Advertisement
E-Paper

‘মৃত সঞ্জীবনী’তে চাঙ্গা সিপিএম

‘মৃত সঞ্জীবনী সুধা’।সাঁকরাইলে প্রতিপক্ষ সিপিএমকে এমন দাওয়াই দিচ্ছে তৃণমূলেরই একাংশ। হাওড়ার একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এলেও সাঁকরাইলের দিকে তাকালে তা বোঝে কার সাধ্য। সাঁকরাইলের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কাজ করছেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মাথারা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দলীয় নেতৃত্ব ঢাক পেটালেও কান খাড়া থাকলেই ভেসে আসছে অন্য কথা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৮
প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দার। ডানদিকে, জোটের দেওয়াল প্রচার। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দার। ডানদিকে, জোটের দেওয়াল প্রচার। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

‘মৃত সঞ্জীবনী সুধা’।

সাঁকরাইলে প্রতিপক্ষ সিপিএমকে এমন দাওয়াই দিচ্ছে তৃণমূলেরই একাংশ।

হাওড়ার একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এলেও সাঁকরাইলের দিকে তাকালে তা বোঝে কার সাধ্য। সাঁকরাইলের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কাজ করছেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মাথারা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দলীয় নেতৃত্ব ঢাক পেটালেও কান খাড়া থাকলেই ভেসে আসছে অন্য কথা। অধিকাংশ বুথেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কুশীলবদের অনুগামীরা ভোটের ময়দানে গরহাজির। বদলে সিপিএম কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁরা নাকি পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘বীর বিক্রমে ভোটের কাজে নেমে পড়ুন’। বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক মাথা জানালেন, ‘‘বিধায়কের বিরোধী হলেও দলবিরোধী তো নই। তাই খোলাখুলি প্রার্থীর বিরোধিতা করা কঠিন। তবে বহু সিপিএম কর্মী বসে গিয়েছিলেন। আমরা চাই, তাঁরা তাঁদের দলের প্রার্থীর জন্য ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তাই মদত দিচ্ছি।’’

এক সময়ের পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসাবে চিহ্নিত সাঁকরাইল গত দশ বছরে শিল্পের ক্ষেত্রে অনেকটাই উজ্জ্বল। রাবার পার্ক, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কয়েকটি শিল্প তালুক, বড় কারখানায় এলাকার অর্থনীতির ছবিটা বদলেছে। সেইসঙ্গে এই সব কারখানায় শ্রমিক সংগঠনগুলির দখল নেওয়া, জমির দালালি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেড়ে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। যা প্রকট হয়ে ওঠে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তৃণমূলের এক জেলা পরিষদ প্রার্থী অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। অভিযোগ, তার নেপথ্যে ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই। তার পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও অক্সিজেন পেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। শীতলবাবুর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধদের প্রধান অভিযোগ, দলের সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে মাথায় নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন। কারও সঙ্গে আলোচনার ধার ধারেন না। বিধায়ক প্রতিনিধির কথায় সব সিদ্ধান্ত নেন। তাঁকে প্রার্থী না করার আর্জি জানিয়ে নেত্রীর কাছে আবেদনও যায়। নেত্রী তা গুরুত্ব দেননি। ফের শীতলবাবুই প্রার্থী হয়েছেন। হতাশ বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা শেষ অস্ত্র হিসাবে তপন বাছারকে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। তপনবাবুর অবশ্য যুক্তি, ‘‘কংগ্রেস-সিপিএম জোট হয়েছে। শীতলবাবুকে ফের প্রার্থী করায় অনেক ক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকের ভোট জোটের বাক্সে গিয়ে পড়তে পারে। সেটা আটকাতেই আমি প্রার্থী হয়েছি। এতে দলই বাঁচবে।’’

তৃণমূলকে ‘বাঁচাতে’ তপনবাবু সত্যিই কতটা আন্তরিক তা ন‌িয়ে সংশয় থাকলেও জোট প্রার্থী সিপিএমের সমীর মালিক এতে বাড়িত সুবিধা পাবেন বলেই জেলার রাজনৈতিক মহলের মত। একদিকে নির্দল প্রার্থী হয়ে নিজের নাক কেটে তপনবাবু যেমন শীতলের যাত্রাভঙ্গের আয়োজন করেছেন, তেমনই প্রতিপক্ষের জন্য দাওয়াই ‘মৃত সঞ্জীবনী সুধা’-র ব্যবস্থাও করেছেন। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে সিপিএম কর্মীদের একটা বড় অংশ বসে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের একটা বড় অংশ বিধায়কের সঙ্গে ঘুরলেও নিজের নিজের এ‌লাকায় একেবারেই চুপ। বুথ স্লিপ বিলি থেকে শুরু করে নির্বাচনের অন্যান্য কাজে ‘ধীরে চলো নীতি’ সম্বল করেছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে সিপিএমের ঘরবসা কর্মীদের টেনে নামিয়ে দিচ্ছেন ভোটের ময়দানে। ফলে পদযাত্রা, মিছিলে ভিড় বাড়ছে সিপিএমের। তৃণমূলের একাংশের এমন দাওয়াইয়ে চাঙ্গা সিপিএম প্রার্থী সমীর মালিক। এতটাই যে, বৃহস্পতিবার ডোমজুড়ে জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র এবং মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী সমীরবাবু জানিয়ে দিলেন তিনি জিতছেনই।

তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশের অবশ্য দাবি, টানা চারবারের বিধায়ক হওয়ার সুবাদে শীতলবাবুর জনসংযোগ ভাল। তাঁর আমলে সাঁকরাইলে উন্নয়নও হয়েছে। বিধায়ক কোটার টাকা খরচের পরিমাণও প্রায় ৭২ শতাংশ। সে দিক থেকে শীতলবাবুই এগিয়ে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরা স্রোত শীতলবাবুর কতটা ক্ষতি করতে পারবে বোঝা মুশকিল। আর শীতলবাবুর সাফ জবাব, ‘‘আমরা সবাই একসঙ্গেই কাজ করছি। আমার উন্নয়নের কাজের নিরিখেই জিতব।’’

সমীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘সারদা, নারদ কেলেঙ্কারি, রেশন কার্ড বিলি নিয়ে দলবাজি প্রভৃতি ঘটনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। তার উপরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ শাসক দলের লড়াই কংগ্রেস-সিপিএম জোটের বিরুদ্ধে। সেই হিসাবে জিতব আমরাই।’’

এখন দেখার, ‘মৃত সঞ্জীবনী সুধা’য় চাঙ্গা সিপিএম শাসক দলের উন্নয়নের ঢাককে ফাঁসাতে পারে কি না।

assembly election 2016 cpm congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy