Advertisement
০৯ মে ২০২৪
ভয় পেয়েছে তৃণমূল, দাবি বাম-কংগ্রেস নেতাদের

অভিষেকের মুখে সেই জোটই

মুখে যত না উন্নয়নের ফিরিস্তি, তার চেয়েও ঢের বেশি শব্দ খরচ করলেন বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে। রবিবার বীরভূমের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের মুখে শুধুই ‘জোটের কথা’।

যুবরাজের প্রস্থান। বোলপুরের বাহিরীর সভা সেরে ফিরে যাচ্ছেন যুব তৃণমূল সভাপতি। (ইনসেটে) কেষ্টদার সঙ্গে।  ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

যুবরাজের প্রস্থান। বোলপুরের বাহিরীর সভা সেরে ফিরে যাচ্ছেন যুব তৃণমূল সভাপতি। (ইনসেটে) কেষ্টদার সঙ্গে। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

মুখে যত না উন্নয়নের ফিরিস্তি, তার চেয়েও ঢের বেশি শব্দ খরচ করলেন বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে।

রবিবার বীরভূমের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের মুখে শুধুই ‘জোটের কথা’। যা শুনে বিরোধীদের দাবি, জোটকে ভয় পেয়েই বাম-কংগ্রেসকে বিঁধছেন অভিষেক। একই জিনিস দেখা গিয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। প্রথম দফায় জঙ্গলমহলের কেন্দ্রগুলিতে প্রচারে গিয়ে বারবারই তৃণমূল নেতাদের মুখে এই ‘জোট-ভীতি’ দেখা গিয়েছে বলে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। দ্বিতীয় দফার ভোট প্রচারে বীরভূমে এসে তৃণমূলের তরুণ তুর্কির পক্ষে তার থেকে ব্যতিক্রমী কোনও পথ নেওয়া সম্ভব নয় বলেই বিরোধীদের ব্যাখ্যা।

ঘটনা হল, হেলিকপ্টারে চড়ে এসে এ দিন দুপুর থেকে বিকেল— জেলার তিন বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারসভায় যোগ দেন অভিষেক। প্রথমে দলীয় প্রার্থী আব্দুর রহমানের প্রচারে মুরারইয়ের পলসার জনসভায় যোগ দেন তিনি। ওই সভায় ছিলেন রামপুরহাটের তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে দুপুর আড়াইটে নাগাদ পৌঁছন সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজের মাঠে। প্রার্থী নীলাবতী সাহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বোলপুরের প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের প্রার্থী মনিরুল ইসলামও। ওই সভার বক্তব্য রাখার পরেই অভিষেককে নিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে যায় বোলপুরের বাহিরীতে। সেখানে তিনি যোগ দেন নানুরের দলীয় প্রার্থী গদাধর হাজরার প্রচারসভায়। ওই সভায় যোগ দিতে দেখা যায় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও। যদিও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাহিরীর সভায় দেখা মেলেনি নানুর এলাকার দাপুটে কাজল শেখের।

তিনটি সভাতেই অভিষেকের বক্তব্যের সুর আগাগোড়া এক রকমই ছিল। যেখানে অভিষেকের বক্তব্যে গত পাঁচ বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে উন্নয়নের প্রসঙ্গ এল ঠিকই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলেন বিরোধীরা। অভিষেক প্রথমেই দাবি করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থনৈতিক প্রতিকুলতা পেরিয়ে, হাজারও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে, অমানুষিক পরিশ্রম করে বাংলার সোনার দিন ফিরিয়ে এনেছেন। ৩৪ বছরের বাংলার মরুভূমিকে আজ সোনার খনিতে পরিণত করেছেন।’’ এই ‘উন্নয়ন’ বিরোধীদের চোখে পড়ে না বলে কটাক্ষও করেন তিনি। তাঁর শ্লেষ, ‘‘আমাদের সরকারের প্রথম কাজ কী হবে জানেন? অঞ্চলে অঞ্চলে কয়েকটা ছানি অপারেশন করার হাসপাতাল খুলব। কারণ এদের (বিরোধীদের) চোখে ছানি পড়ে গিয়েছে। লাল রক্তে উন্নয়নের কাজ চোখে পড়ছে না। এদের চোখে খালি কুৎসা পড়ছে।’’ বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দাবি করেন, ৩৪ বছরের বাম সরকারের থেকে চার বছরের উন্নয়নের পরিসংখ্যানে ঢের এগিয়ে তৃণমূল সরকার।

এর পরেই বাম-কংগ্রেসকে ‘কালসাপ’ বলে দাবি করে অভিষেক একহাত নেন বিরোধীদের। জোটের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সূর্যকান্ত মিশ্রকে নারায়ণগড়ে ৪০ হাজার ভোটে হারানোর হুঙ্কারও দেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আপনারা কী করেছেন? খালি দুর্নীতি, দুঃশাসন, খুন, সন্ত্রাস। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। বাংলার মাটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন!’’ এখান থেকেই অভিষেক একের পর এক তোপ দাগেন বাম-কংগ্রেস জোটকে। জোটের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আপনারা যে স্বপ্ন নিয়ে জোট করেছিলেন, যে বিরোধী ভোট এককাট্টা হবে। আপনাদের স্বপ্ন থেকেই যাবে। কেন জানেন? আপনারা গদির লোভে, ক্ষমতার লোভে জোট করেছেন।’’ বাম-কংগ্রেস জোটকে ‘নীতিহীন জোটে’র তকমা দিয়ে তা সাধারণ মানুষ মেনে নেবেন বলেও অভিষেক দাবি করেন। অভিষেকের কথায়, ‘‘আপনারা বলছেন, মানুষের জোট করেছেন। এই যে এত মানুষ সভা শুনছেন, তারা কি অমানুষ? ক’জন মনে করেন জোটের নৈতিকতা রয়েছে? মানুষের জোট আবার কী! আরে বাঘের বাচ্চা হলে, মানুষগুলোর উপর ছেড়ে দাও। তোমরা তোমাদের পথে যাও, মানুষ বুঝে নেব। মানুষের জোট আমাদের, তোমাদেরটা ফানুসের জোট!’’

যুব তৃণমূল সভাপতি একহাত নেন বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতমা হোতা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকেও। অধীরকে ‘মুর্শিদাবাদের মিরজাফর’ আখ্যা দিয়ে অভিষেক দাবি করেন, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার অর্থ বাংলার মাটিকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে সিপিএমের কাছে বিকিয়ে দেওয়া। তাঁর অভিযোগ, “অধীর চৌধুরী চৈত্র সেলের মতো কংগ্রেসের তেরঙ্গা ঝান্ডা লালপার্টির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।”

বীরভূমের বিরোধী নেতারা যদিও অভিষেকের বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। জোটের নেতাদের দাবি, শাসকদলের নেতাদের দুর্নীতি আর অত্যাচারে বীতশ্রদ্ধ জেলার মানুষ। ক্রমে শাসকদলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকায় আতঙ্কিত তৃণমূল নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ভয় পায়। জোট হওয়ায় পিসি থেকে ভাইপো সবাই ভীত। তাই জোটকে ওরা ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে। জোটের নামে অপপ্রচারের রাস্তা নিতেও বাধ্য হচ্ছে।’’ তাঁর প্রতি অভিষেকের কটাক্ষ নিয়ে যদিও মন্তব্য করতে নারাজ অধীর। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই ছোকরা পিসির কোলে মানুষ হয়েছে। কে এক লালুভুলু কী বলল, তার জবাব আমি দেব না।’’ এ ব্যাপারে জবাব দেওয়ার জন্য বীরভূমে কংগ্রেসের বুথ স্তরের নেতারাই যথেষ্ট বলে অধীরের পাল্টা কটাক্ষ। যা শুনে অভিষেককে একহাত নিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পাঁচ বছরে ঠিক কাদের ‘উন্নয়ন’ হয়েছে, নারদের ক্যামেরায় তার প্রকৃত চিত্রনাট্য ধরা পড়ছে। জোটকে তো বটেই অভিষেকরা ওই ঘুষকাণ্ডের জবাব দিতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন। কারণ, তাঁরা প্রকৃত ঘটনার কথা স্পষ্টই জানেন। তাই নারদ নিয়ে চুপ করে গিয়ে জোটের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 west bengal abhishek
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE