প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতী ঘোষ ও অর্ণব ঘোষ
সরলেন। আবার সরলেনও না!
নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠায় মালদহের এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের এসপি অর্ণব ঘোষকে সদ্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসন দু’জনকেই এমন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসিয়েছে, যেখান থেকে তাঁরা পুরনো জেলার পুলিশি কাজকর্মে দিব্যি মাথা গলাতে পারেন। অতীতে যেমনটি করা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের তদানীন্তন এসপি ভারতী ঘোষের ক্ষেত্রে। নবান্নের ইঙ্গিত, প্রসূন-অর্ণবের বেলাতেও সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রসূনবাবুকে শিলিগুড়ি এবং অর্ণববাবুকে মালদহে সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপার করে আনা হয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য: মালদহে সিআইডি-র ওই পদটি তৈরি হয়েছে মাসখানেক আগে, মূলত জাল নোটের রমরমা ঠেকাতে। ভোটের
সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। শিলিগুড়ির সিআইডি স্পেশ্যাল সুপারের পদটিও ভোটের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে নবান্নের দাবি।
কিন্তু এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভারতী-কৌশলের’ ছায়া দেখছে প্রশাসনের একাংশ। ভারতী ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে টানা তিন বছর এসপি থাকার পরে নবান্ন তাঁকে
বদলি করেছিল। তাঁর জন্য তৈরি হয়েছিল নতুন পদ— ওএসডি
(লেফ্ট উইং এক্সট্রিমিজম-অপারেশন্স)। যার অফিস বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের জঙ্গলমহলে ভারতী তথা
তৃণমূলের কর্তৃত্ব বজায় রাখার তাগিদেই নতুন চেয়ারটি তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শেষমেশ তিন দিন আগে ভারতী ঘোষকে সেই পদ থেকে ঠেলে সোজা কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাঁকে বদলি করা হয়েছে সিআইডি’তে, অফিস ভবানী ভবন। এবং এ বার প্রসূন-অর্ণবের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠেছে। কী রকম?
বিরোধীদের আশঙ্কা, আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচনের সঙ্গে সিআইডি’র পদ দু’টির সম্পর্ক নেই ঠিকই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের দু’জেলায় (শিলিগুড়ি, মালদহ) ঘাঁটি গেড়ে প্রসূন ও অর্ণব তাঁদের আগের জেলার (যথাক্রমে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর) ভোটে শাসকদলের তরফে বিলক্ষণ ছড়ি ঘোরাতে পারবেন।
বস্তুত সেই মতলবেই ওঁদের ওখানে বদলি করা হয়েছে বলে বিরোধী মহলের অভিযোগ। শুনে নির্বাচন কমিশন কী বলছে?
কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য: সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা যাতে কোনও মতেই ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা ভোট প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে তাঁদের সরানো হচ্ছে। ‘‘তার পরেও তেমন সম্ভাবনা তৈরি হলে ভারতীর মতো প্রসূন-অর্ণবকেও ফের সরিয়ে দিতে কমিশন দ্বিধা করবে না।’’— প্রতিক্রিয়া আধিকারিকটির।
কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, বিরোধীরা তার অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে আমলা-পুলিশকর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কমিশনের নির্দেশে যাঁদের সরানো হচ্ছে, ভোট মিটলে তাঁদের ‘যথাযোগ্য মর্যাদায়’ ফিরিয়ে আনবেন। সেই মতো প্রসূন-অর্ণব তো বটেই, বর্ধমান বা নদিয়ার বদলি হওয়া এসপি’রাও বাংলো থেকে জিনিসপত্র সরাননি। প্রশাসনের খবর: নবান্নের নির্দেশেই তাঁরা এসপি বাংলোর একটা অংশ দখলে রেখেছেন। কমিশনের ফরমানে নতুন দায়িত্ব নিয়ে আসা অফিসারেরা থাকছেন অন্য অংশে।
পাশাপাশি কমিশন যে ২৪ জন ওসি বা আইসি-কে সরাতে বলেছে, তাঁরাও কেউ এলাকা ছেড়ে যাননি। গত চার দিনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন থানায় পরিবর্ত অফিসারও পাঠানো হয়নি। কমিশনের আদেশ, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে থানাগুলোয় নতুন অফিসার দিতে হবে।
সে কাজটা এখনও হয়ে ওঠেনি বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy