ইলামবাজারে আরএসপি প্রার্থী তপন হোড়ের সমর্থনে যৌথ মিছিল। (ইনসেটে) তৃণমূলের সভায় ভিড়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ভোটের মুখে বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে বড়সড় মিছিল হল ইলামবাজারে।
সেই ইলামবাজার, যেখানে গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি দেখা যায়নি বামেদের তরফে। নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের তরফে লাগাতার হুমকি, সন্ত্রাসের কারণেই প্রকাশ্যে কর্মসূচি থেকে সরে আসার কৌশল নেওয়া হয়। রবিবার সেই মহল্লাতেই হাজার খানেকের কিছু বেশি মানুষের উপস্থিতিতে মিছিল করল বামেরা। তাতে যোগ দিল কংগ্রেস নেতাকর্মীরাও। চলল আবির খেলাও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, ভোটের মুখে ইলামবাজারের এই কর্মসূচি বাম-কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের অক্সিজেন যোগাবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলছেন, সত্যিই এ দিন মিছিলে উপস্থিত বাম-কংগ্রেস নেতাকর্মীদের শরীরী ভাষা ছিল অন্য রকম। তাতে মিশে ছিল আত্মবিশ্বাস, স্বতস্ফূর্ততা। ইলামবাজারের একটি জায়গায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের পাশ দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে— ‘‘আমরা এখনও বেঁচে আছি। আয় তোরা দেখে যা, সলতে ফের জ্বলে উঠেছে...’’। রাস্তা জুড়ে তখন চলছে লাল আবির খেলা। দিন চারেক আগেই গিয়েছে হোলি। এলাকার বাসিন্দারা এ দিন দেখলেন অন্য হোলি। তৃণমূল নেতারা সিপিএমের অভিযোগ মানতে চাননি।
বিরোধী জোটের এমন হোলির মরসুমে হাত গুটিয়েও বসে নেই তৃণমূল। নির্বাচনের দিন যত এগোচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে সভা-সমিতি, সংবর্ধনায় জোয়ার আনছে তারা। এ দিনই তৃণমূলের আদিবাসী সেলের উদ্যোগে ইলামবাজার ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নিয়ে সংবর্ধনা এবং রাজনৈতিক সম্মেলন ছিল থানা লাগোয়া পানাগড়-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের ধারে ফুটবল মাঠে। দলীয় প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ-সহ দলের এবং সেলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে।
তৃণমূলের ইসলামপুরের ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম এ দিন বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন আক্রমণের মূল লক্ষ্যই হল জোট। তৃণমূলের তরফ থেকে মঞ্চ থেকে দাবি করা হয়, আদিবাসীদের নিয়ে এমন সম্মেলন রাজ্যে প্রথম। জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে রাজ্য জুড়ে আদিবাসীদের জন্য তৃণমূলের সাম্প্রতিক কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন নেতারা। উদ্যোক্তাদের দাবি, সাত হাজারের বেশি আদিবাসী মানুষজন জমায়েত সম্মেলনে উপস্থিত হন। এ দিন কর্মসূচি ছিল বিজেপি-রও। ইলামবাজারের ভোটারদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে প্রচার করেন বিজেপি-র প্রার্থী তথা বীরভূমের সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে আদিবাসী মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ‘বামেদের অপশাসন’ এবং ‘তৃণমূল সরকারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ সরব হয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা।
এ দিন ইলামবাজারের বাম-কংগ্রেসের যৌথ মিছিল নিয়ে চর্চা দেখা গিয়েছে সর্বত্রই। বাম নেতাদেরও আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে এই মিছিল। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘ভুললে চলবে না মিছিলে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা কেউই বাইরের লোক নন। বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার।’’ এই কেন্দ্রে ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী বাম-কংগ্রেস শিবির।
যৌথ মিছিল থেকে কর্মী সমর্থকদের শাসক বিরোধী ক্ষোভ উগরাতে দেখে, তাঁদের সংযত থাকার কথা বলেন নেতারা। জোট প্রার্থী তপন হোড় বলেন, “পথসভায়, প্রচার সভায় এবং মহামিছিলে কয়েক হাজার মানুষ পা মিলিয়েছেন। হাজার তিনেকের কিছু বেশি মানুষ বামফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। এটাই প্রাপ্তি।” মিছিলে পা মেলানো কর্মী সমর্থকদের আবির খেলা প্রসঙ্গে তপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাধারণ মানুষ দমবন্ধ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য মরিয়া। এটা তারই ইঙ্গিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy