Advertisement
E-Paper

‘ওয়াক ওভার’-এর গড়বেতায় শাসকের চিন্তা কেন?

সিপিএম ময়দানে নেই। আমরা তো ‘ওয়াক ওভার’ পাচ্ছি! হাটে-বাজারে-রাস্তাঘাটে সর্বত্রই এমনই আলোচনা। গড়বেতার মানুষ রাজনীতি সচেতন। হবে না-ই বা কেন? এখানেই যে ছোট আঙারিয়া হয়েছে। দিনের পর দিন বোমা-বন্দুকের লড়াই হয়েছে। ঝাণ্ডা তুলে গ্রাম দখল হয়েছে। গ্রামে যে রঙের ঝাণ্ডা, সব মানুষ সে পক্ষের! রাজাদের রাজ্য দখলের মতো। তাই এক সময়ের সিপিএমের ‘গড়’ গড়বেতা এখন তৃণমূলের রাজ। তাই বলে ‘ওয়াক ওভার’!

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ১৮:৫৫

সিপিএম ময়দানে নেই। আমরা তো ‘ওয়াক ওভার’ পাচ্ছি!

হাটে-বাজারে-রাস্তাঘাটে সর্বত্রই এমনই আলোচনা। গড়বেতার মানুষ রাজনীতি সচেতন। হবে না-ই বা কেন? এখানেই যে ছোট আঙারিয়া হয়েছে। দিনের পর দিন বোমা-বন্দুকের লড়াই হয়েছে। ঝাণ্ডা তুলে গ্রাম দখল হয়েছে। গ্রামে যে রঙের ঝাণ্ডা, সব মানুষ সে পক্ষের! রাজাদের রাজ্য দখলের মতো। তাই এক সময়ের সিপিএমের ‘গড়’ গড়বেতা এখন তৃণমূলের রাজ। তাই বলে ‘ওয়াক ওভার’!

সুশান্ত ঘোষ, তপন ঘোষ, সুকুর আলিরা থাকতে ‘ওয়াক ওভার’ হবে! কেমন খটকা লাগল। এ বার একটু বসা যাক চায়ের দোকানে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই কথাটা কানে এলো, “আবার এসেছে রে!” চোখে চোখে ইশারা। কে এসেছে? সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। কথাটা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল গড়বেতা শহর জুড়ে। এ বার তৃণমূল নেতাদের শরীরে কিছুটা টান টান ভাব। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিলাম সিপিএম পার্টি অফিসের দিকে। না, সুনসান পার্টি অফিস। আগের সেই জমাটি ভাব নেই। পার্টি অফিসের গলির রাস্তাটা এখন অনেকটা অচ্ছুত্‌ যেন। কেউ গেলেই কয়েকটা সন্দেহের চোখ আটকে যায় শরীরে। পার্টি অফিয়ে গিয়ে দেখলাম, গোটা তিরিশেক কর্মী নিয়ে সুশান্তবাবু। ঠিক হচ্ছে রণকৌশল। তার মাঝেই দেখা গেল, গলির রাস্তাতে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। দু’দিকে তৃণমূলের গোটা দশেক লোক রাস্তায় যাওয়া লোকজনকে মাপছে। পার্টি অফিসের সামনে পুলিশ পর্যন্ত নেই। ‘ওয়াক ওভার’ তো এত নজরদারি কেন? মিছিল নয়, পথসভা নয়, চার দেওয়ালে গোটা তিরিশেক কর্মী নিয়ে বৈঠক, তাতেও আতঙ্ক!


গনগনি

ওয়াক ওভারের গল্প শোনার পর এই ঘটনায় ফের খটকা। তা হলে কি এখনও সিপিএমের প্রতিপত্তি রয়েছে? প্রশ্ন তো করা গেল, কিন্তু উত্তর দেবে কে? কেশপুর-গড়বেতার চরিত্রটাই এমন যে, বিরোধীরা কথা বলে না। পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে গড়বেতা আদালত হয়ে মেন রাস্তায় এলাম। ফুট কয়েক দূরেই থানা। সামনের পানের দোকানে দু’জন খদ্দের। একটা দেশলাই কেনার অছিলায় জিগ্যেসই করে বসলাম, এ বার ভোট কেমন হবে গো? অচেনা মানুষকে এ সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ধার ধারে না গড়বেতা। দোকানীও আড়চোখে তাকিয়ে পান বাঁধতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। একটু থানায় যাওয়া যাক। ওসি-র সঙ্গে সবে গল্প শুরু হয়েছে। হঠাত্‌ দেখি মোবাইলটা বেজে উঠল। কথা শুনেই মনে হল, তৃণমূল ভিড় জমাচ্ছে সিপিএম পার্টি অফিসের কাছে। ওসি বললেন, “দেখুন তো কী বিপদ। দেখছি আমাকেই বেরোতে হবে।” গণ্ডগোলের আশঙ্কায় আমিও বেরিয়ে পড়লাম। তত ক্ষণে দেখি পুলিশের গাড়িও পার্টি অফিসে হাজির হয়ে গিয়েছে। ওয়াক ওভারের আনন্দে যেখানে ভোটে জেতার রেকর্ড গড়ার চিন্তায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা, জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা, সেখানে চার দেওয়ালে তিরিশ জনের কর্মী বৈঠক নিয়ে এত বাড়াবাড়ি!

হ্যাঁ, ভোট নিয়ে এখানে এতটাই বাড়াবাড়ি হয়। কেন? সিপিএম ময়দানে নেই, তাই খালি চোখে দেখা যায়নি। অদৃশ্য সিপিএমকে কি আবার জাগিয়ে তুলবে সুশান্ত ঘোষ-তপন ঘোষ-সুকুর আলিরা! এই দুশ্চিন্তার ভূতই তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূলকে। এক জন জানিয়ে গেলেন, একটু ভাল করে খোঁজ নিন। তা হলেই বুঝতে পারবেন, চোরাস্রোতটা কেমন। খোঁজ নেওয়া শুরু হল। জানা গেল, সিপিএমের কৌশল। গড়বেতা শহরেই রয়েছে গনগনি। প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে তার শোভা। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শীলাবতী নদী। লোককথা, গনগনিতে নাকি এক সময় ভীমের সঙ্গে বকাসুরের লড়াই হয়েছিল। দু’জনের লড়াইয়ের চাপে বড় বড় গর্ত হয়েছে চার দিকে। আসলে ভূগোলের শিক্ষকেরা বলেন, উপর থেকে নীচে জল নামার কারণে ভূমিক্ষয়েই এই সব খাড়ির জন্ম। তৃণমূল এখানে ভীম-বকাসুরের লড়াইয়ের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর সিপিএম যেন বাস্তবের খাড়ি। পথসভা, মিটিং, মিছিল নয়। চিহ্নিত হয়ে যাবেন নেতা-কর্মীরা। আবার ঘরছাড়া হতে হবে। তার চেয়ে ঘরে রেখে যদি বুথ পর্যন্ত সকলকে নিয়ে যাওয়া যায়। তা হলে ‘ওয়াক ওভার’ গল্পের উপসংহারটা কী হবে এখন থেকেই বলা কঠিন।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

assembly election 2016 Suman Ghosh Paschim Medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy