Advertisement
E-Paper

হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সব উত্তর বুঝে নেব

গোড়ায় দাবি করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন পুলিশ অফিসারদের বদলি করলে কিছু যায় আসে না, কারণ সব অফিসার তাঁরই। ষষ্ঠ দফার ভোটের পর কিন্তু সেই পুলিশ অফিসারদের একাংশকেই ভিতু, কাউকে কাউকে অতি সক্রিয় এবং চক্রান্তকারী বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৬ ০২:১৬
পাঁশকুড়ায় ভোট-প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

পাঁশকুড়ায় ভোট-প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

গোড়ায় দাবি করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন পুলিশ অফিসারদের বদলি করলে কিছু যায় আসে না, কারণ সব অফিসার তাঁরই। ষষ্ঠ দফার ভোটের পর কিন্তু সেই পুলিশ অফিসারদের একাংশকেই ভিতু, কাউকে কাউকে অতি সক্রিয় এবং চক্রান্তকারী বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের সুরক্ষায় যে ভাবে ভোট হয়েছে, তাকে আমজনতা স্বাগত জানালেও মুখ্যমন্ত্রীর মতে সেটা ‘চ্যাংড়ামো’। সে জন্য পুলিশ বাহিনীকে ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এগরার ভবানীচকের নির্বাচনী সভায় মমতা রবিবার বলেন, ‘‘কলকাতায় যে ভাবে সেন্ট্রাল পুলিশ নিয়ে এসে ভোট করানো হল, সেটা এক কথায় চ্যাংড়ামো। যা যা হয়েছে সব কিছুর উত্তর আমি বুঝে নেব।’’

ভোটের গোড়ার পর্বে মমতার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সময় রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো তিন দিন! তার পর আমাদেরই দেখতে হবে!’’ প্রথম দু’দফার ভোটে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিস্তর। কিন্তু ২১ এপ্রিল উত্তর কলকাতার ভোটের দিন থেকেই ছবিটা আমূল পাল্টে যায়। সে দিন নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনার নজির গড়েন সদ্য কলকাতা পুলিশের দায়িত্ব পাওয়া সৌমেন মিত্র। শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন ১২ এপ্রিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় সৌমেনবাবুকে বসায়। দায়িত্ব নিয়েই সৌমেনবাবু বাহিনীর উদ্দেশে বার্তা দেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। শনিবার কলকাতায় শেষ দফার ভোটেও পুলিশি কড়াকড়ির জেরে প্রায় কোনও বুথেই দাঁত ফোটাতে পারা যায়নি বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ আক্ষেপ করেছেন।

অন্য দিকে, গত বছর এপ্রিলে কলকাতা পুরভোট ও অক্টোবরে বিধাননগর পুর নির্বাচনে বহু ওয়ার্ডে ভোট লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য ছিল, পুলিশের মেরুদণ্ড শুধু নুইয়েই পড়েনি, স্রেফ হারিয়ে গিয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, ২৫ এপ্রিল বিধানসভা ভোটে বাহিনীর হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করাটাই তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ। সে কাজ করেও দেখিয়েছেন তিনি। এ সবের জেরেই শেষ দফা ভোটের প্রচারে পূর্ব মেদিনীপুরে এসে রাজ্যের কিছু পুলিশকর্তাকে হুমকি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, ‘‘সারা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে দিল। যারা করল, আগামী দিনে তাদের ভুগতে হবে। ১৫ দিনের জন্য দায়িত্ব পেয়ে কেউ যদি ভাবে আমার মাথায় (পুলিশের মাথায়) স্বর্ণমুকুট পরিয়ে দেবে, তা হলে সেটা ভুল।’’

এ দিন পাঁশকুড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘রাজীবের (কুমার) মতো এত দক্ষ পুলিশ অফিসারকে বদলি করে দিল! (পি বি) সেলিমের মতো এমন ডিএমকে বদলি করে দিল। মানস ভুঁইয়া, আনিসুর রহমান, কান্তি গাঙ্গুলিকে জেতাতে ওসিদের সরিয়ে দিল। আর লকেট তো গলার হার। ওকে জেতাতেও একই কাজ।’’ চণ্ডীপুরের সভায় তিনি এও দাবি করেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস থানায় গিয়ে যা বলছে, পুলিশ তাই শুনছে। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি থানা কন্ট্রোল করছে।’’

পুলিশের একটি অংশ মনে করছেন, মমতা নাম না করে এ দিন মূলত আক্রমণ করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমকেই। তবে সৌমেন ও জাভেদ, দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করবেন না।

কিন্তু পুলিশের কঠোর ভূমিকায় কেন এতটা ক্ষিপ্ত হচ্ছেন মমতা? বিরোধীদের মতে, পুলিশ পুলিশের কাজ করায় এ বারের ভোটে ভূতের নৃত্য দেখা যায়নি। শাসকের ভোট-মেশিনারি কাজ করেনি। সেটাই কাঁপুনি ধরিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। মমতা পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন বলেই তাঁর রাগ-হতাশা এ ভাবে বেরিয়ে পড়ছে। কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের ভূমিকা দেখে মমতা ভয় পেয়েছেন। তাই শেষ দফা ভোটের আগে পুলিশকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ এই প্রসঙ্গে এ দিন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, ‘‘মাসখানেক ধরেই জল্পনা হচ্ছে মমতা আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। এ বার তিনি নিজেই বুঝিয়ে দিলেন ক্ষমতা হারাচ্ছেন।’’

মমতার অবশ্য অভিযোগ, রাজ্যে ‘নির্বাচনের নামে নির্যাতন’ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাদের সাহায্য করতে কাজে লাগানো হল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। দিল্লির কিছু দালাল পুলিশ এখানকার কিছু ভিতু পুলিশকে নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। অনেক নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু এমনটা দেখিনি।’’

শনিবার হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ কলকাতায় ভোটের আগে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ক্লাবগুলিতে গিয়ে পুলিশকে তল্লাশি চালাতে দেখা গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, ‘‘এরা যা করছে তাতে আমি নিজে তিন দিন তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। ভোটের আগের দিন আমার পাড়ার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবে তালা লাগিয়ে দিল, পার্টি অফিসগুলো বন্ধ করে দিল। সারা রাত মাইকে ঘোষণা করল ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, বাড়ির বাইরে দল বেঁধে বেরোবেন না। দেখে মনে হল যেন দাঙ্গা হয়েছে, কার্ফু জারি হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর প্রচ্ছন্ন হুমকি, ‘‘যারা করছে, তাদের রেকর্ড আমার কাছে আছে। আমি যদি বেঁচে থাকি, প্রত্যেকটার উত্তর দিয়ে দেব।’’

ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী তিন দিনের অতিথি। এ দিনও সে কথার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে চমকাবেন না। দু’দিন বাদে আমরাই থাকব, ওরা থাকবে না।’’

assembly election 2016 mamata bandopadhyay alert police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy