Advertisement
E-Paper

মরিয়া শাসক, রুখে দেওয়ার মেজাজে জোট

ভোটের অফিস যা বলে, হাওয়া অফিসও তাই বলছে! সকাল সকাল ভোট দিয়ে ঘরে ঢুকে যাওয়াই ভাল! চাঁদিফাটা রোদ আর আর্দ্রতার জেরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বাইরে পা রাখা দায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১১

ভোটের অফিস যা বলে, হাওয়া অফিসও তাই বলছে! সকাল সকাল ভোট দিয়ে ঘরে ঢুকে যাওয়াই ভাল!

চাঁদিফাটা রোদ আর আর্দ্রতার জেরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বাইরে পা রাখা দায়। তাই অন্যান্য বার ভূতের ভোট রুখতে সকাল সকাল বুথে হাজির হওয়ার যে নিদান নির্বাচন কমিশন দেয়, সেই একই দাওয়াই এ বার দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। শরীর সুস্থ রাখতে।

আজ ভোট দুপুরে কলকাতায় পারদের মাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছোঁবে বলে আভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। আর রাজনীতির আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাঁদের তল্লাটে পারদ চড়বে আরও বেশ কয়েক ডিগ্রি। কারণ, ভোট যত এগোচ্ছে, আশঙ্কা চেপে বসছে শাসক শিবিরে। আর চাঙ্গা হচ্ছে বিরোধী জোট। মরিয়া হয়ে এক পক্ষের আক্রমণ এবং অন্য পক্ষের প্রতিরোধ বাড়ছে।

তিন পর্ব পেরিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার চার জেলার ৬২ কেন্দ্রে ভোট। তার মধ্যে কলকাতার আসন সাতটি। মূলত শহরের উত্তর দিকেই ভোট এ বার। এ ছাড়া ভোট হচ্ছে মুর্শিদাবাদের ২২টি, নদিয়ার ১৭টি, গ্রামীণ বর্ধমানের ১৬টি আসনে। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল
এমনিতেই দুর্বল। কংগ্রেসের দুর্গে দাপিয়ে ভোট করে যত বেশি সম্ভব আসন ঘরে তুলতে চাইবে জোট শিবির। আবার জোটের প্রভাবে নদিয়ার বেশ কিছু আসনেও শাসক দলের অবস্থা নড়বড়ে।

দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে বীরভূম, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার কিছু অংশকে শাসক দলের ‘কোর’ এলাকা ধরা হয়। এই এলাকা থেকে একশোর কাছাকাছি আসন ঘরে তোলাই শাসক শিবিরের বরাবরের লক্ষ্য। সেই হিসেবেই আগের পর্বের ভোটে গোটা রাজ্যের নজর ছিল বীরভূমের দিকে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বাহিনী সে দিন পুরোপুরি কাজ হাসিল করতে পারেনি বলেই শাসক শিবিরের অন্দরের জল্পনা। স্বভাবতই বীরভূমে ধাক্কা খাওয়ার পরে তৃণমূলের এ বার নজর থাকবে গ্রামীণ বর্ধমানের দিকে। সেখানকার বেশ কিছু আসন উতরে দেওয়ার দায়িত্ব শাসক দল দিয়ে রেখেছে অনুব্রতদের কাঁধে।

আরও পড়ুন:
মরিয়া শাসক, রক্তাক্ত তৃতীয় দফা, ডোমকলে খুন সিপিএম এজেন্ট
কেতুগ্রামে সিপিএম কর্মীর কান কাটল তৃণমূল, ভোটারদের লাইনে বোমা

কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্ধমানে সিপিএম-ও এ বার ঘর গুছিয়েছে। তৃণমূলের হামলার জবাবে বামেদের পাল্টা মারে ইতিমধ্যেই প্রতিরোধের স্পষ্ট ইঙ্গিত ধরা পড়েছে। ভোটের দিন ভূতেদের তাণ্ডব শুরু হলে প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, এমন নির্দেশই দলের কর্মীদের দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।

খাস কলকাতা শহরে পরিসংখ্যানের নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে ঠিকই। কিন্তু সেখানেও শাসক দলকে প্রবল উদ্বেগে রাখছে দু’টি বিষয়। প্রথমত, নারদ-সহ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া রাজধানী শহরে স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে উ়ড়ালপুল বিপর্যয়। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে ঠিকাদারি পাইয়ে দেওয়া, নিচু মানের মালমশলা ব্যবহারে উড়ালপুল ভেঙে পড়া— এই অভিযোগ নিয়ে কলকাতাই সব চেয়ে বেশি আলোড়িত। আর দ্বিতীয়ত, বিগত লোকসভা এবং তার চেয়েও বেশি করে গত পুরভোটে কলকাতায় বিস্তর অনিয়ম ও গা-জোয়ারির অভিযোগ ছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। নাগরিক সমাজে যা অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। এ বার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়ায় আম নাগরিক নিজের ভোট নিজে দিতে চাইলে পরিণতি কী হতে পারে, ভেবে কাঁপুনিই রয়েছে তৃণমূল শিবিরে!

উদ্বেগ পাটিগণিতের হিসাবেও আছে। সেই অঙ্কে আবার কলকাতা, বর্ধমান বা নদিয়া সবই এক সূত্রে গাঁথা। দু’বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ায় নজরকাড়ার মতো ভোট টেনেছিল বিজেপি। বর্ধমান জেলায় যেমন বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ৯%, তেমনই উত্তর কলকাতার কেন্দ্রগুলিতে তারা কোথাও ২৫-৩০ হাজার, কোথাও ৩৫ হাজার করে ভোট পেয়েছিল। তাতে তৃণমূলের জয় আটকায়নি। ক্ষতি হয়েছিল বামেদের। এ বার মোদী হাওয়া নেই, বিজেপির লড়াই করার মতো সংগঠনও নেই। বরং, জোটের হাওয়া আছে। বিজেপির বাক্সে চলে যাওয়া সেই ভোট জোটের দিকে ফিরতে শুরু করলে দিদির দলের যাত্রা হয়ে দাঁড়াবে আরও কঠিন!

পরিসংখ্যান কাটাছেঁড়া করে দেখলে উঠে আসছে, পাঁচ বছর আগে বর্ধমান গ্রামীণ এলাকার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৯টিতে জিতেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ৭টি। লোকসভায় ২০১৪ সালের ভোটের নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে যায় ১৫টি আসনে। বামেদের ‘লিড’ ছিল শুধু কাটোয়ায়। কিন্তু বামেদের ভোট প্রায় ১১% কমলেও তৃণমূলের বেড়েছিল মোটে দেড় শতাংশ! আর যে বিজেপি ২০১১-য় এই ১৬টি কেন্দ্রে গড়ে প্রায় ৪% ভোট পেয়েছিল, লোকসভা ভোটে তা দাঁড়ায় ১৩%-এরও বেশি। লোকসভায় বিজেপির খাতায় যোগ হওয়া ওই ৯% বাড়তি ভোট বামেদের ঘরে ফিরলে তৃণমূলের হিসেব উল্টে যাবে! লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের সঙ্গে বিজেপি-ফেরত ৯% ভোট যোগ করে দিলে তৃণমূলের থেকে জোট এগিয়ে যাচ্ছে ৯টি আসনে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে আরও তিনটিতে। অর্থাৎ উত্তাপ বাড়ানোর সব রসদই মজুত!

আবার নদিয়ায় কিছু দিন ধরেই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেস বা সিপিএমে ফিরছেন কর্মীরা। জোটের নেতাদের মতে, দলবদলের সংখ্যাটা খুব বড় না হলেও তা আসলে সাধারণ মানুষের মনবদলের ইঙ্গিতবাহী। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে হামলার ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটছে প্রতিরোধও। তাই জোটের নেতাদের অনেকের আশঙ্কা, অনুব্রতর বীরভূমে যা হয়নি, আজ ভোটের নদিয়ার কোনও কোনও জায়গায় ‘ভূতের তাণ্ডব’ দেখা
যেতেই পারে।

উদ্বেগ স্বীকার করতে না-চেয়েই তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা বলছেন, ‘‘মানুষ কী করবেন, ঠিক করে রেখেছেন।’’ সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বোমা, গুলি, গুড়-বাতাসায় এ বার কাজ হবে না! মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে তৈরি। তৃণমূলের পক্ষে গোলমাল করা এখন সহজ নয়!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতারও হুঁশিয়ারি, ‘‘সে দিন আর নেই! পুরভোটের মতো গায়ের জোরে ভোট আর ওরা করতে পারবে না!’’

assembly eelction 2016 TMC Congress CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy