। ভোট দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধীরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, বিচারপতি বিজেপিতে যোগ দিলেও তিনি সমর্থন করবেন কি না। সাবধানী উত্তর দিয়ে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব কখনও সঙ্কীর্ণ মানসিকতার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করি না। তিনি লড়াকু। তিনি প্রতিবাদী চরিত্র।” পরে অধীর বলেন, “বিচারপতি বিজেপিতে যোগ দিলে আখেরে তৃণমূলেরই লাভ হবে।” নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে অধীর বলেন, “সে ক্ষেত্রে তৃণমূল প্রচার করবে যে, তাঁর দেওয়া রায়গুলি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল।”

বইমেলায় বামপন্থীদের বইয়ের স্টলে যাওয়ার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কেউ কেউ স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। রবিবার বিচারপতির ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যেতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যে কোনও মানুষেরই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার অধিকার আছে।” তবে একই সঙ্গে দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক সারিতে রেখে সুজন বলেন, “পেশাগত ক্ষেত্রের মানুষেরা রাজনীতিতে এলে সেটা নিঃসন্দেহে ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ।” তবে বিচারপতির বাম দলে যোগ দেওয়া নিয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। যে দলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা, সেই বিজেপি অবশ্য ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজনীতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নিষ্ঠাবান মানুষকে দরকার, সে তিনি যে দলেই যোগ দিন না কেন।” তবে বিজেপি ব্যতীত অন্য দলে যোগ দিলে আদর্শগত কারণে তিনি যে বিরোধিতা করবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুকান্ত।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে স্বভাবতই কটাক্ষ করেছে শাসক তৃণমূল। দলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, উনি বিচারপতির চেয়ারে বসে রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন। রাজনীতি করতে হলে সরাসরি মাঠে নেমে রাজনীতি করুন।” তার পরই অরূপের স‌ংযোজন, “ওঁর একাধিক রায় সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করেছে। রাজনীতিতে সুপ্রিম কোর্ট হল জনগণ। মানুষই এখানে ওঁকে সুপ্রিম-রায় দিয়ে দেবে।” তৃণমূলের পদত্যাগী মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবশ্য রাজনীতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু অন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে যদি কেউ রাজনীতিতে আসেন, তা হলে সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে তা স্বাস্থ্যকর বা ইতিবাচক।

সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, যেগুলির অধিকাংশই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে গিয়েছে। কুণাল ঘোষ-সহ তৃণমূলের একাধিক নেতা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজনীতির ময়দানে নেমে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। রবিবার সেই আহ্বানের কথাই আরও এক বার মনে করিয়ে দেন বিচারপতি। জানান, তিনি সেই আহ্বানেই সাড়া দিতে চলেছেন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE