Advertisement
E-Paper

এই দার্জিলিং বিশ্বাস-হীনতার কাহিনি শোনায়

প্রথমে খানিকটা সঙ্কোচ ছিল। কিন্তু দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে কথা বলার ফাঁকে বিমল গুরুঙ্গকে বললাম, ‘‘আমি কিন্তু সাংবাদিক নই, অভিনেতা। আপনি খোলা মনে কথা বলতে পারেন।’’ এর পরে অবশ্য জিটিএ প্রধানকে বেশ হাসিখুশিই দেখায়।

বাদশা মৈত্র

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০০
বাদশার সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র

বাদশার সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র

প্রথমে খানিকটা সঙ্কোচ ছিল। কিন্তু দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে কথা বলার ফাঁকে বিমল গুরুঙ্গকে বললাম, ‘‘আমি কিন্তু সাংবাদিক নই, অভিনেতা। আপনি খোলা মনে কথা বলতে পারেন।’’ এর পরে অবশ্য জিটিএ প্রধানকে বেশ হাসিখুশিই দেখায়।

এ বারের দার্জিলিং সফরের উদ্দেশ্য অবশ্য নিসর্গ দর্শন নয়। একেবারেই মানুষ দেখতে আসা, তাঁদের জীবনযাপন, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কাছ থেকে দেখার মধ্যেই তাঁরা কী ভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন, তা-ও বোঝার চেষ্টা করা।

দার্জিলিং অবশ্য আছে দার্জিলিংয়েই। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ম্যালে যথারীতি পর্যটকের ভিড়। ভিড় কেভেন্টার্সে, গ্লেনারি’স-এ। আবহাওয়াও চমৎকার। খুব সকালে ও সন্ধ্যায় ঠান্ডার দাপট আছে, জ্যাকেট চাপাতে হচ্ছে। এ ছাড়া দিনের বাকি সময়টা বেশ আরামদায়ক।

এরই ফাঁকে কথা বলতে বলতে বোঝা গেল, রাজ্য সরকারের ভুমিকায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুঙ্গ ক্ষুব্ধ। একই সঙ্গে হতাশও। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার জিটিএ-কে যে ক্ষমতা দিয়েছিল তা প্রয়োগ করার সুযোগ তাঁরা পাচ্ছেন না। কারণ, রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ বড় বেশি। বিমল গুরুঙ্গ বলছেন, ‘‘রাজ্যের তৃণমূল সরকার যে টাকা জিটিএ-কে দিয়েছে বলে দাবি করছে, বাস্তবে দিয়েছে তার থেকে অনেক কম। এর হিসেব আমাদের কাছে আছে।’’ এ ছাড়াও পাহাড়ে রাজ্য সরকার এতগুলি বোর্ড গঠন করেছে যে জিটিএ-র পক্ষে সুষ্ঠু ভাবে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন বোর্ডকে রাজ্য সরকার সরাসরি টাকা দিচ্ছে। জিটিএ প্রধানের অভিযোগ, ‘‘এর ফলে পাহাড়ে জাতিদাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভাজন তৈরি হচ্ছে।’’ বিভিন্ন বোর্ড বা পর্ষদ গঠন করে এই বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে বলে গুরুঙ্গের দাবি। তাঁর বক্তব্য, চুক্তি অনুযায়ী এই পুরো বিষয়টাই জিটিএ-র হাতে থাকা উচিত।

দেখুন সেই ভিডিও

আনন্দবাজার ওয়েবসাইটকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিমল গুরুঙ্গ দাবি করেন, সিপিএম সরকারের থেকেও এই নতুন সরকার অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। অনেক বেশি ক্ষতিকারক। রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি বিমল অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পাহাড়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে। গুরুঙ্গ বলেন, পাহাড়ে নতুন মেডিক্যাল কলেজ নেই, অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও। এমনকী, নাক-কান-গলার সমস্যাতেও ডাক্তার দেকানোর জন্য শিলিগুড়ি যেতে হয়। তিনি মনে করেন, পাহাড়ে আরও অনেক বেশি স্কুল ও কলেজ দরকার। তাঁর মন্তব্য: ‘‘পাহাড়ে ক্লাস টু পর্যন্ত পড়ার পরেই একটা বাচ্চাকে ভাল স্কুলে পড়ানোর জন্য শিলিগুড়িতে পাঠাতে হয়।’’ বস্তুত, দার্জিলিংয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা বড় ক্ষোভ রয়েছে।

তাঁরই একদা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হরকাবাহাদুর ছেত্রী এ বারে তৃণমূলের টিকিটে কালিম্পং কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। হরকাবাহাদুরকে নিয়ে কি গুরুঙ্গের কোনও ক্ষোভ বা দুঃখ রয়েছে? হেসে এ কথা উড়িয়ে দিয়ে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘এর কোনও প্রশ্নই নেই। আমিই ওঁকে নেতা হিসেবে তুলে ধরেছি।’’

পাহাড়ের মানুষ যদিও পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি ছাড়েননি। বিমলও নন। ‘‘আমাদের দাবি তো পূরণ হবে পৃথক গোর্খাল্যান্ড হলে,’’ বলেন গুরুঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, জিটিএ-কে ঠিক ভাবে কাজ চালাতে দিলে হয়তো এই অসন্তোষ এত তীব্র হত না। পাহাড়িয়া মানুষজনের মুখেও ঘুরেফিরে বিশ্বাসহীনতার কথা! পাকা চাকরির অভাবের কথা বড় শোনা গেল।

কাঞ্চনজঙ্ঘাও কি অসন্তুষ্ট? না হলে এত মুখ ভার কেন তার? এক বার দেখা দিয়েই সে মুখ লুকলো!

ঘুম স্টেশনে ঘোরার সময় বড্ড নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লাম। মনে পড়ল, ছোট্টবেলায় যখন এসেছিলাম, ঘনঘোর বর্ষার কালে টয় ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে এক নেপালি ভদ্রলোককে লোহার কড়াই থেকে বালি ছড়াতে দেখেছিলাম, পাছে ট্রেনের ইঞ্জিন লাইন থেকে পিছলে না যায়। সে দৃশ্য আবার চোখের সামনে ভেসে উঠল।

পাহাড়ে বোধহয় এখন সে রকম কারওর বড় প্রয়োজন!

আরও পড়ুন:
ভোটে প্রার্থীর থেকে দলকে বেশি প্রাধান্য দেব

badsha moitra bimal gurung assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy