গণনাকেন্দ্রে পাহারা আসানসোলে। ছবি: শৈলেন সরকার।
খানিক দোলাচল ছিল। কিন্তু ভোট পরবর্তী সমীক্ষা বেরোনোর পরে সেটা যেন উধাও এক শিবিরে। অন্য শিবির অবশ্য বলছে, সমীক্ষা তো সব সময় মেলে না। তাই খেলা এখনও বাকি। তবে জল্পনা যাই হোক, মাস দেড়েকের অঙ্ক কষা শেষে এ বার ফলাফলের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সব পক্ষই।
সোমবার যে সব ভোট পরবর্তী সমীক্ষা প্রকাশ হয়েছে, সবেই ইঙ্গিত রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে তৃণমূল। ভোটপর্বের সময়ে জোটের হাওয়া জোরদার হওয়ার খবরে যাঁদের গলায় ছিল খানিক চিন্তার সুর, সোমবার সন্ধ্যার পরে তাঁদের মুখে হাসি। এখন তাঁরা তোড়জো়ড় শুরু করে দিয়েছেন ফল বেরনোর পরের কর্মসূচি নিয়ে।
সকালে বিদায়ী মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। এ বার ফল বেরনোর পরে বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। গণনাকেন্দ্রের সামনেও জটলা করা যাবে না। এ সব নিয়ে খানিকটা অসন্তুষ্ট তৃণমূল কর্মীরা। এক জন যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘এ বার কিন্তু বেশি কড়াকড়ি করছে কমিশন।’’ আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘অসুবিধে নেই। বিজয় মিছিলের দিনটা শুধু পাল্টাবে। দাদা যে দিন মন্ত্রী হবেন, সে দিনই না হয় মিছিল হবে। ব্যান্ডপার্টি বায়না করে রাখ।’’
‘দাদা’ অবশ্য ফল বেরোনোর আগে মুখ খুলতে নারাজ। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মলয়বাবু গত বার ছিলেন শ্রমমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গত বার যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা সামলেছি। নিজের পছন্দ কিছু নেই। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’ পুরসভা চত্বরেও চাপা টেনশন। মেয়রে জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্রার্থী হয়েছেন পাণ্ডবেশ্বরে। তাঁর সঙ্গে পুরসভায় দেখা করতে আসা কিছু লোকজন যেমন আলোচনা করছিলেন, মেয়র জিতলে মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। তাঁদের মধ্যেই এক জনের উক্তি, ‘‘আগে তো সরকার হোক। তার পরে তো মন্ত্রী হওয়া।’’
সন্ধ্যায় আসানসোলের আপকার গার্ডেনে সিপিএমের অফিসে বেশ ভিড়। ভিড় ঠেলে এগোতে দেখা গেল, জোট প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্রও হাজির। এ বার ভোটের যাবতীয় কার্যকলাপ এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছে। বিজয় মিছিল করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে উষ্মা রয়েছে এই শিবিরেও। জনা কয়েক কর্মী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, ‘‘মিছিল না হোক, আমরা হোলি খেলব। বস্তিন বাজার থেকে আবিরটা আনতে হবে।’’ কিন্তু কোন রঙের আবীর আসবে। জোটের তরফে আসানসোল উত্তরে তো কংগ্রেসের প্রার্থী। সিপিএমর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লাল, সবুজ দু’টো সমান-সমান আসবে। এখন তো জোট।’’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিপিএম নেতা অবশ্য জানান, সমীক্ষার ফল বেরোনোর পরে কর্মীদের আত্মবিশ্বাস খানিক ধাক্কা খেয়েছে। তবে আশা ছাড়ছেন না তাঁরা।
শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিজেপি নেতা, ‘‘জোট না ঘোঁট, সেটা ফল বেরোলেই মালুম পড়বে।’’ রাত ৯টাতেও রাঙ্গানিয়া পাড়ার দলের কার্যালয়ে কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। গণনাকেন্দ্রে দলের তরফে যাঁরা যাবেন, তাঁদের পরামর্শ দেওয়ার ফাঁকে আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলে পাঁচটা আসনই পাচ্ছি। বিজয় মিছিলে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই হবে না। তবে কর্মীরা উৎসব করবেন। সেই প্রস্তুতিও সেরে রাখা হয়েছে।’’
কুলটির তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ভোটের পরে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। দিন কয়েক পরে ফিরেছিলেন। কিন্তু তার পরে আবার কলকাতায় গিয়েছেন। অনুগামীরা বলছেন, ‘‘লড়াই কঠিন। তাই দাদা ছটফট করছেন।’’ উজ্জ্বলবাবু যদিও বলেন, ‘‘টেনশন আবার কী?’’ এই কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অভিজিৎ আচার্য ফল বেরোনোর আগে বাড়িতে গাছের পরিচর্যা, পোষা সারমেয়র সঙ্গে সময় কাটিয়ে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করছেন। এত দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বসে নানা অঙ্ক কষেছেন। কিন্তু এখন বলছেন, ‘‘অনেক হয়েছে। এ বার এ সব থাক।’’ কুলটির বিজেপি প্রার্থী অজয় পোদ্দার আবার বেশ আত্মবিশ্বাসী। লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে যে তাঁর দল প্রায় ৪০ হাজার ভোটে এগিয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসক-প্রার্থী।
গণনার দু’দিন আগে থেকে টেনশন ধরা পড়ছে শিল্পাঞ্চলের সাধারণ মানুষজনের গলাতেও। আসানসোল আদালতের এক সরকারি আইনজীবী যেমন জানতে চান, ‘‘কী হবে, কিছু কি বোঝা যাচ্ছে?’’ আর এক আইনজীবী পকেট থেকে চিরকূট বের করে বলেন, ‘‘আমার হিসেবটা লিখে রেখেছি। দেখি মেলে কি না!’’ রোগী দেখার ফাঁকে শহরের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘সম্পূর্ণ ফল ক’টার মধ্যে জানা যাবে?’’ কবি নিবেদিতা আচার্য আবার বলেন, ‘‘মানুষ যেন কথা কইতে ভুলে গিয়েছে। সবাই কেমন চুপ।’’ তবে সকলের একটাই প্রার্থনা, ফল যা-ই হোক, শহর যেন শান্ত থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy