Advertisement
E-Paper

প্রচারের অনুমতিতে ‘আমরা-ওরা’

প্রচারে বাধা দেওয়ার হুমকি ছিলই শাসকের। এ বার ভোট প্রচারে অনুমতি পাওয়া নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠল! আর ভোট প্রচার সভায় বাধা পেয়েই এ বার কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপি। নির্বাচনের প্রচার এবং জনসভার মতো কর্মসূচিতে শাসক দল তৃণমূলকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন বিশেষ সুবিধা সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২২
প্রচারে আছি। মঙ্গলবার সুরুলে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র

প্রচারে আছি। মঙ্গলবার সুরুলে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র

প্রচারে বাধা দেওয়ার হুমকি ছিলই শাসকের। এ বার ভোট প্রচারে অনুমতি পাওয়া নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠল!

আর ভোট প্রচার সভায় বাধা পেয়েই এ বার কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপি। নির্বাচনের প্রচার এবং জনসভার মতো কর্মসূচিতে শাসক দল তৃণমূলকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন বিশেষ সুবিধা সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। তাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেই মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে বিরোধীরা। এবং অবিলম্বে ইলামবাজার থানার ওসি তপাই বিশ্বাসকে অপসারণের দাবি তুলেছে বিজেপি।

ভোট প্রচার কর্মসূচিতে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার পর পর কয়েকটি নজিরও মিলেছে। কেমন সে নজির?

ঘটনা এক। সপ্তাহ খানেক আগের কথা। ইলামবাজার বাজারে ছিল বাম-কংগ্রেস জোটের মহামিছিল এবং পথসভা। নিয়ম নীতি মেনে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিল জোট। আবার একই দিনে শাসকদল তৃণমূলেরও সেই একই জায়গায় রাজনৈতিক সমাবেশ ও আদিবাসীদের সংবর্ধনা সভা। তাঁদেরও দাবি, নিয়ম নীতি মেনেই পেয়েছি অনুমতি। একই জায়গায়, প্রায় একই সময়ে যুযুধান দুই শিবিরের এ হেন কর্মসূচিতে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বিভিন্ন মহলে। শেষে বাম-কংগ্রেস জোট স্থান বদলে নিজেদের কর্মসূচি কাটছাঁট করে সরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এলাকায় সেদিন কার্যত কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।

ঘটনা দুই। দিন চারেক আগে লাভপুর বিধানসভা এলাকায় সভা এবং প্রচারের কর্মসূচি ছিল বিজেপির। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি পায়নি তারা। ফলে কর্মসূচি বাতিল করে। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতির অভিযোগ, ওই সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তাঁর দাবি, ‘‘নির্ধারিত চার ঘণ্টার বেশি সময় দেওয়া যাবে না জানিয়ে, স্থান, কাল এবং মিছিলের রুট না জানানোর কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি পুলিশ প্রশাসন।’’

ঘটনা তিন। সোমবার সকালে বোলপুর শহরে নির্বাচনী প্রচার এবং মিছিলের জন্য, নিয়ম মেনে ৭২ ঘণ্টা আগে অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের প্রচার কর্মসূচির অজুহাত দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি পুলিশ প্রশাসন। তাঁদের কোনও কর্মসূচির কথা নেই জানিয়ে বিভিন্ন স্তরে চিঠি চাপাটি করে ‘আসল সত্য এবং তথ্য’ তুলে ধরায়, বিকেলে মিছিল করার অনুমতি দেয় পুলিশ। অথচ দিনে বা রাতে শহরে তৃণমূলের কোনও কর্মসূচি ছিল না!

ঘটনা চার। মঙ্গলবার বোলপুর বিধানসভার ইলামবাজার ব্লকের নানাশোল পঞ্চায়েতের কয়রা এলাকায় ছিল বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের প্রচার ও জনসভা। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের জেলা সহ-সভাপতি দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘নিয়ম মেনে ৭২ ঘণ্টা আগে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় জানতে পেরেছি আমরা অনুমতি পাইনি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ইলামবাজারের সাতটি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের নির্বাচন কর্মসূচি থাকার জন্য অনুমতি দেওয়া যাবে না।

বোলপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার সভার জন্য কেন অনুমতি পেলাম না জানতে চাওয়ায়, সোমবার রাতে ইলামবাজার থানার ওসি তপাই বিশ্বাস জানান, সারা দিন ইলামবাজার ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের কর্মসূচি রয়েছে। কোন সময়ে, কোথায় এবং কোন রুটে তৃণমূলের কর্মসূচি জানতে চাওয়ায় উত্তর মেলেনি। চার ঘণ্টার কথা বলা হয়নি বলে লাভপুরের দলীয় প্রার্থীর প্রচারেরও অনুমতি দেননি। তা নিয়ে বোলপুরের মহকুমাশাসক শম্পা হাজরার সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। আমরা কিন্তু অনুমতি পাইনি।’’

দিলীপবাবুর দাবি, বিরোধী দলের ভোটার, কর্মী ও সমর্থকেরা যাতে হতাশ হয়, তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের ‘ব্লক’ করে রেখে দিচ্ছে। যাতে বিরোধীদলের প্রচার, জনসভা কর্মসূচি প্রভাবিত হয় এবং তার ফায়দা নিয়ে শাসক দলকে বিশেষ সুবিধা সুযোগ পাইয়ে দিচ্ছে। পুলিশের এমন ভূমিকায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া কীভাবে নিরপেক্ষ হবে— সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

একই ক্ষোভ বোলপুর কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী তপন হোড়ের।

তিনি বলেন, “পুলিশ প্রশাসনের একাংশের এমন পক্ষপাতিত্বের জন্য আমাদের প্রচার, সভা এবং নির্বাচনী কর্মসূচি বদলাতে বাধ্য হয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের একাংশ ইচ্ছাকৃত ভাবেই যে এমনটা করছেন, তা অবশ্য আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব মানুষ দেখছেন। আমাদের আপত্তি এবং অভিযোগের বিষয় প্রমাণ সহকারে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছি।” এ দিন বোলপুর এলাকার একাধিক থানার আইসি এবং অভিযোগকারী একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রতিনিধি এবং প্রার্থীদের নিয়ে বিকেলে বৈঠকে বসেন বোলপুরের মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা। যদিও তিনি এ দিনই বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।’’

বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রচারে পুলিশি সহযোগিতার কথা উড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি বা আমার দলের কোনও প্রার্থী কোনও বিশেষ সুবিধা নিয়েছি বলে জানা নেই। এসবই বিরোধীদের অপপ্রচার।’’ কী বলছেন অভিযুক্ত ওসি?

তপাইবাবু বলেন, ‘‘কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলি অনুমতি নিয়ে রেখেছে, সেই মোতাবেক আমরা এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি দেখি। তবে সেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে কি না, সেটা দেখা আমাদের বিষয় নয়।’’

assembly election 2016 partiality police allegation oppositions Bolpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy