Advertisement
E-Paper

শাসক-পুলিশ রুখেই জবাব দিতে চায় জোট

দল বদলেছিলেন জেতার আশায়। কিন্ত পুরনো দলই বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে তাঁকে যে এত বেগ দেবে, সেই অঙ্ক হয়তো ঠিকঠাক কষা হয়নি হাঁসনের পাঁচ বারের বিধায়ক অসিত মালের।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৪০

দল বদলেছিলেন জেতার আশায়। কিন্ত পুরনো দলই বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে তাঁকে যে এত বেগ দেবে, সেই অঙ্ক হয়তো ঠিকঠাক কষা হয়নি হাঁসনের পাঁচ বারের বিধায়ক অসিত মালের। রবিবার, ভোটের দিন এলাকায় বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের এককাট্টা হয়ে রুখে দাঁড়ানো বুঝিয়ে দিল, হিসেবে গরমিল ছিল শাসক দলের।

ব্লক হিসেবে এলাকা বীরভূমের নলহাটি, বিধানসভা হাঁসন। সেখানকার উজিরপুরেই শুরু প্রতিরোধের। এ দিন দুপুরে উজিরপুরের বুথের বাইরে ছিলেন কংগ্রেসকর্মী আবুল হাসান। তাঁর অভিযোগ, নলহাটি থানার এক অফিসারের সঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিভাস অধিকারী দলবল নিয়ে বুথে ঢোকার চেষ্টা করেন।

আবুলের কথায়, ‘‘বিভাসকে পুলিশের সঙ্গে বুথে ঢুকতে দেখে আপত্তি জানাই। জানতে চাই, কোন অধিকারে তিনি বুথে ঢুকছেন।’’ কংগ্রেসের দাবি, প্রথমে তৃণমূলের ওই নেতা নিজেকে ‘অবজার্ভার’ বলে পরিচয় দেন। কিন্তু এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে সঙ্গে থাকা ওই পুলিশ অফিসার তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়ান।

রফিকুল ইসলাম নামে উপস্থিত আর এক কংগ্রেস কর্মীর অভিযোগ, ‘‘হঠাৎ-ই ওই অফিসার আবুলের জামা ধরে টানতে থাকেন। ওঁকে মাটিতে ফেলে দেন। এর মধ্যেই বিভাসের দলবল আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাতে তিন জন আহত হই। পরে দলের অন্য কর্মীরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরেই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অভিযুক্ত অফিসারকে। তবে তার আগেই যে গাড়িতে করে ওই তৃণমূল নেতা এসেছিলেন, তাতে ভাঙচুর করে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, বুথের বাইরে রয়েছে বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী। রয়েছেন নলহাটি থানার ওসি অশোক মহাপাত্র। তাঁকে দেখেই ফের তেতে ওঠে এলাকা। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন বাসিন্দারা। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, ওই সময় ওই অফিসারের হয়ে ক্ষমা চান ওসি। তবে পরে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে চাননি অশোকবাবু। উত্তেজনা থাকায় নামানো হয় বিরাট বাহিনী।

বিরোধীদের দাবি, ভোটারদের মনোভাব বুঝতে পেরেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই কেন্দ্রের জোট-কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। শাসক দল তা মানতে নারাজ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ওই পুলিশ অফিসারকে কংগ্রেস কর্মীরা বিনা প্ররোচনায় মারধর করেন। তাঁকে বাঁচাতেই দলের কর্মীরা সেখানে যান। সেখানে জোট-সমর্থকদের হাতে মার খেয়ে এক তৃণমূল কর্মীও আহত হয়েছেন। আর তৃণমূল নেতা বিভাসবাবুর দাবি, ‘‘আমি একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাই বুথে ঢুকতে চেয়েছিলাম।’’ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।

পুলিশের দাবি, দু’পক্ষের বচসা থামাতে গিয়ে নলহাটি থানার ওই অফিসার নিগৃহীত হন। তাঁকে উদ্ধার করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

কিন্তু ‘ঘরের লোক’ অসিত মালের বিরুদ্ধে কেন এত তাতল হাঁসন?

বাম আমলেও বীরভূমের এই কেন্দ্র বরাবর দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। জেলায় এই আসনটিই ছিল বিরোধী-গড়। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস নেমে যায় তৃতীয়
স্থানে। বিপদ আঁচ করেই বিধানসভা ভোটের আগে অসিতবাবু যোগ দেন তৃণমূলে। যদিও বাম-কংগ্রেসের জোট হওয়ায় তিনি ভোট-অঙ্কে
ফের পিছিয়ে (তৃণমূল ৩৩.৯১ শতাংশ, জোট ৫১.৮৭ শতাংশ) পড়েন। এলাকার কট্টর কংগ্রেস কর্মীরা তাই বলছেন, ‘‘ঘরের
লোকের বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দেওয়ার সুযোগ এসেছে এ
বার।’’ বাম কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, ‘‘সঙ্গে আছি।’’

এমন ‘তত্ত্বে’ কর্ণপাত করতে নারাজ অসিতবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি জয়ের ব্যবধান নিয়ে ভাবছি।’’ জোট-প্রার্থী কংগ্রেসের মিল্টন রশিদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনুব্রতদের গুড়-বাতাসার রাজনীতিকে হাঁসনের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তা বুঝতে পেরেই ওরা পুলিশকে নিয়ে ভোট লুঠের চেষ্টা করেছিল। মানুষ জোট বেঁধে তা ঠেকিয়েছেন।’’

assembly election 2016 alliance CPM TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy