Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি কর্মীর মৃত্যু, থানা চত্বরে হুলুস্থূল জাঙ্গিপাড়ায়

ভোটের মুখে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে তেতে উঠল হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানা চত্বর। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর সামনে সদলবলে আস্ফালন করতে দেখা গেল শাসক দলের নেতাকে! ওই প্রার্থীকে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকিও শুনতে হয় বলে অভিযোগ।

মৃতদেহ ঘিরে শোকার্ত পরিজন। ইনসেটে রঞ্জিৎ পাত্র।

মৃতদেহ ঘিরে শোকার্ত পরিজন। ইনসেটে রঞ্জিৎ পাত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

ভোটের মুখে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে তেতে উঠল হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানা চত্বর। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর সামনে সদলবলে আস্ফালন করতে দেখা গেল শাসক দলের নেতাকে! ওই প্রার্থীকে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকিও শুনতে হয় বলে অভিযোগ।

রবিবার রাতে বাড়ির কিছুটা দূরে, একটি কালভার্ট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জাঙ্গিপাড়ার অযোধ্যা গ্রামের পাত্রপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিৎ পাত্র (২৭) নামে ওই বিজেপি কর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশে তাঁর মোটরবাইকটিও পড়ে ছিল। রঞ্জিৎকে জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। তাঁর গলায়, মাথায় এবং বুকে ক্ষতচিহ্ন দেখে রঞ্জিতের পরিবার এবং বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলেন। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।

জেলা পুলিশের দাবি, রঞ্জিৎ মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। ক্ষতচিহ্নগুলি দুর্ঘটনার আঘাতজনিত। পুলিশ সুপার প্রবীন ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘রঞ্জিতের নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। পুলিশ তাঁকে খুঁজছিল। রবিবার রাতেও পুলিশ তাঁর খোঁজে যায়। রঞ্জিৎ মোটরবাইকে পালানোর সময়ে কালভার্টে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। তাতেই মৃত্যু হয়।’’

পুলিশের দাবি মানতে নারাজ রঞ্জিতের পরিবার এবং বিজেপি। সোমবার সকালে তাঁরা বিজেপি প্রার্থী প্রসেনজিৎ বাগের নেতৃত্বে থানায় অভিযোগ জানাতে যান। সেখানে আগে থেকেই অনুগামীদের নিয়ে হাজির ছিলেন জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, তৃণমূল নেতা দেবেন সাহা। এক পাশে ভ্যানের উপরে শোয়ানো ছিল রঞ্জিতের দেহটি। প্রসেনজিৎবাবু গাড়ি থেকে নেমে মৃতদেহের কাছে যাওয়ার জন্য এগোতেই দেবেনবাবু এবং তাঁর সঙ্গীরা পথ আগলে দাঁড়ান।


অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপি প্রার্থী। ছবি: দীপঙ্কর দে।

একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে, এই অভিযোগ তুলে দেবেনবাবুরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রসেনজিৎবাবুর উদ্দেশে দেবেনবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছিস? চাবকে সিধে করে দেব।’’ বিজেপির অভিযোগ, বিক্ষোভের সময়ে প্রসেনজিৎবাবুকে পিটিয়ে জাঙ্গিপাড়াছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয় এবং ধাক্কাধাক্কি করা হয়। দু’পক্ষের গোলমাল শুনে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। প্রসেনজিৎবাবুকে উদ্ধার করে থানার ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবেনবাবুকে থানা চত্বর থেকে দলবল নিয়ে পুলিশ সরে যেতে বললেও তিনি প্রথমে বেরোতে অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ গ্রেফতারির হুমকি দেওয়ায় তিনি সরে যান। থানা চত্বরে গোলমাল বাধানো এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও দেবেনবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি নেতাকর্মীরা। পুলিশ জানায়, লিখিত অভিয়োগ জানানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত রঞ্জিৎকে খুনের অভিযোগও দায়ের হয়নি থানায়। পুলিশ যে দুর্ঘটনার কথা বলছে, তা মানতে চাননি রঞ্জিতের কাকা পাঁচু বাগ। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও প্রতারণার ব্যাপার ছিল না। একটি পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে থানা-পুলিশ হয়েছিল। তা মিটেও যায়। এখন তৃণমূলের চাপে পড়ে পুলিশ যা খুশি তা-ই বলছে। রঞ্জিৎকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে তৃণমূলের ছেলেরাই খুন করেছে।’’ তিনি আরও জানান, সকালে গোলমালের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি। পরে থানায় অভিযোগ জানাবেন।

বিজেপি প্রার্থী প্রসেনজিৎবাবু বলেন, ‘‘বুঝুন গণতন্ত্রের কী চেহারা। থানায় ঢুকে অন্য দলের প্রার্থীকে ওরা আক্রমণ করছে আর মুখে গণতন্ত্রের কথা বলছে! আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে অভিযোগ করব।’’ পক্ষান্তরে, দেবেনবাবুর দাবি, ‘‘দুর্ঘটনায় ছেলেটি মারা গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে। তবু বিজেপি আমাদের ঘাড়ে খুনের দায় চাপাতে চাইছে। বিজেপি প্রার্থীই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। আমি করিনি। শুধু তর্ক হয়েছে।’’ থানায় বিক্ষোভের সময়ে রঞ্জিৎকে একবার দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছিলেন দেবেনবাবু। পরে অবশ্য তাঁর মুখে সে কথা শোনা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Assembly Election 2016 Jangipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE